২ সন্তান খুন : অপরাধ বিজ্ঞানীরা কী বলছেন?

রাজধানীর বনশ্রীতে নিজের দু’সন্তানকে হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় দেশ জুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্নভাবে অনেকেরই প্রশ্ন একটাই, কিভাবে সম্ভব? আবার অনেকে মা জেসমিনের মানসিক সুস্থ্যতার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে র্যাব বলছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাকে সুস্থ্যই মনে হয়েছে।
পুলিশের জিজ্ঞাসবাদের সময়ও তিনি অপ্রকৃতস্থ বা অসংলগ্ন কোনো আচরণ করেননি বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তাহলে এ হত্যাকাণ্ডটি আসলেই কিভাবে সম্ভব? কিভাবে সম্ভব শত প্রতিকূলতায় মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল মায়ের দ্বারা হত্যার শিকার হওয়া?
অপরাধ ও সমাজ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান মনে করছেন, সামাজিক, পারিবারিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এবং পারিবারিক বন্ধনে দৃঢ়তা না থাকার কারণে শিশুদের প্রতি নৃশংসতার মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলছে। অনেক ক্ষেত্রে সমাজে দুর্বল শ্রেণি হওয়া ও আইনের শাসনের অভাবেও কোথাও কোথাও শিশু হত্যার মতো জঘন্য ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন তিনি।
তবে র্যাবের সংবাদ সম্মেলনের পর জেসমিনের ভাই জাকির হোসেন সরকার বলেছেন, ‘জেসমিন তার সন্তানদের খুব ভালবাসতো। র্যাব বললেও আমার বোন তো নিজে সবার সামনে বলেনি যে সে তার সন্তানদের হত্যা করেছে।’ তার বোন সন্তানদের হত্যা করতে পারেন না বলেও দাবি জাকির হোসেনের।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমরা এক ধরনের সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতি, পাশ্চাত্যের মূল্যবোধগুলোর আংশিক বা বিকৃতভাবে গ্রহণ করছি আমরা। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের বিস্তার ঘটছে। মা বা বাবা কোন অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে সন্তানরা তা জেনে গেলে তাদের হত্যা করা হচ্ছে। একসঙ্গে একাধিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে ছেলেমেয়েরাও।’
তিনি আরো বলেন, ‘চারপাশে বিভিন্ন ধরনের ঝুকির উপাদান ছড়িয়ে রয়েছে। ক্ষমতায়ন বা স্বাধীনতার সঠিক ধারণা না থাকায় এগুলোর অপব্যবহার করা হচ্ছে। মাদকের প্রভাবের কারণে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। মাদকাসক্ত মা বা বাবা সন্তানকে মেরে ফেলছে। রয়েছে সামাজিক অস্থিরতা। দ্রুত ধনী হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এক ধরনের অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা চলছে। সামাজিক ন্যায় বিচার, অনুশাসন কিছুই কাজ করছে না। ক্রান্তিকালীন সব সমাজেই এই ধরনের অস্থিরতা দেখা দেয়।’ তবে আগামী ২০-২৫ বছরের মধ্যে সমাজ থেকে এই ধরনের অস্থিরতা দূর হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী তিনি।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকেলে রামপুরার বনশ্রীর এলাকার ‘বি’ ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর বাড়িতে এক সঙ্গে নারকীয় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় ১৪ বছর বয়সী বোন নুসরাত আমান অরণী ও ৬ বছর বয়সী তার ছোট ভাই আলভী আমান। পরিবার খাবারে বিষক্রিয়ায় দুই শিশুর মৃত্যুর কথা বললেও ময়নাতদন্তে হত্যার আলামত পাওয়ার পর তিন দিন আগের এ ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এরপর র্যাব-পুলিশ ঘটনার তদন্তে মাঠে নামে।
ঘটনার তিন দিন পর দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা র্যাবের কাছে স্বীকার করেন নিহত শিশুদের গর্ভধারিণী মা মাহফুজা মালেক জেসমিন। সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তার ও অস্থিরতা থেকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানোর কথা বলছেন মা জেসমিন। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে র্যাবের কাছে মায়ের স্বীকারোক্তি দেয়ার পর বাবা আমানুল্লাহ একমাত্র জেসমিনকে আসামি করে শুক্রবার রাত মামলা করেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

ব্যাংকক থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদবিস্তারিত পড়ুন

বিশ্বকবির ম্যুরাল থেকে কালি মুছে দিল উপজেলা প্রশাসন
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ম্যুরালে কালি দিয়ে মুখবিস্তারিত পড়ুন

ফখরুল: ইউনূস–মোদির বৈঠক আশার আলো দেখাচ্ছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন