১০ জানুয়ারি টেস্টে প্রথম জয়, স্মৃতির পাতা থেকে বীরত্বগাথা আটটি গল্প টেস্ট আসরের..
১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয় করে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হলেও পরের বছরের ১৭ মে ভারতের হায়দরাবাদে কেনিয়ার বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে জয় পায় ক্রিকেটের নবীনতম দেশটি। এরপর ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর ২০০৫ সালের ১০ জানুয়ারি টেস্টে প্রথম জয় পায় লাল-সবুজের দল। এরপর ১৭ বছরে মাত্র ৯৫ টেস্ট ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। সেখানে জয় মাত্র আটটি ম্যাচে। আসুন দেখে নিই বাংলাদেশের জয় পাওয়া সেই আটটি টেস্টের চুম্বক অংশ :
এনামুল-বাশার বীরত্বে প্রথম টেস্ট জয়
১০ জানুয়ারি-২০০৫, চট্টগ্রাম : সিরিজ শুরুর আগে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে রাজিন সালেহর নেতৃত্বে বাংলাদেশ দলকে ঘামিয়ে দিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। ক্ষয়িষ্ণু শক্তির হলেও মাসাদাকাদজা, সিবান্দা, মাতসিকানেরিরা তখনো বাংলাদেশের চেয়ে ফেভারিট। কারণ, চার বছরে তত দিন ৩৪টি টেস্ট খেললেও প্রতিপক্ষের কাছে তখনো নিদেন সাধারণ একটি দল বাংলাদেশ। ৩৫তম টেস্টে চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাঠে নামে হাবিবুল বাশারের দল। নাফিস ইকবাল, অধিনায়ক হাবিবুল বাশার, রাজিন সালেহ ও মোহাম্মদ রফিকের অর্ধশতকে প্রথম ইনিংসে ৪৮৮ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। মাশরাফি আর খালেদ মাসুদ পাইলটও প্রায় হাফ সেঞ্চুরি করেন। পাইলট ৪৯ আর মাশরাফি করেন ৪৮ রান। রফিক ঘূর্ণি আর মাশরাফির গতিতে ৮৬ রানে ৫ উইকেট হারালেও টাটেন্দা তাইবু আর এল্টন চিগুম্বুরার ব্যাটে প্রতিরোধ গড়ে ৩১২ রানে থামে সফরকারীদের ইনিংস। ৬৫ রানে ৫ উইকেট নেন রফিক। হাতে ১৭৬ রানের লিড, তবে দ্বিতীয় ইনিংসে এক বাশার বাদে ভালো করতে পারেনি আর কেউই। ৯ উইকেটে ২০৪ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের সামনে লক্ষ্যটা দাঁড়ায় ৩৮০ রানের। এত বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড তখন বিরল। তাপস বৈশ্যঝড়ে দুই রানেই দুই উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। ১১৫ রানে পাঁচ উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশের জয়টা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। শেষ বিকেলে টপাটপ কয়েকটি উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়টা এনে দেন এনামুল হক জুনিয়র। ছয় উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরাও হন এই বোলার।
দ্বিতীয় জয়ের নায়ক তামিম-রিয়াদ
১৩ জুলাই-২০০৯, কিংসটন : বোর্ডের সঙ্গে ঝামেলার কারণে গেইল, চন্দরপল, সারওয়ানরা তখন বিদ্রোহ শুরু করে দিয়েছেন। সাতজন অভিষিক্ত ক্রিকেটার নিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কেমার রোচ, টিনো বেস্টদের আগুনঝড়া বোলিংয়ে মাত্র ২৩৮ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। তরুণ হলেও ড্যারেন স্যামি, ওমর ফিলিপস ও ডেভিড বার্নাডদের দাপটে ৩০৭ রান তোলে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয় ইনিংসে ড্যারেন স্যামি বল হাতে আগুন ঝরালেও তামিমের সেঞ্চুরি ১২৮ ও জুনায়েদ সিদ্দিকীর ৭৮ রানে ভর করে ৩৪৫ রান করে বাংলাদেশ। ক্যারিবীয়দের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৭৬ রানের। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে এই তাড়া করা খুব একটা কঠিন নয়। তবে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন অভিষিক্ত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও তরুণ সাকিব আল হাসান। রিয়াদের পাঁচ আর সাকিবের তিন উইকেটে মাত্র ১৮১ রানে গুটিয়ে যায় ক্যারিবীয়রা। ৯৫ রানে এই জয়টাই ছিল দেশের বাইরে বাংলাদেশের প্রথম জয়।
