একজন মৃত মানুষের ফিরে আসার ভয়ানক গল্প…….

ভূতের গল্প বলতেই মানুষ ভাবে কল্পনার ভূত বানানো গল্প। যেখানে একটা মেয়ে থাকবে। সাদা কাপড় পড়া। হয় তার চোখ দুটো উল্টো। হয় তার পা দুটো পেছনে। মরে যাওয়া মানুষ ফিরে আসার বানানো এক গল্প! আমি বলছি না আমার এই লেখা আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে।
আমার হঠাৎ ট্রান্সফার লেটার আসল। কলেজ যেখানে পড়ল তার কাছাকাছি বর্ডার। জানালা খুলে ভাল করে তাকালে ভারত দেখা যায়। সব চেয়ে কষ্টের ব্যাপার হচ্ছে আমার দুতলা বাসার মাঝে কারেন্ট এর লাইন নষ্ট ছিল।
একে বর্ষাকাল তার উপর কারেন্ট নেই। একটা পাহাড়ি এলাকা। ভাবতেই গা কেমন কর। কিন্তু আমি একদমই ভুতে বিশ্বাসী নই। সন্ধ্যা বেলা কলেজের কেরানী নিবেন্দু এসে আমাকে খাবার দিয়ে যায়। আমি খাবার খেয়ে সন্ধ্যার অন্ধকারে হাতে সিগেরেট নিয়ে ছাদে হাঁটা হাটি করি।
এভাবেই সময় যাচ্ছিল। নিবেন্দু প্রায়ই বলত, স্যার সব ঠিক আছে তো? হ্যা। কেন? কিছু না স্যার। এমনি
নিবেন্দুর বিস্মিত চোখ আমার দিকে তাকাত। আমি অতো পাত্তা না দিয়ে কলেজের ছেলে-মেয়েদের খাতা নিয়ে বসতাম । সেদিনও বসে আছি । দুপুর থেকে টানা বৃষ্টি। আমি বসেছি দুই তলায়। খাটে। খাটের সাথে লাগানো টেবিল। পাশেই জানালা। জানালা দিয়ে তাকালে জঙ্গল দেখা যায়। জঙ্গলে একটা পুরাতন বিষ্ণু মন্দির আছে।
যখন ইংরেজরা ছিল তখন এক জমিদার এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিল । ইংরেজ দের সাথে কি কারনে যেন জমিদারের বিরোধ হয়। তারপর ইংরেজরা জমিদার কে এই মন্দিরে এনে নাকি বলি দেয়। সব ই নিবেন্দু বলেছে আমায়। নিবেন্দু ছেলেটা গোবেচারা টাইপ এর। একা একাই কথা বলে । আমি কিছু না বললেও একা একাই কথা বলতে থাকে।
জানালা দিয়ে এক পশলা বাতাস এসে আমার টেবিলের হারিকেন টা নিভে গেল। মেজাজ টা খুব গরম হয়ে গেল। এই ডিজিটাল যুগে কই পড়াতে আসছি। ঠিক করলাম যে করে হোক ঢাকা ট্রান্সফার হব।
আমি অন্ধকারে বসে আছি। বাইরে বৃষ্টির বেগ বাড়ছে। জানালা দিয়ে বৃষ্টির ছাঁট আসছিল তাই জানালা বন্ধ করে দিয়েছি । ঘরটা ঘুট ঘুটে অন্ধকার হয়ে গেল। হঠাৎ মনে হল আমার শরীরে এসে একটা আগুনের তাপের মত লাগল। কেমন যেন লাগল।
আমি শুয়ে পড়লাম । কিছুক্ষণ ঘুমাব । শোয়া মাত্র ঘুমিয়ে গেলাম । ঘুমের ভেতর অদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখলাম। আমি যেন চিত হয়ে শুয়ে আছি। আমার পেটে একটা বড় গর্ত। সেই গর্তে অসংখ্য লাল লাল বড় পিঁপড়া ঘুরা ঘুড়ি করছে। কিছু পিঁপড়া কামড়ে ধরে আছে।
আমি দেখলাম কতগুলো লোক আমার চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের হাতে রশি। লোক গুলোর চেহারা ইংরেজ দের মত। এদের একজনের চেহেরা অনেকটা হিটলারের মতন। এরা আমাকে রশি দিয়ে বেঁধে বড় একটা পাতিলে নিয়ে বসাল। বড় পাতিল ভর্তি পানি। আমাকে গলা ডুবিয়ে পাতিলের ভেতর কেন বসানো হল বুঝলাম না।
তারপর সবাই মিলে আমাকে পাতিলের মধ্যে করে নিয়ে পাতিল টা বসাল বড় একটা চুলায়। চুলায় বিশাল বিশাল শুকনো গাছের ডাল দেয়া আছে। এরা কি করতে যাচ্ছে? হিটলার এর মত চেহারার লোকটা চুলায় আগুন ধরিয়ে দিল । আগুনের আঁচ পেয়ে পানি আস্তে আস্তে গরম হতে শুরু করেছে। আমি বসে আছি পাতিলের ভেতর। পানির মধ্যে। আমার শরীর বাঁধা। আমি ঘাড় মুখ নাড়াতে পারছি না। প্রচণ্ড গরম লাগছে। পানি গরম হয়ে শরীরে চামড়া পুড়ে যাচ্ছে! আমি চিৎকার করতে চাচ্ছি । কিন্তু এরা আমার মুখ বেঁধে রেখেছে। আমার শরীর গরম পানিতে পুড়ে মাংস ক্ষয়ে যাচ্ছে। ক্ষয়ে যাওয়া মাংস পাতিলের টববগে ফুটন্ত পানির বলগের সাথে ভেসে উঠছে। রক্ত বের হচ্ছে শরীর থেকে। শরীরের রক্তে স্বচ্ছ পানি লালচে হয়ে গেছে।
আমি চিৎকার করে ঘুম থেকে উঠে বসলাম। সারা শরীর দিয়ে ঘাম ছুঁটে গেছে আমার। এমন সময় মনে হল টর্চটা বালিশের পাশে রেখেছিলাম। টর্চ হাতে নিব ঠিক তখন মনে হল নীচতলায় ঘরে ভারী শরীরে কেউ লাঠি হাতে পায়চারী করছে! তার লাঠির ফ্লোরে পড়ার ঠক ঠক আওয়াজ আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম।
আমি টর্চ নিয়ে নিচে যাবার সাহস পাচ্ছি না। তবু বিছানা থেকে নামলাম । নিচে গেলাম । কিছুই পেলাম না। এসব কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না! সারা বাড়িতে আমি একা থাকি। নীচ তলায় হাঁটবে কে? তাহলে কি তীব্র কোন হ্যালুশিনেশনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি?
আমি আবার দুই তলায় ফিরে আসলাম । বৃষ্টি কমে এসেছে । আমি মোম বাতি জ্বালিয়েছি। বাইরে আকাশে মেঘ কেটে চাঁদ উকিয়ে দিয়ে জোছনা ছড়াচ্ছে। আমি জানালা খুলে বাইরে তাকালাম । আশ্চর্য! আমি একি দেখছি? একজন মধ্যবয়স্ক লোক ধুতি পড়ে লাঠি হাতে মাথা নিচু করে ঠক ঠক করে হেঁটে হেঁটে জঙ্গলে মন্দিরের দিকে যাচ্ছে! লোকটার মুখ দেখা যাচ্ছে না ।
আমার সমস্ত হাত পা জমে আসছে! আমি দ্রুত জানালা বন্ধ করে দিলাম । তারপর আবার জানলার ফাঁক দিয়ে তাকালাম। কিছু নেই!
সবই তাহলে মনের ভুল এই ভেবে আমি যখন জানালা থেকে ঘাড় ঘুরালাম । দেখলাম দুই তলার রমে একজন মধ্যবয়স্ক লোক ধুতি পড়ে খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছে । তার শরীর এর বিভিন্ন স্থানে পুড়ে গেছে সেখান থেকে মাংস ক্ষয়ে পড়ছে!
আমি বিড়বিড় করে বললাম, আপনি কে!
নরেন্দ্র নারায়ন আমি
লোকটা মুচকি হাসল। তারপর আর আমার কিছু মনে নেই । যত দূর মনে পড়ে আমি চোখ খুলে দেখলাম আমি আমার গ্রামের বাড়িতে। তারপর টানা দুই মাস আমি অসুস্থ ছিলাম।
এই দুইমাসে আমার বড় ভাই আমার চাকরী বদল করে আমার গ্রামের কাছেই একটা কলেজে নিয়ে আসে । তারপর একদিন আমি নিবেন্দুকে ফোনে জিজ্ঞেস করেছিলাম,
নিবেন্দু জমিদার মশায় কে তো মন্দিরে মারা হয়েছিল?
জি স্যার
উনাকে ইংরেজ রা কীভাবে মেরেছিল জানো?
জি না স্যার
আচ্ছা মন্দিরের আশে পাশে কি কোন বড় পাতিল আছে?
জি স্যার, আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কেমন বড়? একজন মানুষ কে ভেতরে বসিয়ে রাখা যাবে?
একজন কেন স্যার তিন জন মানুষ কে বসায়ে রাখা যাবে । এই পাতিল অনেক পুরানা পাতিল । মন্দিরে যারা আসত তাদের কে খাওয়ানো হইত এই পাতিলে । প্রায় পাঁচশ মানুষের রান্ধন হইত এক পাতিলে
জমিদার সাহেবের নাম কি ছিল?
জমিদার নরেন্দ্র নারায়ন। আমি ফোন রেখে দিলাম। ঐ রাতে আমার সাথে যা হয়েছে । আমি নিজে বিশ্বাস করতে চাই না । এই যুগে এমন কোন ঘটনা বিশ্বাস যোগ্য নয় । বিন্দুমাত্র যুক্তি নেই এরকম সিনেমাটিক ঘটনা বিশ্বাস করার । কিন্তু তবু মাঝে মাঝে কেন জানি আমার জমিদার এর জন্য খুব কষ্ট হয় ।
চোখে ভেসে উঠে,
একজন মধ্যবয়স্ক লোক খালি গায়ে সাদা ধুতি পড়া অবস্থায় পাতিলে পানি গা ডুবিয়ে বসে আছে । তার হাত পা মুখ বাঁধা । চোখ দুটি অসহায় । পাতিলের নিচে চুলা জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে । চুলা থেকে ধকধক করে আগুন বের হচ্ছে । আগুনে পানি গরম হচ্ছে ক্রমাগত । তীব্র গরম পানি মধ্যবয়স্ক এই অসহায় মানুষটার শরীরে চামড়া পুড়িয়ে দিচ্ছে । মাংস গলিয়ে দিচ্ছে …
আমার খুব কষ্ট হয় । খুব কষ্ট । আমি আর ভাবতে পারি না । কিছু ভাবতে পারি না । তবু চোখের সামনে ভেসে উঠে ।
লেখকঃ দুর্জয় অভি
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন

এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন

৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন