হে ভূমিপুত্র আমাদের ক্ষমা করো….
ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার চরমতম লজ্জার মাঝেই আবারও কলঙ্কের গভীর দাগ কেটে যাওয়া ঘটনাটি গাইবান্ধায়। সাহেবগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীতে ‘পরিকল্পিত হামলা’ লজ্জা-গ্লানিতে হতবাক করে দিয়েছে দেশকে। গত ৭ নভেম্বর নিরস্ত্র আদিবাসী সাঁওতালদের উপর হামলা চালানোর ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটে। ‘স্থানীয় সংসদের মদদে এবং ইউপি চেয়ারম্যানের সরাসরি নির্দেশে’ সংঘটিত হামলায় আতঙ্কিত স্থানীয় সাঁওতাল আদিবাসীরা। পুলিশ এবং স্থানীয় সন্ত্রাসীরা লাশও গুম করে ফেলে। সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ইক্ষু খামার জমি উদ্ধার সংহতি কমিটি এমন ভীতিকর তথ্য দেন।
সাঁওতালদের প্রতি এমন অমানবিক বর্বরতায় প্রতিবাদ মুখর হয়েছে সামাজিক মাধ্যম। ক্রোধ-অক্ষমতার তীব্র উচ্চারণে হতাশা প্রকাশ করেছেন কবি সাহিত্যিকরা। নিজেদের ফেসবুকে গ্লানির কাব্যে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন মানবিক বোধের প্রতি, কটাক্ষ করেছেন সরকারের নিস্পৃহ আচরণের। কয়েকটি কবিতা সংকলন করে আমাদের নিবেদন-হে ভূমিপুত্র ক্ষমা করো আমাদের….
কবি বিকাশ মজুমদার লিখেছেন:
“আমি তো সাঁওতাল, শ্রমদাস অচ্ছুৎ নিচু জাত।
তীরের ফলায় গায়ের ঘাম, পরিচয় যাযাবর।
আমরা গরিব আছি, চা শ্রমিক, বাংলা গিলি, কয়লা খাই, পেত্নী লাগাই, ভূত বের হয়!
আর আপনারা তো বাবু আছেন, টাকা আছে, ঘি, মধু, গঙ্গাজল খান, হোর খ্যালেন, পরি জন্মায়।
আর আপনাদের জীবনের তো লাইফ আছে, আপনারাই তো ওরে বাবামা,
আমরা তো শ্রেফ শুয়োরের বাচ্চা।”
শ্যামল হেমব্রাম শিরোনামে কবি ডাল্টন সৌভাত হীরা লিখেছেন:
“কাঁপে তীর, কাঁদে ভষ্ম
যেন দীর্ঘ সে নশ্বর
আরো দিন আরো রাত্রি
কালো দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ
সব মেপে যাই হে চণ্ডাল
কাঁদে বীর, কাঁপে ধীর
হাত কামড়ায়; হাত কামড়ায়!
এ কর্বূখ, যত রাক্ষস
খায় চেটে পুটে ব্যাঞ্জন
কালো সাওঁতাল, তূনে কয়লা
কয়লার মত ভীত উদ্দেশ
তারা পুড়ে যায়, পুড়ে যায়
যেন দণ্ডক অরণ্য।
একলব্য, ভীত শপ্ত
মরে প্রতি-দিন দ্রাক্ষায়
আর লুটে ন্যায়-রাক্ষস সব
যত কাটা, আঙ্গুল-কর।
তারা গুম হয়, আর গুম হয়
তারা ঘুম হয়, আর ঘুম হয়
সেই একলব্য দ্যায় আঙ্গুল
কত শত দিন, লুট-মশগুল
ভুল একলব্য, জন্মায়, জন্মায়।
ভুল একলব্য, মরে যায়, যায়!”
শিমুল দে লিখেছেন:
“শাহনামা চলছে চেতনার কাল
মরে তো যেতেই পারে ‘দুই একটা’ সাঁওতাল
কি যায় আসে?
দেশ উন্নয়নে ভাসে!
রামপাল, রূপপুর, বাঁশখালী…
পুড়ে যাচ্ছে নাসিরনগর
তোমার আমার উঠবে ঘর পূর্বাচলে
উচ্ছিষ্ট কপালে জোটে কতোটা সৌভাগ্যবান হলে?
অতএব, এসো লেজ নাড়ি………
একজন লিখেন:
“ফের যদি দেখি শাঁওতাল আমার ভাই!
বুনোদের স্মৃতির উঠোনে আমার শৈশব কাঁদে!
কোল ভীম মুন্ডা আমার রক্ত ধারা।
নিশি ঋষিদের শিকেয় তুলে রেখেছি, আমার প্রানের অমিয় সঙ্গীত সূধা।
মারমা চাকমাদের শরীরের রক্তস্রোতে আমার ইতিহাসের দীপ্ত শরীর দীপ্যমান!
হাজার ফুলের সুবাস ভরা, আমার প্রান।
আউল বাউল বৈষ্ণবে আমি সুর!
পদ্মা মেঘনা যমুনা আমার প্রেয়সির নূপুর!
স্বশানের চিতায় প্রজ্বলনে কবরের প্রানে, আমার বাস!
তীর ধনু আর হলেঙ্গায় আমি দীর্ঘস্বাস!
হাজার গানের ঐক্যতানে, ঘুরেছি আমি সুরের প্রানে,
মহা মিলনের করেছি চাষ! বার মাস!
রবীন্দ্রনাথ নজরুল খুঁড়ে, সিরাজ লালন করিমের সুরে, আমি একাকার!
হাছন রাজার সঙ্গীতবীণার তার,
এ সবই আমার, আমি তার, সে আমার!
কুকুর হতে সাবধান থাকি।
ফের যদি শালা এদিকে দেখি,
নয়ন বারুদ ঢেলে,
পুড়াবই তিলে তিলে,
ইতিহাসের ঢিলে, সকলে মিলে!
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ রহমান লিখেছেন:
“একটা চিনিকলের জন্য-
২০০ হতদরিদ্র পরিবার উচ্ছেদ করা হয়েছে।
একটা চিনিকলের জন্য-
২০০ সাঁওতাল পরিবারে ঘরে আগুন দেয়া হয়েছে।
একটা চিনি কলের করার জন্য-
সাঁওতাল শ্যামল হেমব্রমকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
একটা চিনি কলের জন্য-
চারজন নিরপরাধ মানুষকে গুলি বিদ্ধ করা হয়েছে।
একটা চিনি কলের জন্য-
সবচেয়ে সবচেয়ে দরিদ্র জনপদের সমস্ত-সম্বল লুটে নেয়া হয়েছে।
স্থাপিত হতে থাক চিনির কল-
আমরা চায়ের কাপে বিপ্লবের তুবড়ি ছোটাবো,
বিপ্লবের জন্য চিনি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ…”
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
আহা চিকুনগুনিয়া !
ঈদের দিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে মেঝেতে পা দিয়ে আমিবিস্তারিত পড়ুন
‘দৃষ্টিশক্তি থাকা, কিন্তু জীবনে লক্ষ্য না থাকা অন্ধত্বের চেয়েও খারাপ’
চক্ষু, কর্ন, জিহবা, নাসিকা, ত্বক – মানুষের এই পাঁচটি ইন্দ্রিয়েরবিস্তারিত পড়ুন
ধর্ষিতা মেয়েটির গল্প
পারিনি সেদিন নিজেকে শোষকদের হাত থেকে রক্ষা করতে, পারিনি সেদিনবিস্তারিত পড়ুন