৩৪০৩ কেন্দ্রের মধ্যে ১১৮৪টি ঝুঁকিপূর্ণ
পৌরসভা নির্বাচনে সারাদেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে দলীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। দলগুলোর একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় আন্তঃকোন্দলের কারণে সহিংসতাও হতে পারে।
এ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রগুলোর প্রায় ৩৫ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সারাদেশে ২৩৩টি পৌরসভা নির্বাচনে ৩ হাজার ৪০৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ১৮৪টিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে খুলনা বিভাগের পৌরসভাগুলো।
এ বিভাগের ৪১ ভাগ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকি বিবেচনায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রংপুর বিভাগ। পুলিশের এক গোপন প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের জয়ী করা এবং নির্বাচন বিতর্কিত করা ও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে বিএনপি, জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীরা নাশকতা ও গোলাযোগ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোন্দল ও বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় তারাও গোলাযোগ করতে পারে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
তবে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, কমিশনের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র বলতে কিছু নেই। এগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকি। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে আটজন অস্ত্রধারীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২০ সদস্য মোতায়েন থাকবে।
তিনি বলেন, পৌর নির্বাচনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় র্যাব, পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হবে। এছাড়া জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবেন।
প্রতিবেদনে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হয়েছে, ২৩৩ পৌরসভায় মোট ৩ হাজার ৪০৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ১৮৪টি। শতকরা হিসাবে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৩৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা খুলনা বিভাগের ৪৭১টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৯৫টিই ঝুঁকিপূর্ণ।
ঝুঁকি বিবেচনায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রংপুর বিভাগের ৩০৪ কেন্দ্রের মধ্যে ১১৮টি ঝুঁকিপূর্ণ। তৃতীয় অবস্থানে বরিশাল বিভাগ। এ বিভাগে ১৬৭ কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৬৩টি । চতুর্থ অবস্থানে থাকা চট্টগ্রাম বিভাগের ৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৬৯টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ।
পঞ্চম অবস্থানে ঢাকা বিভাগ। এ বিভাগে ৯৯১ কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৩৪৮টি। ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা রাজশাহী বিভাগের ৮০১ কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ২৪৬ট। সবচেয়ে কম ঝুঁকিতে সিলেট বিভাগ। এ বিভাগের ১৮৯ কেন্দ্রের মধ্যে ৪৫টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় রেখে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, কেন্দ্রের আশপাশে প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তির বসতবাড়ি ও প্রভাবাধীন এলাকা হলে, প্রার্থীর বাড়ির সন্নিকটে কেন্দ্র হলে, কোন দল বা গোষ্ঠীর প্রভাবাধীন এলাকার কেন্দ্রগুলো, যাতায়াতে দুর্গম এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া বিগত নির্বাচনে সহিংসতা হলে সেগুলোকেও ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়।
সূত্র আরও জানান, খুলনাঞ্চলে চরমপন্থীদের আনাগোনা রয়েছে। বরিশাল অঞ্চলে বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে সহিংসতার পরিমাণ বেশি ছিল। উত্তরাঞ্চলে জামায়াত-শিবিরের প্রভাব ও জঙ্গিদের তৎপরতা বেশি।
গত ১৯ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে পৌর নির্বাচনে সভা-সমাবেশে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করা হয়। বিশেষ করে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের জন্য বলেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। ওই বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ সংশ্লিষ্টদের যেকোনো ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
গোলাযোগের শঙ্কা : পৌর নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলো গোলাযোগ, সহিংসতা ও নাশকতা করতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে পাঁচটি শঙ্কার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপি, জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীরা তাদের প্রার্থীদের নির্বাচনে জয়লাভ করানোর উদ্দেশ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভোট কেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে নাশকতা বা গোলাযোগ সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাতে পারে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও একচেটিয়া ভোট লাভের চেষ্টায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সমর্থিত প্রার্থীরা কতিপয় কেন্দ্রে গোলাযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
নির্বাচনকে বিতর্কিত কিংবা রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে বিএনপি-জামায়াত গোলাযোগ সৃষ্টি করতে পারে। ভোটগ্রহণ পরবর্তীতে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে বা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে এলাকায় গোলাযোগ সৃষ্টি করতে পারে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র এলাকায় গোলাযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
সারাদেশে হামলার শঙ্কা : প্রতিবেদনে মন্তব্য হিসেবে বলা হয়েছে, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে দলীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন পৌরসভায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী (বিদ্রোহী) থাকায় অন্তঃকোন্দলের কারণে বিভিন্ন কেন্দ্রে সহিংসতা হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় উগ্রপন্থী গোষ্ঠী দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কেন্দ্রে গোলাযোগ করতে পারে।
বাড়তি সতর্কতার সুপারিশ : পৌর নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা জোরদার করার পাশাপাশি ভোটগ্রহণের ৪৮ ঘন্টা আগ থেকে নির্বাচন শেষ হওয়ার ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত রাখা যেতে পারে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ভোট গ্রহণের আগ থেকে নির্বাচনের পর পর্যন্ত সার্বক্ষনিক ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২৩৩ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সারাদেশে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯২৩ জন । তবে ফেনী জেলার পরশুরাম পৌরসভায় মেয়র ও কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী থাকায় সেখানে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না। এ ছাড়া ছয় পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন