আইভীর পক্ষে নামতেই হবে শামীমকে
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে স্থানীয় ওসমান পরিবারের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী চুনকা পরিবার। এই দুই পরিবারের দুই সদস্য শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরোধ-বিবাদ-বিসম্বাদ দেশজুড়ে এক আলোচিত বিষয়। এতে কে বিজয়ী আর কে পরাজিত সেটি নির্ধারণ করা কঠিন হলেও নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতিতে যে সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে বারবার পরাজিত হয়েছেন শামীম ওসমান, সেটি হলফ করে বলা যায়।
সেই নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন থেকে জয়জয়কার সেলিনা হায়াৎ আইভীর। পৌর মেয়র কিংবা পরবর্তী সময়ে সিটি মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে আইভীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেও কোনো ফায়দা করতে পারেননি শামীম ওসমান। সর্বশেষ এই দ্বিতীয়বারের সিটি নির্বাচনেও একই অবস্থা ওসমান পরিবারের। তবে এবার বরং বলা যায় উভয় সংকটে পড়েছেন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।
নারায়ণগঞ্জে ধীরে হলেও ওসমান পরিবারের প্রভাব কিছুটা ক্ষয়িষ্ণু। সেলিনা হায়াৎ আইভী টানা দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হলে নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের প্রভাব আরও কমতে পারে বলছে স্থানীয় লোকজন। আবার আইভী পরাজিত হলে এর দায় পড়বে শামীম ওসমানদের ওপর। তাতে দলে কোণঠাসা হয়ে যাবেন শামীম ওসমান।
শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াৎ আইভীর দ্বন্দ্ব তূষের আগুনের মতো সব সময় জ্বলতে থাকে। বিভিন্ন সময় পরিবেশ পেয়ে সেটি বেরিয়ে আসে। এবারের সিটি নির্বাচন সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জে শামীম-আইভী বিরোধ ফের প্রকাশ্যে এলো।
২০১১ সালে আইভীর কাছে লাখের বেশি ভোটে হেরে গিয়ে ফুঁসে উঠেছিলেন শামীম ওসমান। আইভীর বিরুদ্ধে শামীম ও তার অনুসারীদের ঘুষ-দুর্নীতির নানা লিখিত অভিযোগ এবং টিভি টক-শোতে এই দুই নেতার মধ্যে হাতাহাতির উপক্রম হওয়ার দৃশ্যও জাতি দেখেছেন। এমন অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আইভী বিজয়ী হলে ওসমান পরিবারের প্রভাব আরও কমতে পারে এমন শঙ্কা করছেন ওসমান পরিবারের সদস্যরা।
অন্যদিকে, মেয়র প্রার্থী আইভী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান যাতে মিলেমিশে নির্বাচন করেন সেজন্য কেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে আওয়ামী লীগে। ইতিমধ্যে এ উদ্যোগ সফলও হয়েছে বলে মনে করছেন দলের নেতারা। তাদের ধারণা খুব শিগগির আইভীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে নামবেন শামীম ওসমান।’
নেতারা বলেন, কেন্দ্রের সর্বোচ্চ মহল থেকে দেওয়া এই নির্দেশনা শামীম ওসমানের পক্ষে অমান্য করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তিনি যদি অমান্য করেন তাহলে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে, যা আর কখনো পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না শামীম ওসমানের জন্য। এমন পরিস্থিতিতে আইভী যদি পরাজিত হন তাহলে তার দায়ভারও নিতে হতে পারে তাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন শামীম ওসমানের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। এ পরীক্ষায় শামীম ওসমানের ‘ফেল’ করার সুযোগ নাই। অবশ্যই শামীম ওসমানকে আইভীর পক্ষে প্রকাশ্য হতে হবে এবং তার বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। যদি এর ব্যত্যয় ঘটে তাহলে দল কঠোর ব্যবস্থা নেবে।’
শামীম ওসমানের জন্য অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে- হয় পৈতৃক সূত্রে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কারো নির্বাচনে কাজ করতে হবে, নয়তো দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করার দুঃসাহস দেখাতে হবে। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিলে স্থানীয় রাজনীতিতে নিজের অবস্থান ও অনুসারীদের ধরে রাখা মুশকিল হতে পারে, অন্যদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে দল।
অন্যদিকে শামীম-আইভীর বিরোধ মিটাতে কাজ করছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। গতকাল (সোমবার) রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বাসভবনে শামীম ওসমানের সঙ্গে একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও হয়েছে। সেখানে শামীমকে আইভীর পক্ষে কাজ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শামীম, আইভীসহ নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক জেলার রাজনীতি দেখভালের দায়িত্বে থাকা ডা. দীপু মনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। আওয়ামী লীগের সবাইকে তার পক্ষে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে আইভী নৌকার প্রার্থী। এখানে অমুক-তমুক বা শামীম ওসমানকে কাজ করার জন্য বলতে হবে কেন? আইভী আওয়ামী লীগের প্রার্থী, সবাই তার জন্য কাজ করবেন।’
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেউ যাদি যায়, তাকে অবশ্যই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাদে শাস্তি পেতে হবে।’
সিটি নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে যে তিনজনের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল, সেই তালিকায় নাম ছিল না বর্তমান মেয়র আইভীর। অবশ্য তাদের অবস্থান উপেক্ষা করে কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তাকেই। যাদের নাম পাঠানো হয়েছিল তারা হলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান এবং বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ রশিদ। তারা সবাই শামীম ওসমানের ঘরানার মানুষ বলে পরিচিত। তবে গত নির্বাচনে আইভীর প্রচার কমিটির সদস্যসচিব ছিলেন আনোয়ার হোসেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন
হাসিনার পতনে জাতির মনোজগত পরিবর্তন হয়েছে, নতুন রাজনীতি হতে হবে স্বচ্ছ: আমীর খসরু
দেশের মানুষের মনোবাসনা বুঝে স্বচ্ছ রাজনীতির আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ীবিস্তারিত পড়ুন
বগুড়ায় হাসিনা-কাদেরের বিরুদ্ধে আরও এক মামলা
বগুড়ায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৫৭ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার রাতে বগুড়া সদর থানায় গাবতলীর নিহত বিএনপি নেতা জিল্লুর রহমানের স্ত্রী খাদিজা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে গিয়ে সংঘর্ষের সময় শহরের ঝাউতলা এলাকায় নিহত হনবিস্তারিত পড়ুন