৪০০ কোটি টাকার কর্মযজ্ঞ
আসন্ন পৌর নির্বাচনকে ঘিরে অর্থনীতিতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার কর্মযজ্ঞ সৃষ্টি হয়েছে। ২৩৪টি পৌরসভার তিনটি পদের ১২ হাজার ৪৫ জন প্রার্থীর ব্যয় ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন পরিচালনার জন্য এই টাকা খরচ হবে। আর ভোটারদের কাছে টানতে প্রার্থীরা গোপনে যে টাকা ব্যয় করবেন, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই।
মোটা অঙ্কের এই অর্থ গ্রাম-গঞ্জেই বেশি ব্যয় হবে। তাই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে সুবাতাস লেগেছে বলে মনে করেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, স্থানীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোই কেবল চাঙ্গা হয় না; পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে হবে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য। অন্যদিকে প্রার্থীদের অধিকাংশই ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি। ফলে টাকার বিনিময় নিজের জয় নিশ্চিত করার চেষ্টা করবেন প্রার্থীরা।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী নিয়ম অনুযায়ী ১২ হাজার ৪৫ জন প্রার্থী বৈধভাবে খরচ করতে পারবেন ২৯০ কোটি টাকা। মেয়র প্রার্থীদের ব্যক্তিগতভাবে সর্বোচ্চ ব্যয় ৫০ হাজার এবং নির্বাচনী ব্যয়সীমা ৫ লাখ টাকা। অন্যদিকে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ব্যয় ১৫ হাজার টাকা এবং নির্বাচন পরিচালনার জন্য ২ লাখ টাকা।
এদিকে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনার জন্য ব্যয় বরাদ্দ রেখেছে ১০০ কোটি টাকা, যার অধিকাংশই ব্যয় হবে স্থানীয় প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও যানবাহন খাতে। সব মিলিয়ে বৈধ পথেই ব্যয় হবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।
বিভিন্ন সংস্থার জরিপ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ইসির বেঁধে দেওয়া ব্যয়ের সীমা মানেন না অধিকাংশ প্রার্থী। প্রার্থীরা অতিরিক্ত পোস্টার, মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা (এসএমএস) ও ভোটারদের মন জয় করতে উপহার সামগ্রি কিংবা নগদ অর্থ প্রদান করেন। আর এসব খাতের হিসাব করলে প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের নির্বাচন হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, এ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে গ্রামীণ অর্থনীতি ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। গ্রাম-গঞ্জের মানুষের হাতে টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে। একইসঙ্গে অন্যান্য সময়ের চেয়ে ব্যাংকগুলোর গ্রামের শাখায় টাকার চাহিদা বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচন পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ইসি যত বিধি-নিষেধই জারি করুক না কেন, বাস্তব হচ্ছে এই নির্বাচন হবে ভীষণ ব্যয়বহুল। নির্বাচন কমিশন পুরো নির্বাচন করতে শত কোটি টাকা খরচ করবে।
আর এর সুবিধাভোগী হবে কাগজের ব্যবসায়ী, রং-তুলির ব্যবসায়ী, বাইন্ডার, প্রিন্টাররা। হবে ভোটার বাক্স তৈরির কারখানাগুলো। ব্যবসা পাবে পেট্রোল-ডিজেল, অকটেন ও গ্যাস ব্যবসায়ীরা। প্রচুর গাড়ি ডিউটি দেবে পুলিশের, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। এই উপলক্ষে স্থানীয় পেট্রোল-গ্যাস স্টেশনগুলোর ব্যবসা জমবে বেশ ভালো।
পৌর নির্বাচন উপলক্ষে মুদ্রণশিল্পে বেশ চাঙ্গাভাব দেখা গেছে। নির্বাচনে মাইকের ব্যবসাও থাকে জমজমাট। সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন কয়েক হাজার মাইক ভাড়া দেওয়া হয়। যার সঠিক হিসাব প্রার্থী দেন না।
এ ছাড়াও নির্বাচনের কারণে মোবাইল ফোনের ব্যবহার বেড়ে যায়, পান-বিড়ি-সিগারেট ও চায়ের কদর অনেক বেড়ে যায়। আবার খণ্ডকালীন কর্মসংস্থানের সূযোগ হয় বেকারদের।
কয়েকজন জেলা প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পৌর নির্বাচনের প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ভোটারদের বিভিন্ন উপহার সামগ্রি ও নগদ অর্থ প্রদান করছেন। আবার কোনো কোনো প্রার্থী পরোক্ষভাবে ভুরিভোজ, নানা ধরনের পার্টি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করেছেন। তবে অবৈধভাবে এই অর্থ ব্যয় হলেও গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।
ইসির বেঁধে দেওয়া ব্যয়সীমার চেয়ে প্রার্থীরা প্রায় দশগুণ বেশি ব্যয় করেন বলে দাবি করেছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিপপের চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। তিনি বলেন, ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণের জন্য প্রার্থী বেশি অর্থ ব্যয় করেন। আবার ক্ষমতায় গেলে সেসব অর্থ আয় করে নেন।
এ প্রসঙ্গে মুঠফোনে কথা হয় প্রাক্তন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এটিএম শামসুল হুদার সঙ্গে। তিনি বলেন, যেসব এলাকায় নির্বাচন হবে সেসব এলাকায় উৎসব বিরাজ করে। একইসঙ্গে সেসব এলাকায় অর্থের প্রবাহ বাড়ে। তবে প্রার্থীরা নির্ধারিত ব্যয়ের চেয়ে বেশি ব্যয় করেন।
এ ব্যাপারে ইসিকে আরো কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন প্রাক্তন এই সিইসি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন