৮২ বছরে পা দিল টেলিভিশন
আজ বিশ্ব টেলিভিশন দিবস। ১৯৯৬ সনের ২১ নভেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক আয়োজিত এক ফোরামে এই দিনটি বিশ্ব টেলিভিশন দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে বৈদ্যুতিক সংকেতের মাধ্যমে দূরবর্তী ছবি দেখার সুযোগ সৃষ্ট হয় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও তত্কালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে। রুশী বংশভূত মার্কিন বিজ্ঞানী ব্লাদিমীর ১৯৩৩ সনে টিলিভিশনের ক্যাথোড প্রনালী আবিষ্কার করেন যা এখন পর্যন্ত টেলিভিশনের অন্যতম একটি অংশ বলে বিবেচিত। আজ ৮২ বছরে পা দিল বিজ্ঞানের এই অমূল্য আবিষ্কার টেলিভিশন।
ফিরে দেখা টেলিভিশন আবিষ্কারের রূপকথা…
১৮৫৭ সালে এ্যাডওয়ার্ড লিওন স্কট ডি মার্টিনভিল শব্দ রেকর্ড করতে সক্ষম হলেন। কাগজে রেকর্ড হল শব্দ। কিন্তু রেকর্ড করা সেই শব্দ শুনার ব্যাবস্থা করা গেল না। ১৮৯৪ সালে কলকাতার টাউন হলে জগদীশ চন্দ্র বসু বিনা তারে তরঙ্গ পাঠিয়ে অদূরবর্তী একটি ঘন্টা বাজিয়ে দেখান সবাইকে। কিন্তু এর পেটেন্ট তিনি করেননি।
১৮৯৫ সালে মার্কনী একটি যন্ত্র তৈরী করেন যা ২.৪ কি.মি. দূর পর্যন্ত তরঙ্গ পাঠাতে পারে। পরে ১৯০০ সালে মার্কনী রেডিওর পেটেন্ট করে নেন। তাই জগদীশ বাবু আবিষ্কারক হয়েও পেটেন্ট না করায় তাঁকে অফিসিয়ালি রেডিওর আবিষ্কারক বলা হয় না। যাই হোক রেডিওর মাধ্যমে কথা ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হল দূর থেকে দূরে।
মানব সভ্যতার প্রথম বিস্ময়কর যন্ত্র রেডিও। ১৮৩২ সালে হারকিউলিস ফ্লোরেন্স ক্যামেরার ছবি ধরে রাখা নিয়ে কাজ করেন। যদিও তিনি তা প্রকাশ করে যাননি। ১৮৮৪ সালে ২৩ বছরের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ধারণা করে যে ভিডিও সিগনাল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠানো সম্ভব। পল গটলায়েব নিপকো নামের সেই ছেলেটি তখন এর পেটেন্টও করে ফেলে। কিন্তু তখন পর্যন্ত এম্পিফাইড টিওব তৈরী না হওয়াতে কিছুতেই তিনি পেটেন্টে করা যন্ত্র বানাতে সক্ষম হননি। পরে নিপকোর’র ধারনা অনুযায়ী কাজ শুরু করেন স্কটিশ বিজ্ঞানী জন লজি বিয়ার্ড।
১৯২৫ সালে তিনি লন্ডনে টেলিভিশনের প্রথম ছবিটি দেখাতে সক্ষম হন। তারহীন শব্দ পাঠিয়ে মার্কনী যে রেডিও আবিষ্কার করেছিলেন ১৯০০ সালে তা তো আর নতুন করে আবিষ্কার করার কিছু নাই। লজি বিয়ার্ড তারহীন ছবিও পাঠাতে পারলেন। এখন অপেক্ষা শুরু হলো ছবি ও শব্দের সমন্বয়ে একটা যন্ত্র কে বানাবে।
ফিলু ফার্ণসওর্থ নামের মাত্র ২১ বছরের এক মার্কিন বিজ্ঞানী তা করে দেখালেন। বেশীরভাগ মানুষই লজি বিয়ার্ডকে টেলিভিশনের আবিষ্কারক জানেন। কথা সত্য। কিন্তু বাস্তব টেলিভিশন বলতে যা বুঝায় তার জনক বলে কেউ কেউ মনে করেন ফার্ণসওর্থকে। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে তিনি স্বপ্ন দেখতেন একটা কাঁচের বাক্সে আলো ধরে তা অন্য বাক্সে কিভাবে পাঠানো যায়। তাঁর সেই স্বপ্ন আজ রঙ্গীণ হয়ে ধরা দেয় কোটি কোটি ঘরে।
এবার আসা যাক বাংলাদেশে টেলিভিশনের অবস্থা ও অবস্থান…
সরকারিভাবে বাংলাদেশে টেলিভিশনের যাত্রা শুরু ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর৷ সেসময় টেলিভিশনে সাদা কালো অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হতো।
এরপর টেলিভিশনে রঙিন অনুষ্ঠান প্রচার শুরু হয় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে ১৯৮০ সালে। ২০০৪ সালে বিটিভি বিশ্বব্যাপী সম্প্রচার শুরু করে বিটিভি ওয়ার্ল্ড এর মাধ্যমে।
আমাদের দেশে ধারাবাহিকভাবে টেলিভিশনের দর্শক সংখ্যা শহর ও গ্রামে বাড়ছে। ন্যাশনাল মিডিয়া সার্ভে থেকে দেশে টেলিভিশন দর্শকদের সম্পর্কে জানা যায়। আমাদের দেশে প্রথম ন্যাশনাল মিডিয়া সার্ভে পরিচালিত হয় ১৯৯৫ সালে।
এরপর ১৯৯৮ সালে দ্বিতীয়, ২০০২ সালে তৃতীয় এবং ২০০৫ সালে চতুর্থ মিডিয়া সার্ভে পরিচালিত হয়েছে। এই মিডিয়া সার্ভেগুলোর মাধ্যমে আমাদের দেশের প্রচলিত মিডিয়াগুলোর দর্শকপ্রিয়তা এবং কোন ধরনের জনগোষ্ঠীর কাছে কোন ধরনের মিডিয়ার চাহিদা বেশি ও তাদের মার্কেটিং ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানা সম্ভব হয়।
সর্বশেষ মিডিয়া সার্ভে থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের শহর এলাকার প্রায় ৭৮ শতাংশ বাড়িতে এবং গ্রাম এলাকার ২৭ শতাংশ বাড়িতে টেলিভিশন আছে।
এদের মধ্যে ২৬ শতাংশ বাড়িতে রয়েছে শাদা কালো টেলিভিশন। যাদের বাড়িতে টেলিভিশন আছে এমন প্রায় ১১
শতাংশ বাড়িতে কেবল বা ডিশ কানেকশন রয়েছে। একই জরিপ থেকে আরো জানা যায়, বাংলাদেশে টেলিভিশনের দর্শক সংখ্যা ১৯৯৮ সালের তুলনায় বেড়েছে দেড় গুণ এবং ১৯৯৫ সালের তুলনায় বেড়েছে দুই গুণ।
সব শেষ বলা যায়, টেলিভিশন আছে, টেলিভিশন দিবস আছে কিন্তু আমাদের কি টেলিভিশনকে যথার্থ ব্যাবহার করার স্বপ্ন আছে?
যারা টেলিভিশনের সংবাদ ও অনুষ্ঠানের পথ প্রদর্শক তাঁরা যেন এই দিনে আবার নতুন করে ভাবেন নতুন কোন এক দিগন্তের।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন