১২ বছর পর দেশে ফিরে মা-বাবাকে খুঁজে পাচ্ছে না বেলাল
পাঁচ বছর বয়সে বাড়ির পাশে খেলা করার সময় পাচারকারীদের কবলে পড়েছিল বেলাল। এরপর এ-পথ সে-পথ ঘুরে তার ঠিকানা হয় ভারতের আসামের গৌহাটির পাহাড়ি এলাকার এক মদের কারখানায়। সেখানে কেটে যায় জীবনের বারোটি বছর।
অবশেষে সুযোগ পেয়ে পালিয়ে দেশে ফিরেছে বেলাল। তবে এখনও খুঁজে পাননি তার বাবা-মাকে। পাঁচ বছরের যতটুকু স্মৃতি নিয়ে তিনি ফিরেছেন, তাতে শুধু ঝালকাঠির বাইপাস এলাকার কথাই মনে করতে পারেন। তবে সেখানে খুঁজে পাননি নিজের ঠিকানা, পরিবারকে।
বেলাল জানান, কৌশলে মদের কারখানা থেকে পালিয়ে ফেনীর পশুরাম সীমান্ত দিয়ে দালালদের মাধ্যমে তিনশ’ টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশে আসেন তিনি।
এখন শুধু তার নিজের নাম বাড়ি ঝালকাঠির বাইপাস, বাবার নাম জসিম উদ্দিন আর মায়ের নাম সেলিনা, এতটুকুই বলতে পারে। আর কিছুই মনে নেই তার।
সেই সূত্র ধরেই ফেনী থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে শুক্রবার রাতে ঝালকাঠির রাজাপুরের বাইপাস এলাকায় আসে বেলাল। স্থানীয় খসরু নামে এক সবজি বিক্রেতা তাকে আশ্রয় দিয়ে বাবা মাকে খোঁজার চেষ্টা করেন। এখন থানা পুলিশের সহযোগিতায় স্থানীয় সাংবাদিকরা বিভিন্নভাবে তার পরিবারকে খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিয়েছেন। বেলাল বাংলা ভাষা বুঝলেও কথা বলতে পারেন না বাংলায়। শুধু হিন্দিতেই কথা বলেন।
বেলাল জানান, তার বাবা খুব সকালে বাড়ি থেকে কাজে বের হতেন। ফিরতেন গভীর রাতে। তবে কি কাজ করতেন তা মনে নেই তার। কাঁচা রাস্তার পাশে টিনের ঘরে মা-ই সবসময় তাকে আগলে রাখতেন। একমাত্র সন্তান হিসেবে রাখতেন চোখে চোখে। এরপর সবার অজান্তে শিশু পাচারকারীকে কবলে পড়ে হারিয়ে যায় তার জীবন থেকে বারোটি বছর। এই সময়ে বহু অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাকে। তবুও মাটির টান, বাবা-মায়ের টান ভুলতে পারেননি একটু সময়ের জন্যও। সেই এক যুগ ধরেই তার লড়াই আর আপ্রাণ চেষ্টা ছিল মায়ের কাছে ফিরে আসার।
এরপর ভারতের আসামের গৌহাটি পাহাড়ের মদের কারখানার দারোয়ানের কাছে কাকুতি মিনতি করে বের হন বেলাল। এরপর বাংলাদেশের ফেনী থেকে স্থানীয় রানা নামে এক ব্যবসায়ীর সহযোগিতায় ট্রেনে লক্ষ্মীপুর আসেন। সেখান থেকে লঞ্চযোগে ভোলা ও বরিশাল হয়ে ঝালকাঠির রাজাপুর বাইপাস এলাকায় আসেন। তবে এর অধিকাংশ সময়েই তাকে খেয়ে না খেয়ে কাটাতে হয়েছে।
বেলাল বলেন, ‘আমি অনেক কষ্ট করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এদেশে এসেছি শুধু বাবা-মাকে ফিরে পেতে। আমি বাবা-মাকে ছাড়া আর কারো কাছে কিছুই চাই না।’
রাজাপুরের সাংবাদিকরা জানান, ‘বেলালের ঘটনা শোনার পর আমরা সকলেই আবেগ-আপ্লুত হয়ে গেছি। ওর পিতা-মাতাকে খোঁজার জন্য সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাইকিংসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে।’
রাজাপুর থানার পরিদর্শক (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস জানান, ‘বিষয়টি অত্যন্ত নির্মম। ইতোমধ্যে বিষয়টি ঝালকাঠি পুলিশ সুপারকে অবহিত করেছি। বেলালের পরিবারকে খুঁজে বের করতে থানা পুলিশ সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।’
ইউএনও শাহ মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বেলাল হোসেনের পরিবারের সদস্যদের পেলে উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে তাকে নিতে হবে। অন্যথায় সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে সেভ হোমে পাঠানো হবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
তারাবির নামাজে দুই মুসল্লির হাতাহাতি, ঘুষিতে একজনের মৃত্যু
পটুয়াখালীর বাউফলে তারাবির নামাজ আদায়কে কেন্দ্র করে হাতাহাতির একপর্যায়ে একজনেরবিস্তারিত পড়ুন
গৃহবধূ সীমার লাশের দুই টুকরা উদ্ধার!
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলায় সীমা নামে এক গৃহবধূর মরদেহের দুই টুকরাবিস্তারিত পড়ুন
ঝালকাঠিতে গৃহবধূকে ধর্ষণ, আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে ..
ঝালকাঠিতে এক গৃহবধূকে ধর্ষনের আভিযোগে ঝালকাঠি থানায় মামলা দায়ের করাবিস্তারিত পড়ুন