বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানার অভ্যন্তরে বসবাসকারীরা ছিল ভারতীয় পরিচয়ে। সেই ১৯৪৭ সালেই ছিটকে পড়েছিল তারা নিজ দেশ থেকে। যাদের না ছিল দেশ, না ছিল পরিচয়, না ছিল ভোটাধিকার।

র্দীঘ ৬৮ বছরের অবরুদ্ধ জীবনের অবসানের পর এবার প্রথমবারের মতো আগামী ৩১ অক্টোবর নতুন বাংলাদেশি হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বিলুপ্ত ছিটের অধিবাসীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, লালমনিরহাট জেলার তিনটি উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহলে ভোট উৎসবের আমেজ। সবার মুখে এখন ভোট আর ভোট। প্রার্থীদের শত শত পোস্টার ঝুলছে গ্রামগঞ্জের হাট-বাজারসহ বিভিন্ন সড়কে। চায়ের দোকানে চলছে ভোটের গুঞ্জন। প্রার্থীরা ভোট চাইতে বিলুপ্ত ছিটের অধিবাসীদের দিকে বেশি ঝুঁকছেন।

পাটগ্রাম উপজেলার জগতবেড় ইউনিয়নের চার বারের ইউপি চেয়ারম্যান নবিয়ার রহমান এবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোতে উন্নয়নের অঙ্গীকার করে গণসংযোগ এবং প্রচারণা শুরু করেন।

এদিকে, সাবেক তিন ছিটমহলবাসী নিজেরাই ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তাদের একজন ছিটমহল বিনিময়ের সাবেক নেতা আজিজুল ইসলাম হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য প্রার্থী।

পাটগ্রামের শ্রীরামপুর ইউনিয়নের বিলুপ্ত ১১৬ নম্বর ভোটবাড়ীর বাসিন্দা মোজাহারুল ইসলাম পাতু এবং ১১৭ নম্বর বিলুপ্ত ভোটবাড়ী ছিটের বাসিন্দা আবু বক্কর সিদ্দিকও সাধারণ সদস্য প্রার্থী হিসেবে নেমেছেন ভোটযুদ্ধে।

জানা গেছে, দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় তফসিল ঘোষণা করা হলেও পরবর্তী সময় তা স্থগিত করা হয়। এরপর বিলুপ্ত ছিটমহলের অধিবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তসহ জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার পর নতুন করে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হয়।

তফসিল অনুযায়ী লালমনিরহাটের তিন উপজেলার ছিটমহলভুক্ত ৯টি ইউনিয়নে এবার ভোটগ্রহণের কথা থাকলেও একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত আবারও একটি ইউনিয়নের তফসিল স্থগিত করা হয়।

ফলে লালমনিরহাট সদরের কুলাঘাট, হাতীবান্ধার গোতামারী, পাটগ্রামের বুড়িমারী, শ্রীরামপুর, জগতবেড়, কুচলীবাড়ি, জোংড়া ও পাটগ্রাম ইউনিয়নে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ভোট হতে যাচ্ছে।

পাটগ্রাম উপজেলার ১১৯ নং বাঁশকাটা বিলুপ্ত ছিটমহলের নজরুল ইসলাম (৪০) বলেন, প্রথমবারের মতো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে যাচ্ছি। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিব যেন কেউ ছিনিয়ে নিতে না পারে এটাই আশা করি।

হাতীবান্ধা উপজেলার উত্তর গোতামারী বিলুপ্ত ছিট মহলেন ছকবার আলী (৭৫) বলেন, বছরের পর বছর ভোট দেখে এসেছি দিতে পারিনি। এবার দেশের নাগরিক হিসেবে ভোট দিব। অনেক আনন্দ লাগছে।