শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

উচ্চশিক্ষিত তরুণরাও জঙ্গি হয় কারণে কী?

দেশে উদ্বেগজনকভাবে বিস্তারলাভ করছে ইসলামি জঙ্গি সংগঠন। একের পর এক ব্লগার খুন হচ্ছে। খুনের তালিকা প্রকাশ করছে তারা, যাতে রয়েছে বিশিষ্টজনদের নাম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা উদ্যোগেও নির্মূল করা যাচ্ছে না। বেশ কয়েকটি সংগঠনকে ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা ভিন্ন কৌশলে ভিন্ন নামে আবার সক্রিয় হচ্ছে। শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের আটকের পরও কীভাবে তারা তৎপর হচ্ছে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এসব সংগঠনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের সংশ্লিষ্টতার সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে সমাজের উচ্চ শ্রেণীর উচ্চশিক্ষিত তরুণরাও জড়িয়ে পড়ছে এসব জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে। কারা এসব তরুণ? কোন সামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে জঙ্গিবাদী হয়ে উঠছে? এদের নিয়ন্ত্রের উপায়ই বা কী? সদ্য নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্য হিসেবে এ পর্যন্ত যাদেরকে আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে যেমন আছে রিকশাচালক তেমনি আছে সমাজের উঁচু স্তরের উচ্চশিক্ষিতরাও। এদের কেউবা বিচারপতির সন্তান, কারো মা যুগ্ম সচিব, কারো বাবা সেনাবাহিনীর সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

২০১৩ সালের আগস্টে ব্লগার রাজীব হত্যার মধ্যে দিয়ে আলোচনায় আসা এই সংগঠনটির ৩০/৩৫ জন সদস্যকে ইতিমধ্যে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আটককৃত এইসব সদস্যদের সামাজিক পরিচয় পাওয়ার পর কপালে ভাঁজ পড়েছে সংশ্লিষ্টদের। ইতিপূর্বে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছয়টি (জেএমজি, হুজি, হিযবুত তাহরীর, জেএমজেবি, শাহাদাত আল হিকমাত, হুজি বি,) জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে এই বাংলাটিম সদস্যদের কাজের ধরন ও সদস্যদের মধ্যে মোটা দাগে বেশ কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

হিজবুত তাহরীর ছাড়া অন্য পাঁচটি সংগঠনের সদস্যদের অধিকাংশই কওমি মাদরাসার ছাত্র। তাদের অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তবে বাংলাটিমের সদস্যরা তাদের চেয়ে চৌকস। আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, বাংলাটিমের সদস্যরা অধিকাংশই ব্লগার এবং তারা তথ্য প্রযুক্তিতে পারদর্শী। তাদের কার্যক্রমও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক।

উচ্চবিত্তের উচ্চ শিক্ষিত সন্তানদের জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে ডিএমপির (ডিবি) এডিসি সইফুল ইসলাম বলেন, কোটি কোটি শিক্ষিত তরুণের এই দেশে খুব কম সংখ্যক শিক্ষিত তরুণই জঙ্গি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত। জড়িয়ে পড়া এসব তরুণরা যেহেতু শিক্ষিত এবং সচ্ছল পরিবারে সন্তান তাই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগও তাদের বেশি থাকে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করার এক পর্যায়ে জঙ্গিদের ফাঁদে পা ফেলে তারা।

কয়েকজনের পরিচয়
ব্লগার রাজীব হত্যায় আটক হন ফয়সাল বিন নাইম ওরফে দীপ (২২), মাকসুদুল হাসান অনিক (২৬), এহসান রেজা রুম্মন (২৩), নাঈম সিকদার ইরাদ(১৯), নাফিজ ইমতিয়াজ (২২), সাদমান ইয়াসির মাহমুদ(২০)। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম জানান, এরা প্রত্যেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান।

ব্লগার রাজীব হত্যার আটককৃত জুন্নুন সিকদার ছিলেন নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পরে তিনি ভর্তি হন দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগে।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ব্লগার অভিজিৎ হত্যায় গ্রেপ্তার শফিউর রহমান ফারাবী ছিলেন নটরডেম কলেজের ছাত্র। পরে তিনি ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর মধ্যেই জড়িয়ে পড়েন জঙ্গি সংগঠনের সাথে।

গত মাসে (মে’১৫) রাজধানীর বারিধারা থেকে আটককৃত বাংলাটিমের সদস্য আব্দুল্লাহ আল গালীব একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে ‘এ’ লেভেল পাস করেন। তার বাবা মেজর (অব.) আব্দুল্লাহ। গালীব আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য। তিনি আল কায়েদার আদলে বাংলাদেশে নতুন একটি সংগঠন তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন।

২০১৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে আটক করা হয় বাংলাটিমের সদস্য আসিফ আদনানকে। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পাস করেন। একই সময় আটক ফজলে এলাহী ‘এ’ লেভেল পাস করেন রাজধানীর একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে। তার মা যুগ্মসচিব, যিনি বর্তমানে ওএসডি।

তবে একেবারে নিম্নবিত্ত মানুষেরাও রয়েছেন এসব জঙ্গি সংগঠনে। সামাজিক বৈষম্য, অন্ধ ধর্মীয় আবেগ, অথবা অর্থের লোভে তারা এসব সংগঠনে যোগ দিচ্ছেন। গত ২১ এপ্রিল আশুলিয়ায় কমার্স ব্যাংকের ডাকাতির ঘটনায় আটকৃতরা সবাই আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য বলে জানিয়েছেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান। তিনি জানান, এ ঘটনায় আটক আল আমিন একটি পোশাক কারখানার কর্মী ছিলেন পরে তিনি রিকশা চালান। মজনু প্রধানও রিকশাচালক। বাবুল সরকার গার্মেন্ট কর্মী। সোহেল রানা কমার্স ব্যাংকের নিরাপত্তা কর্মী। বোরহহান উদ্দিন আশুলিয়ায় পরিবহন ব্যবসারসঙ্গে জড়িত।

বিত্তবানদের উচ্চশিক্ষিত সন্তানদের জঙ্গি সংগঠনে সম্পৃক্ত হওয়া প্রসঙ্গ থেকে কথা বলা হয় অপরাধ ও সমাজ বিজ্ঞানী এবং গোয়েন্দা পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে।

তাদের মতে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনেতিক এই তিনটি কারণের পাশাপাশি বাংলাদেশের সংস্কৃতির শিকড়ের সঙ্গে তরুণদের সম্পর্কহীনতায় এই তরুণদের জঙ্গিবাদী হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ। আরো বেশ কিছু কারণও চিহ্নিত করেছেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান জিয়া রহমান বেশ কিছু কারনের কথা বলেন। তার মতে, আন্তর্জাতিক রাজনীতি, দেশের ট্র্যাডিশনাল রাজনীতির ওপর তরুণদের আস্থা কমে যাওয়া, হিরোইজম-রোমান্টিসিজম-ফ্যান্টাসি, ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের সংস্কৃতির শিকড়ের সঙ্গে তরুণদের পরিচয় না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে কিছু তরুণকে জঙ্গি সংগঠনগুলো সহজেই মোটিভেট করে দলে ভিড়াচ্ছে।

এছাড়া দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছু উঠতি তরুণ নেতার চলন, বলন, কথন এবং সেই সঙ্গে ধর্মের সঙ্গে মিলিয়ে ওইসব নেতাদের বিভিন্ন বক্তব্য ‘ভিন্ন’ কিছু করতে উৎসাহ যোগাচ্ছে তরুণদের।

অধ্যাপক জিয়া বলেন, ‘একসময় সমাজ বদলের জন্য শিক্ষিত মেধাবী তরুণরা যেমন দলে দলে বাম দল, নকশাল কিংবা সর্বহারা দলে যোগদান করেছিল ঠিক তেমনি এখন কিছু তরুণ সেরকমই ‘বদলের’ নেশায় মেতে উঠেছে। আর তাদেরকে এই কাজে মোটিভেট করছে উগ্র জঙ্গি সংগঠনগুলো। এটা এক ধরনের কারেন্ট, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সারা বিশ্বে।’

তিনি মনে করেন, এটা প্রো-ইসলামিক মুভমেন্টের অফসুট। এটা আর্ন্তজাতিক রাজনীতিরই অংশ। ওয়ান ইলেভেনে টুইনটাওয়ার হামলার পর এটা শুরু হয়েছে।

অপরদিকে সমাজ ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের মতে, উচ্চবিত্তের সন্তানদের সাধারণত বৈষয়িক কোনো দুশ্চিন্তা থাকে না। কিন্তু এদের অনেকেরই আইডেন্টিটি ক্রাইসিস থাকে। তাদের অনেকেরই ইচ্ছা থাকে সমাজ পরিবর্তনের। কিন্তু দেশের অসুস্থ রাজনীতির কারণে রাজনীতিতে আসতে পারছে না। ফলে যখন তারা বিকল্প কিছুর সন্ধান করে তখনই সেটার সুযোগ নেয় জঙ্গি সংগঠনগুলো। উচ্চবিত্তের মেধাবী সন্তানদের টার্গেট করে তারা দলে ভিড়ায়।

এ ব্যাপারে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিনিয়র এডিসি ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রধানত দুটি কারণে ধনাঢ্য পরিবারের শিক্ষিত সন্তানরা জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ছে: এসব ছেলেরা টার্গেটে পরিণত হচ্ছে। যারা এসব জঙ্গি সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত এরাই এ ধরনের ছেলেদের চিহ্নিত করে টার্গেট করে থাকে; বাংলাটিমের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলো সাধারণত আল কায়েদার মতো আর্ন্তজাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোকে কপি/অনুসরণ করে থাকে। এজন্য তাদের প্রয়োজন হয় তথ্যপ্রযুক্তিগত জ্ঞান ও এ ধরনের টেকনোলজির ব্যয় বহন করতে পারে এমন তরুণদের।

তবে জঙ্গি সংগঠন নিয়ে কাজ করা ডিবির এই কর্মকর্তার মতে, এরা একেবারে জিরো (শূন্য) থেকে শুরু করে না। অর্থাৎ ধর্ম নিয়ে যাদের দুর্বলতা বা কৌতুহল আছে শুধু সেইসব শিক্ষিত তরুণদেরই এরা টার্গেট করে থাকে।

ছানোয়ার হোসেন জানান, ২০০৯ সাল থেকে রাজধানীর বেশ কিছু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। এছাড়া বিদেশে পড়তে যাওয়া যেসব তরুণকে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ফেরত পাঠানো হয়েছে তাদেরকেও নজরদারির মধ্যে রাখা হয়।

তিনি বলেন, ‘জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আটকের পর তাদের মোটিভেশন করা হয়। একইসাথে তাদের পরিবারকেও সবধরনের সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়, যাতে তাদের মেধাবী সন্তানরা জঙ্গি সংগঠনগুলোর সাথে সম্পৃক্ত না হতে পারে। বিশেষ করে হিযবুত তাহরীরের ক্ষেত্রে এই মোটিভেশন সবচে বেশি করা হয়েছিল এবং অনেক তরুণই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছিল।’ বাংলামেইল

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

ঢাবি বন্ধের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগে ধন্যবাদ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হল ছেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদেরবিস্তারিত পড়ুন

রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ আহত ২৩

রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষে ছাত্রলীগ, শিক্ষার্থী, মহিলা আওয়ামী লীগবিস্তারিত পড়ুন

জাহাঙ্গীরনগর রণক্ষেত্র, অর্ধশতাধিক আহত 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রধান ফটকে ‘ছাত্রলীগ প্রবেশ নিষেধ’ লেখা কোটাবিস্তারিত পড়ুন

  • বৃহস্পতিবার সারাদেশে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা কোটা আন্দোলনকারীদের
  • নবীন এক্সপোর্টারদের নিয়ে এক্সপোর্ট সেবার বিজনেস মিটআপ
  • কান্না জড়িত কন্ঠে কুড়িগ্রামে পুলিশের ট্রেইনি কনস্টেবল
  • তিশা থেকে জয়া আহসান, কপালে বাঁকা টিপের সেলফির রহস্য কী?
  • মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতার ফাইনালে বাংলাদেশের নীলা
  • বাঁশির সুরে চলে অন্ধ সুভাষের সংসার
  • কিশোর বয়সে কেন ধুমপানে আসক্ত হচ্ছে ?
  • রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করলেন নূর উদ্দিন শামীম
  • সবচেয়ে কম বয়সী বিলিয়নিয়ার তরুণী
  • ব্যতিক্রমী শিল্প গড়ে বাংলাদেশি তরুণের চমক! তাও বালু দিয়ে !
  • আমাদের অহংকার বাংলাদেশের নারীঃ যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি প্রকৌশলে বাংলাদেশি নারী
  • মেহেদী রাঙা হাতে ঢাবি ছাত্রীরা