‘‘হে ভগবান! বঙ্গজননী জন্মভূমির সবাকে ভালো রাখিও’’
“জন্মভূমি ছাড়ি যাচ্ছি। ওখানে জন্মভূমির মতো মাতৃছায়া পাবো কী না? হে ভগবান! তোমার কাছে প্রার্থনা করি, তুমি বঙ্গজননী জন্মভূমির সবাকে ভালো রাখিও।” পাটগ্রাম উপজেলার বিলুপ্ত ১১৯ নম্বর বাঁশকাটা ছিটমহলের বর্মণপাড়ার সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশিদের ঊদ্দেশ্যে এসব কথা বলে ষাটোর্ধ্ব উকিল চন্দ্র বর্মণ কান্নায় ভেঙে পড়ে বিদায় নিয়ে পাড়ি জমান নতুন দেশ আর অজানা ঠিকানার দিকে।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন দিয়ে দ্বিতীয় দফায় ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণকারী ১৩১ জন বিলুপ্ত ছিটমহলের অধিবাসী সোমবার(২৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ থেকে চলে গেলেন। জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল ১১২, ১১৫, ১১৯ নম্বর বাঁশকাটা ও ১৫ নম্বর খড়খড়িয়াবাড়ী ছিটমহলের ৩০ টি পরিবারের ৬৪ জন পুরুষ ও ৬৭ জন মহিলা ট্রাভেলপাসধারী ভারতে গেলেন। যাওয়ার সময় সেই হৃদয় বিদারক কান্নার দৃশ্য গ্রাম শহরের কেউ ধরে রাখতে পারছিলেন না।
উকিল চন্দ্র বর্মণ জানান, তাঁর চার ছেলে ও ৩ মেয়ে। এক ছেলেকে বাংলাদেশেই বিয়ে দিয়েছেন। আর ৩ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন ভারতের কোচবিহার জেলার ধুবগুড়ি ও নয়ারহাট এলাকায়। তিনি ৪ ছেলে, স্ত্রী ও তার ছেলের স্ত্রীকে নিয়ে যান। মেয়েদের আগেই ভারতে চোরাই পথে বিয়ে দিয়ে দেন। শিক্ষার্থী সুমন চন্দ্র বর্মণ, ছাত্রী সুচরিতা রাণী বর্মণ, জোসনা রানী বর্মণদের জন্মভূমি ছেড়ে যাওয়ার সময় কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।
পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাবুল, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর কুতুবুল আলম ও সহকারি কমিশনার(ভূমি) টিএমএ মমিন ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণকারীদের বিদায় সংবর্ধনা জানিয়ে মিষ্টি মুখ ও রজনীগন্ধার স্টিক হাতে তুলে দেন। দুপুর ১ টার দিকে বুড়িমারী স্থলবন্দর হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন বিলুপ্ত ছিটমহলের নতুন এ ভারতীয় নাগরিকরা।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ‘লালমনিরহাটের সঙ্গে মিশে যাওয়া সদ্য বিলুপ্ত ৫৯টি ছিটমহলের মধ্যে পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা উপজেলার ৪০ পরিবার ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। ওই পরিবারগুলো পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থলবন্দর অভিবাসনের (চেকপোস্ট) হয়ে বৃহস্পতিবার এবং সোমবার দু’দফায় বাস ও ট্রাকযোগে ভারতের কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ এলাকার আবাসনে চলে গেলেন। লালমনিরহাট জেলার বিলুপ্ত ছিটমহল থেকে আর ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণকারী নেই।’
অপরদিকে, ভারতের কোচবিহার অতিরিক্ত জেলা শাসক আয়শা রাণী ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই- কমিশনের প্রথম সচিব রামাকান্ত গুপ্তা উপস্থিত থেকে ভারতীয় নাগরিকত ¡গ্রহণকারীদের মিষ্টিমুখ করিয়ে হাতে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এসময় পাশেই স্থাপিত মঞ্চে ভারতীয় শিল্পিরা মলিন চেহারার নয়া নাগরিকদের মনোমুগ্ধকর গান পরিবেশনের স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ শুরু
লালমনিরহাট থেকে বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের লাইনচ্যুত হওয়া ৩টি বগি উদ্ধারবিস্তারিত পড়ুন
পাটগ্রাম সীমান্তে ভারতীয় নাগরিক আটক
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অণুপ্রবেশের দায়ে ভারতীয় নাগরিকবিস্তারিত পড়ুন
ভিক্ষুক মুক্ত হচ্ছে লালমনিরহাট জেলা
মানুষের দ্বারে দ্বারে আর ভিক্ষাবৃত্তি নয়। সরকারই নিচ্ছে ভিক্ষুকের দায়।বিস্তারিত পড়ুন