অলরাউন্ডার হয়ে উঠলেন সাকিব
২০ জুলাই-২০০৯, গ্রানাডা : সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট সেটা। প্রথম টেস্ট ম্যাচের স্মৃতি তখনো জ্বলজ্বলে। দ্বিতীয় ম্যাচেও বল হাতে দারুণ উজ্জ্বল সাকিব ও রিয়াদ। এবার তাঁদের সঙ্গে যোগ দিলেন এনামুল হক জুনিয়র। এই স্পিন ত্রয়ীর ঘূর্ণিতে ২৩৭ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কেমার রোচের পেসে বাংলাদেশ অলআউট হয় ২৩২ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে সাকিব নেন ৫ উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলআউট হয় ২০৯ রানে। বাংলাদেশের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২১৫ রানের। ব্যাটেও নায়ক সাকিব আল হাসান। ৯৬ রানে করে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। আর পার্শ্বনায়ক রকিবুল ইসলাম। ৬৫ রান করেন রকিবুল। বাংলাদেশ ম্যাচ জেতে চার উইকেট হাতে রেখেই।
সাকিব-নাসির-মুশফিকের ম্যাচ
২৯ এপ্রিল-২০১৩, হারারে : জিম্বাবুয়ের তখন ভগ্নদশা। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ অনেকের সমীহ আদায় করে নিয়েছে। তবু প্রথম টেস্টে বাংলাদেশকে ৩৩৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারায় স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় টেস্টে তাই সিরিজে ফেরার তাড়না ছিল বাংলাদেশের সামনে। সাকিব (৮১), নাসির (৭৭), মুশফিক (৬০) আর তামিমের (৪৯) রানের ভর করে আগে ব্যাট করে সব উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তোলে ৩৯১ রান। চিগুম্বুরা আর মুতুম্বানির প্রতিরোধ সত্ত্বেও রবিউলের পাঁচ উইকেটে ২৮২ অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। ১০৯ রানের লিডের সঙ্গে দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ উইকেটে আরো ২৯১ রান যোগ করে বাংলাদেশ। মুশফিক ৯৩, নাসির ৬৭ আর সাকিব করেন ৫৯ রান। ৪০১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করা জিম্বাবুয়ে সব উইকেট হারিয়ে তোলে ২৫৭ রান।
তাইজুলের বিশ্বরেকর্ড
২৭ অক্টোবর-২০১৪, ঢাকা : সাকিব আল হাসানের ছয় উইকেটে জিম্বাবুয়েকে ২৪০ রানে অলআউট করে দেয় বাংলাদেশ। পানিয়াঙ্গারার গতির সামনে বাংলাদেশও আটকে যায় ২৫৪ রানে। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে মাত্র ১১৪ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। আট উইকেট নেন তাইজুল। ম্যাচে আকর্ষণ বাকি ছিল বাংলাদেশের ইনিংসে। ১০১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে কোনো রান না করেই তিন উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ-মুশফিক আর শেষের দিকে তাইজুলের ১৫ রানে ভর করে তিন উইকেটের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
বোথাম-ইমরানদের পাশে সাকিব
৭ নভেম্বর-২০১৪, খুলনা : সাকিবের ১৩৭ আর তামিমের ১০৯, সেইসঙ্গে মাহমুদউল্লাহর হাফ সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে ৪৩৩ রান তোলে বাংলাদেশ। মাসাকাদজা ১৫৮ ও চাকাভা ১০১ রানে জিম্বাবুয়েও বেশ ভালোই জবাব দেয়। দুই শতকের জোরে তারা তোলে ৩৬৮ রান। ৮০ রানে ৫ উইকেট নেন সাকিব। দ্বিতীয় ইনিংসে মাহমুদউল্লাহ, মুমিনুল ও শুভাগত হোমের অর্ধশতকে ২৪৮ রানে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। ফলে জিম্বাবুয়ের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩১৪ রানের। এই ইনিংসে মাত্র ৪৪ রানে ৫ উইকট নিয়ে ১৫১ রানেই জিম্বাবুয়েকে আটকে দেন সাকিব। ইয়াম বোথাম ও ইমরান খানের পর তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেট নেওয়ার বিরল কৃতিত্ব দেখান সাকিব আল হাসান। সাকিবের ৩১ বছর আগে এই রেকর্ড গড়েন পাকিস্তানি গ্রেট ইমরান খান। সাকিব বীরত্বে দ্বিতীয় টেস্টে ১৬২ রানের বড় জয় পায় বাংলাদেশ।
প্রথম বাংলাওয়াশ
১২ নভেম্বর-২০১৪, চট্টগ্রাম : টেস্টের প্রথম দিন থেকেই আধিপত্যের ইঙ্গিত দিয়েছিল বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের রেকর্ড উদ্বোধনী জুটি, সাকিবের ৭১ আর মুমিনুলের প্রায় হাফ সেঞ্চুরিতে (৪৯) ৫০৩ রান তুলে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের নিচে জিম্বাবুয়েকে চাপা দেয় বাংলাদেশ। সিকান্দার রাজা-হ্যামিল্টন মাসাকাদজা আর এল্টন চিগুম্বুরার ব্যাটে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করলেও জুবায়ের হোসেন লিখনের পাঁচ উইকেটে ৩৭৪ রানে শেষ হয় জিম্বাবুয়ের ইনিংস। দ্বিতীয় ইনিংসে আলো ছড়ালেন ‘নতুন ব্র্যাডম্যান’ মুমিনুল হক। বামহাতি এই ব্যাটসম্যানের চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের সামনে ৪৪৭ রানের লক্ষ্য দাঁড় করায় বাংলাদেশ। ২৬২ রানেই শেষ হয় জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংস। ১৮৬ রানের জয়টা দিয়ে ইতিহাসের প্রথম হোয়াইটওয়াশ করে মুশফিকের দল, যার নতুন নাম হয় ‘বাংলাওয়াশ’।
নতুন নায়ক মিরাজ
২৮ অক্টোবর-২০১৬, ঢাকা : ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ানডেতে একাধিক জয় থাকলেও লংগার ভার্সনে ক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজাত দলটির বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ডটা খুবই বাজে। তবে টেস্ট ক্রিকেটে ১৭ বছরের পথচলায় পরিপক্ব হয়ে উঠছে লাল-সবুজের দল। সিরিজের প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডকে প্রায় হারিয়ে দিয়েছিল মুশফিকের দল। অনভিজ্ঞতার কারণেই ২২ রানে হার মানে বাংলাদেশ। জয়ের স্বপ্ন নিয়েই ঢাকায় ফেরে টাইগাররা। ৭ উইকেট নিয়ে সেই টেস্টের হিরো হয়েও কিছুটা আক্ষেপ ছিল মেহেদি হাসান মিরাজের। ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনের প্রথম সেশনটা ছিল বাংলাদেশরই। তবে ১ উইকেটে ১৭১ রান করার পরও মাত্র ২২০ রানে গুটিয়ে যায় পুরো দল। ইংল্যান্ডকেও বেশি করতে দেয়নি বাংলাদেশ। মিরাজের আরেকটি ষষ্ঠকে ২৪৪ রানে শেষ হয় ইংল্যান্ডের ইনিংস। দ্বিতীয় ইনিংসে ইমরুল কায়েসের ৭৮, মাহমুদউল্লাহ ৪৭, সাকিব ৪১ ও তামিমের ৪০ রানে ২৯৬ রান তোলে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম সেশনে ছিল ইংলিশ রাজত্ব। ওপেনিং জুটিতেই স্কোরবোর্ডে শতরান জমা করেছিলেন অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক ও বেন ডাকেট। কিন্তু এরপরই ঘটে ছন্দপতন। মাত্র ৬৪ রানের মধ্যে পুরো ১০ উইকেট তুলে নেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান। মিরাজ নেন ছয় উইকেট। তাঁকে যোগ্য সাহচর্য দিয়ে সাকিব নেন চার উইকেট। প্রথমবারের মতো ক্রিকেটের জনক দেশটিকে ১০৮ রানে হারিয়ে উৎসবে মেতে ওঠে পুরো দেশ।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন