১৫ আগস্ট একজন ব্যক্তিকে নয়, একটি দেশের চেতনাকে হত্যা করা হয়েছিল : তোফায়েল
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একজন ব্যক্তিকে নয়, একটি দেশের চেতনা, আশা, আকাঙ্ক্ষাকে হত্যা করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী ওই কুচক্রী মহল ব্যক্তি মুজিবকে হত্যা করতে পেরেছিল, কিন্তু তাঁর আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম সাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
আজ রাজধানীর কাকরাইলস্থ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এ স্মরণসভার আয়োজন করে জাতীয় পার্টি (মঞ্জু)।
এতে সভাপতিত্ব করেন পার্টির সভাপতি এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।
বিশেষ অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। এছাড়া ১৪ দল ও জাতীয় পার্টি (মঞ্জু)’র বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, এবারের ১৫ আগস্টে অন্যান্য বারের চেয়ে মানুষের ঢল বেশি ছিল। মানুষের এ ঢলই প্রমাণ করে বঙ্গবন্ধু আজও জীবিত। বঙ্গবন্ধুর দেহটা টুঙ্গিপাড়ায় থাকলেও তাঁর আদর্শের সৈনিকেরা তাদের হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করে দেশব্যাপি রাজপথে নেমে এসেছিল।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু চিরকাল বাঙালীর হৃদয়ে বেঁেচ থাকবেন। তাঁর আদর্শের মৃত্যু নেই।
সমুদ্রের গভীরতা মাপা যায়, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের গভীরতা মাপা যায় না উল্লেখ করে এ নেতা বঙ্গবন্ধুর উদ্বৃতিতেই বলেছেন-‘আইয়ুর-মোনায়েম আমাকে কাবু করতে পারেনি। কিন্তু বাঙালীর ভালবাসা আমাকে কাবু করে দিয়েছে।’ বাঙালীর এ ভালাবাসাই তাঁকে এবং তাঁর আর্দশকে এ মাটিতে চিরকাল বাঁচিয়ে রাখবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বঙ্গবন্ধু বিচক্ষণ ও প্রজ্ঞাবান নেতা ছিলেন উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ৫২’র ভাষা আন্দোলনের সময়ই বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন- ‘স্বাধীনতা ছাড়া বাঙালীর মুক্তি নেই’। তাই তিনি বাঙালীর মুক্তির সনদ ৬ দফা ঘোষণা করেন এবং আমাদের মতো কর্মীদের বলেন- এ ৬ দফাই হলো বাঙালীর সাঁকো। এই সাঁকো আমাদের স্বাধীনতার লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ‘পরশ পাথর’এর মত ছিলেন। যা ছুঁয়ে দিতেন, তা-ই সোনা হয়ে যেত। যেমন, তাঁর পরশ- আমাদের অসাম্প্রদায়িকতার পথ দেখিয়েছে, নিরস্ত্র বাঙালীকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, আমাদের চেতনাকে শানিত করেছে, আরো কত কি করেছে তার ইয়ত্তা নেই।
বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক নেতা ছিলেন উল্লেখ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, স্বাধীনতার পর যেখানেই গিয়েছি, সবাই বঙ্গবন্ধুর কথা শুনতে চেয়েছেন। এমনকি বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতির জন্য ওআইসি সম্মেলন একদিন স্থগিত রাখা হয়েছিল।
তিনি বলেন, কিন্তু বাঙালীর এ মহান নেতাকে পাকিস্তানীরা হত্যা করতে পারেনি, অথচ বাঙালীরা তাঁকে হত্যা করেছে। আন্তর্জাতিক নেতারা এ হত্যাকান্ডের জন্য বাঙালীকেই ‘শেইম’ জানিয়েছে। বিশ্বাস ঘাতক বলেছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বুঝতে পেরেছিল বঙ্গবন্ধুর রক্ত যদি থেকে যায়, তাহলে এ দেশ ঘুরে দাঁড়াবে, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় এগিয়ে যাবে। তাই তারা দশ বছরের শিশু রাসেলকেও হত্যা করেছে।
কিন্তু বাঙালীর সৌভাগ্য তার দুই কন্যা দেশের বাইরে ছিল বলেই তাঁরা বেঁচে গিয়েছে এবং দেশ আবার বঙ্গবন্ধুর আদর্শে পরিচলিত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দেশে এসেছিলেন বলেই আওয়ামী লীগ সংগঠিত হয়েছিল, ৯৬ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছিল, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল হয়েছিল এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকারিদের বিচার হয়েছে, স্বাধীনতার চেতনায় দেশ এগিয়ে যাচ্ছে আর আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারছি।
বঙ্গবন্ধুর এ সহচর জোর দিয়েই বলেন, শেখ হাসিনা না থাকলে আমরা কখনো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারতাম না এবং আজ বাংলাদেশের যে অগ্রগতি সেটিও সাধিত হতো না।
তিনি বলেন, বর্তমানে পাকিস্তানের রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলার, আর রপ্তানী বাণিজ্য ২১ বিলিয়ন ডলার। সেখানে বাংলাদেশের রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলার আর রপ্তানী বাণিজ্য ৩২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। বঙ্গবন্ধু কেন দেশের স্বাধীনতা চেয়েছিলেন এতেই বুঝা যায় উল্লেখ করে এ নেতা বলেন, আমরা এখন সব ক্ষেত্রেই পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। নোবেল লোরিয়েট অর্মত্য সেন বলেছেন- কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা ভারতের চেয়েও এগিয়ে গিয়েছি।
দেশের এ অগ্রগতি রুখে দিতেই আজ অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ অগ্রগতি রুখে দিতে হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ার মত জঙ্গি হামলা চালানো হচ্ছে। বিদেশী বিনিয়োগ যাতে বাধাগ্রস্ত হয়, তাই বিদেশীদের হত্যা করা হচ্ছে।
তোফায়েল বলেন, বিএনপি জাতীয় ঐক্যের কথা বলে, আবার কল্যাণপুর ও হলি আর্টিজানের হামলাকারীদের সবাই জঙ্গি নয় বলেও প্রচার চালায়।
তিনি বলেন, যে জঙ্গিরা মারা গেল, তাদের বাবা-মা’রা সন্তানের লাশ পর্যন্ত নিয়ে আসছে না, অথচ বিএনপির দরদ ও জ্বলন কমছে না। এতেই বোঝা যায়, এর মানে কি?
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশবাসী এখন সহজেই বুঝতে পারে, কারা এবং কেন রাজপথ দখল করে যানবাহনে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে, গাছ কেটে অবরোধ দিয়ে বোমা হামলা চালিয়ে মাসের পর মাস নিরিহ মানুয়ের উপর নির্যাতন চালিয়েছে। আর আজকের জঙ্গি হামলাকারিরা কারা, সেটাও তাদের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ৭১’এ যেমন ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলতে বলেছিলেন, তেমনি বর্তমানে তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে জঙ্গি নির্মূলে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা হয়েছে। এ দুর্গই এ বাংলাদেশকে জঙ্গিমুক্ত করবে, ইনশাল্লাহ।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সায়েন্সল্যাব এলাকা থেকে সিটি কলেজ সরিয়ে নেওয়ার দাবি ঢাকা কলেজের
ঢাকার সায়েন্সল্যাব মোড় এলাকায় ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদেরবিস্তারিত পড়ুন
ড. ইউনূস: আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা চাকরিপ্রার্থী তৈরি করে, এটি ত্রুটিপূর্ণ
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “মানুষ জন্মগতভাবে উদ্যোক্তা।বিস্তারিত পড়ুন
আইসিটি অধ্যাদেশ অনুমোদন, ধারণ করা যাবে বিচার প্রক্রিয়ার অডিও-ভিডিও
‘‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪’’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনবিস্তারিত পড়ুন