আন্দোলনে বিভক্তি, আসছে প্রতিহতের ঘোষণাও
বিভক্ত পড়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন। একেক সময় একেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচিতে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে সাধারণ আন্দোলনকারীরা। এমনকি একটি পক্ষ আন্দোলন প্রতিহক করারও ঘোষণা দিয়েছে।
‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ যে নামে প্রথমে এ আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তার নেতারাও দূরে সরে গেছেন। এর মধ্যে শুক্রবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন একপক্ষ আন্দোলন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়ে, আন্দোলন প্রতিহত করারও ঘোষণা দিয়েছে। আবার আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও বক্তব্য রাখছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্র সংগঠনও নানাভাবে আন্দোলনকে প্রভাবিত করছে বলেও জানা গেছে। এমতাবস্থায় আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং রাতে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার “আরোপিত ভ্যাট শিক্ষার্থীরা না; দেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ” বক্তব্যের পর থেকেই আন্দোলন দ্বিধা বিভক্তির মাঝে পড়ে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত আন্দোলন চলমান বলেও জানান তারা।
এদিকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এ বক্তব্যের বিরুদ্ধাচারণ করেছেন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি বলেন, ‘আমরা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ও ট্রাস্টি বোর্ডের অধীনে পরিচালিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা উচ্চশিক্ষা দেয়, কোন ব্যবসা করি। কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি অন্য কোনো ব্যবসাও করি না। কীভাবে ভ্যাটের অর্থ পরিশোধ করবো? ঐ টাকা তো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই নিতে হবে।’
এদিকে, আন্দোলনের কর্মসূচি কী হতে পারে- এ বিষয়ে জানতে শুক্রবার সকালে ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’র সম্বনয়ক ফারহান কবির বলেন, ‘ভাই, আমি আসলে আন্দোলনের বিষয়ে কিছুই জানি না। আমি নিজেও আর দশটা সাধারণ শিক্ষার্থীর মতো বৃহস্পতিবার আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি বা পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই।’
আন্দোলনের সূত্রপাত আপনারা ঘটিয়েছিলেন, এখন কেন দূরত্ব- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন তো ক্যাম্পাসভিত্তিক আন্দোলন হচ্ছে, সেজন্য যে যার মতো করে কর্মসূচি দিচ্ছেন। তবে আন্দোলন যে রূপেই হোক না কেন- সফল হওয়াটাই বড়।’
সেই সঙ্গে শুক্রবার দুপুরে একটি অনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র কল্যাণ ফাউন্ডেশন। তারাও শুরু থেকেই ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি আসাদুজ্জামান রনো বলেন, ‘গত দুই দিন (বুধ ও বৃহস্পতিবার) ভ্যাট প্রতিরোধে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুম ছেড়ে মাঠে নেমে এসেছে। আমাদেরকে মালিকপক্ষ ভুল বুঝিয়ে রাস্তায় নামিয়েছে। মালিকপক্ষের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে আমাদেরই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পুলিশের রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জের শিকার হয়েছেন। যেহেতু শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার ভ্যাট দিতে হবে না এবং টিউশন ফিও বাড়বে না- সরকারের এমন ঘোষণা প্রেক্ষিতে আমরা সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলন প্রত্যাহার করছি। এরপর যদি কেউ আন্দোলন করতে চায় বা বা উস্কানি দেয় তবে বুঝতে হবে নিঃসন্দেহে স্বার্থান্বেষী মহল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে নিজেদের নীল নকশা বাস্তবায়ন করতে চায়।’
অন্যদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কেউ বিচ্ছিন্ন আন্দোলন করলে এটা তার ব্যাপার। ওটা প্রতিহত করার জন্য কোনো উদ্যোগ বা কর্মসূচি দিতে হলে আমরা অবশ্যই দেব।’
আন্দোলনের এই বিভক্তির মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুইটি পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে পৃথক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
শুক্রবার সকালে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। এরপর তারা একটি সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি কাকন বিশ্বাস বলেন, ‘ভ্যাট প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত স্ব স্ব ক্যাম্পাসে ধর্মঘট ও অবস্থান কর্মসূচি করা হবে।’ ঐ সময় তিনি জানান, তাদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে স্ট্যামফোর্ড, স্টেট, এশিয়া প্যাসিফিক, ইউল্যাব, ইউআইইউ ও ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়।
এর কিছুক্ষণ দুপুরে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়েরর ধানমন্ডি ক্যাম্পাসে আরেক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক জ্যোর্তিময় চক্রবর্তী ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে শনি থেকে সোমবার পর্যন্ত টানা তিন দিনের ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেন। তিনি জানান, দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে এই ধর্মঘট চলবে।
এদিকে, ক্রমশই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন দলীয় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।
শুক্রবারও আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ এ আন্দোলনে বিএনপি ইন্ধন যোগাচ্ছে বলে দাবি করে বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে কারা ইন্ধন যোগাচ্ছে এটা আমরা জানি। ছদ্মবেশীরা তাদের এ আন্দোলনে প্ররোচনা দিচ্ছে। আমি শিক্ষার্থীদের বলব, ভ্যাটের বিরুদ্ধে নয়, আন্দোলন করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অযৌক্তিক হারে টিউশন ফি বাড়ানোর বিরুদ্ধে আন্দোলন করুন।’
বিএনপির নেতারা শুক্রবার মুখ না খুললেও কথা বলেছে দলটির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল। শুক্রবার দুপুরে সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন ও সাধারণ সম্পাদক মো. আকরামুল হাসান বলেন, ‘শিক্ষা ব্যবস্থায় করারোপ নিয়ে এনবিআর এবং অর্থমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা এমন আইন করে ছাত্রসমাজকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। তা নাহলে তারা কি এটা বুঝতে অক্ষম, প্রতিষ্ঠানের উপর করারোপ করা হলে তার দায়ভার প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সবার উপরই পড়বে।’
এদিকে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ আন্দোলনের মধ্যে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র শিবিরের বেশ কয়েকটি অংশ কাজ করছে বলে জানা গেছে। তারা মূলত, আন্দোলনটিকে দলীয় করার একটি প্রয়াস করছে বলে কাছে অভিযোগ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার রাতে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে রাপা প্লাজার সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার সময় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উঠেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বিকেল সাড়ে ৪টা) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা কিংবা সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেনি। ইস্ট ওয়েস্ট, স্ট্যামফোর্ডের পাশাপাশি শুক্রবার নিজ নিজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় এবং আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রাজধানীতে আনসার ব্যাটালিয়ন মোতায়েন
ঢাকা মহানগরীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৬ প্লাটুন আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য মোতায়েনবিস্তারিত পড়ুন
ঢাবি বন্ধের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগে ধন্যবাদ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হল ছেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদেরবিস্তারিত পড়ুন
রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ আহত ২৩
রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষে ছাত্রলীগ, শিক্ষার্থী, মহিলা আওয়ামী লীগবিস্তারিত পড়ুন