হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেই ফার্স্ট লেডির নতুন চমক
এক সময়ের কল্পনার জগতের আল্পনা থেকে বাস্তবেই আজ মার্কিন ফার্স্ট লেডি হিসেবে যাত্রা শুরু করলেন মেলানিয়া ট্রাম্প। মিশেল ওবামার পর তিনিই এখন হোয়াইট হাউসের হর্তাকর্তা। নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই স্বামী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছায়াসঙ্গী হয়ে থেকেছেন মেলানিয়া। শুক্রবারও তার অন্যথা হয়নি।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তার পোশাক এবং আচার–ব্যবহারে প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি বেটি ফোর্ড এবং জ্যাকি কেনেডির মিল পেয়েছেন অনেকে। তিনিও কম যান না। ফার্স্ট লেডির ভূমিকায় নেমেই জানিয়ে দিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় হেনস্থার বিরুদ্ধে লড়তে বদ্ধপরিকর তিনি। তাতে কতটা সফল হন, সে তো ভবিষ্যতই বলবে। কিন্তু যুগোশ্লভিয়া থেকে হোয়াইট হাউসের মালকিনের—কেমন যাত্রা মার্কিন ফার্স্ট লেডির।
অনুসন্ধানে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জন কুইন্সি অ্যাডামসের স্ত্রী লুইসিয়া অ্যাডামসের পর মেলানিয়াই প্রথম ফার্স্টলেডি, যিনি আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করেননি। লুইসিয়া অ্যাডামসের জন্ম ব্রিটেনে। ১৯৭০ সালে যুগোস্লোভিয়ায় জন্ম মেলানিয়ার। আসল নাম মেলাঞ্জিয়া নাভস। বাবা ভিক্টর নাভস সাম্যবাদী নেতা এবং মোটর সাইকেল ব্যবসায়ী। মা আমালিজা নাভস মা বাচ্চাদের পোশাক তৈরি করতেন। স্লোভেনিয়ান, ইংরাজি, ফরাসি, সার্বিযান এবং জার্মান— পাঁচটি ভাষায় কথা বলতে পারেন মেলানিয়া।
১৯৯৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ২০০৫ সালে ফ্লোরিডার পাম বিচে বিয়ে সারেন। তিনি ট্রাম্পের তৃতীয় স্ত্রী। ২০০৬ সালে তাদের সন্তান ব্যারনের জন্ম হয়। ট্রাম্পের প্রথম পক্ষের ছেলে ডোনাল্ড জন ট্রাম্প জুনিয়রের থেকে মাত্র ৮ বছরের বড় মেলানিয়া।
অভিবাসী হিসেবেই প্রথম আমেরিকায় পা রেখেছিলেন তিনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আইনি অনুমতি মেলার আগেই ১০টি সংস্থার হয়ে মডেলিং করার চুক্তি সই করেন। পরে ২০০১ সালের মার্চ মাসে গ্রিন কার্ড পান তিনি। মার্কিন নাগরিকত্ব পান ২০০৬ সালে।
৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার মেলানিয়া ‘হার্পারস বাজার,’ ‘ভ্যানিটি ফেয়ার,’–এর মতো পত্রিকার কভারে দেখা দিয়েছেন। ব্রিটিশ পত্রিকা ‘জিকিউ’–এর জন্য নগ্ন ফটোশ্যুটও করেছিলেন। গয়না ও ত্বক পরিচর্চার সামগ্রীর ব্যবসা রয়েছে তার।
১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রিফর্ম পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রথম মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই সময় ট্রাম্পের বান্ধবী মেলানিয়া নাসকে (বর্তমানে স্ত্রী) ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’ এর পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি কেমন ফার্স্ট লেডি হবেন?
১৯৯৯ সালে জয়ের সম্ভাবনা শূন্য হলেও আজ বাস্তেবই রিপাবলিকান দল থেকে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ১৮২৫ সালের পর মেলানিয়াই হবেন বিদেশি বংশোদ্ভূত প্রথম ফার্স্ট লেডি। ট্রাম্পের অভিবাসন-বিরোধী নীতির সঙ্গে মেলানিয়ার বর্তমান অবস্থা আপাতত বিরোধী বলেই মত অনেকের। তবে সেই ট্রাম্পেরই বিদেশি বংশোদ্ভূত বউ হওয়ায় এ নির্মম পরিহাস উড়িয়ে দিয়ে মেলানিয়া বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে কাগজপত্রহীনভাবে বাস করা যে অভিবাসীদেরকে ট্রাম্প তাড়াতে চেয়েছেন তাদের সঙ্গে তার (মেলানিয়া) অবস্থাটা মোটেও এক নয়।
এমএসএনবিসি’ কে মেলানিয়া বলেন, ‘আমি আইন মেনে চলি। আমি কাগজপত্র ছাড়া এখানে বাস করার কথা কল্পনাও করতে পারি না। আমার ভিসা আছে।’ আর ফার্স্ট লেডি হিসাবে কেমন হবেন? নতুন করে ফের সেই প্রশ্নে মেলানিয়ার জবাব, ‘আমার আচরণ হবে খুবই প্রথাগত। অনেকটা বেটি ফোর্ড অথবা জ্যাকি কেনেডির মত। আমি সবসময় তাকে (ট্রাম্পকে) সমর্থন করব।’
ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা সমাবেশগুলোতেও মেলানিয়াকে দেখা গেছে।
সর্বদা স্বামীর পাশে শান্ত ও চুপচাপ হয়েই দাঁড়িয়ে থাকছেন তিনি। বর্তমান ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার সঙ্গে তুলনা করলে মেলানিয়া কথা বলেনই না বলা যায়।
২০০৮ সালে বারাক ওবামার নির্বাচনী প্রচারণার সময় তীর্যক মন্তব্য করে মিশেল ওবামা তার স্বামীরই মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিলেন। একবার তিনি বলেছিলেন, ‘প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর এই প্রথম আমি সত্যি আমার দেশের জন্য গর্ব অনুভব করছি।’
মিশেলের এই মন্তব্যের পর রক্ষণশীলরা সমালোচনার ঝড় তোলে। এমনকি তার দেশপ্রেম নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। সেই তুলনায় মেলানিয়া স্বামীর নির্বাচনী প্রচারণায় সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প সবচেয়ে সেরা প্রেসিডেন্ট হবেন। স্লোভেনিয়া বংশোদ্ভূত ৪৫ বছর বয়সী মেলানিয়া মডেল ছিলেন।
তাদের নয় বছর বয়সী পুত্রের নাম ব্যারন। ১৯৭০ সালে স্লোনিয়ার ছোট্ট শহর সেভনিকায় শৈশব কাটে তার। পরে মিলান ও প্যারিসে মডেল হিসেবে ক্যারিয়ার গড়েন তিনি। ১৯৯৬ সালে মেলানিয়া নিউইয়র্কে পাড়ি জমান। দুই বছর পর কিট ক্যাট ক্লাবের একটি পার্টিতে তার থেকে ২৪ বছরের বড় ট্রাম্পের সঙ্গে তার পরিচয় হয় বলে জানিয়েছে ‘দ্য গার্ডিয়ান’।
ওই সময় ট্রাম্প তার দ্বিতীয় স্ত্রী মার্লা ম্যাপলেসের থেকে আলাদা বাস করতেন। ২০০৬ সালে মেলানিয়া ও ট্রাম্প বিয়ে করেন। তাদের বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন হিলারি ও বিল ক্লিনটন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্ত্রী হলেও মেলানিয়ার যৌক্তিক কথাই বলছেন? ট্রাম্প যেখানে প্রেসিডেন্ট হলে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম অভিবাসন প্রত্যাশীদের ঢুকতে দেবেন না বলছেন, সেখানে মেলানিয়ার মত হচ্ছে, কেউ বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে চাইলে সে সুযোগ রাখা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রে এসে মেলানিয়া নাস থেকে ট্রাম্পের তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে মেলানিয়া ট্রাম্প হয়েছেন, ট্রাম্পের হাত ধরে তিনি হোয়াইট হাউসবাসীও হচ্ছেন।
এদিকে অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে ওয়াকিং ভিসা পাওয়ার আগে কমপক্ষে ১০টি অ্যাসাইনমেন্টে কাজ করেছিলেন মেলানিয়া ট্রাম্প। এবং এর বিনিময়ে তিনি ২০ হাজার ৫৬ ডলার পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালের অক্টোবরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার অনুমতি পান। কিন্তু তার আগেই তিনি ১০টি মডেলিং কাজ করেন। এর বিনিময়ে তাকে ওই অর্থ দেয়া হয়।
অর্থাৎ আইনগত অনুমোদন পাওয়ার আগেই তিনি অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে মডেলিং করেছিলেন টাকার বিনিময়ে। এ বিষয়ে বার্তা সংস্থা এপি’র হাতে বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ এসেছে। মেলানিয়া ট্রাম্পের স্বামী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র সহ সারাবিশ্বের পত্রপত্রিকায়।
তখনই এ বিষয়ে মেলানিয়া কোনো কথা না বললেও কিছুদিন পরে ট্রাম্প বলেছিলেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন মেলানিয়া। কিন্তু যতদূর জানা যায় তাতে এ পর্যন্ত মেলানিয়া ওই সংবাদ সম্মেলন করেন নি। তিনি সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার স্বামীকে নারী বিষয়ক স্ক্যান্ডাল থেকে বাঁচাতে। এ অবস্থায় এপি তার রিপোর্টে বলেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় অভিবাসন বিরোধী কঠোর অবস্থানের কথা বলেছেন।
যারা অভিবাসন বিষয়ক আইন লঙ্ঘন করেছেন তাদেরকে দেখে নেয়ার কথা বলেছেন । সেক্ষেত্রে যদি তার স্ত্রী মেলানিয়া এ আইন লঙ্ঘন করে থাকেন তাহলে তিনি কি করবেন সে বিষয়ে কিছুই বলেন নি। তিনি বলেছেন, অবৈধভাবে যেসব অভিবাসীকে অর্থ দেয়া হবে তাতে নিষেধাজ্ঞা আছে ফেডারেল আইনে। তাহলে তার স্ত্রীকে যে কাজ করার অনুমতি দেয়ার আগে কাজের জন্য অর্থ দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে তিনি কি বলবেন!
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের মার্চে গ্রিন কার্ড পান মেলানিয়া ট্রাম্প। এরপর তিনি ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হন। মেলানিয়া সব সময়ই বলে আসছেন যে, তিনি আইনগতভাবেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন। কখনোই তিনি অভিবাসন বিষয়ক আইন ভঙ্গ করেন নি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে স্বামীর পক্ষে কথা বলতে গিয়ে তিনি এমন কথা বলেছেন।
মেলানিয়া ট্রাম্প মাঝেমধ্যেই মডেল হিসেবে কাজ করেছেন তার প্রথম নামটি ব্যবহার করে। তবে তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে বলেছেন, যে, বি১/বি২ ভিজিটর ভিসার অধীনে ১৯৯৬ সালের ২৭ আগস্ট তিনি স্লোভেনিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যান প্রথম। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৮ অক্টোবর অর্জন করেন এইচ-১বি ওয়ার্ক ভিসা। কিন্তু এপির হাতে যেসব ডকুমেন্ট এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, তাকে ১০ থেকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে মেলানিয়াকে ১০টি মডেলিং অ্যাসাইনমেন্টের জন্য অর্থ পরিশোধ করা হয়েছিল।
ওই সময় তাকে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করতে অনুমতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই কাজের বিনিময়ে কোনো অর্থ নিতে অনুমোদন দেয়া হয়েছিল না। এপি এ বিষয়ে তাদের হাতে থাকা তথ্যপ্রমাণ যাচাই করে দেখেছে যে, তার ভিসার বাইরে ছিল এই অর্থ লেনদেন।
এ দিকে মেলানিয়া তার স্বামী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবকিছুতেই সমর্থন করলেও টুইট করা একেবারেই অপছন্দ করেন বলে জানিয়েছেন। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইট করাকেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন