দ্বন্দ্বের জেরে সচিবের ক্ষমতা খর্ব করলেন শিক্ষামন্ত্রী
মন্ত্রীকে না জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা এখন থেকে এককভাবে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। মঙ্গলবার এমন নির্দেশনা জারি করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। অভিযোগ রয়েছে, মন্ত্রীকে না জানিয়ে শিক্ষা সচিব বিগত প্রায় ১০ মাস ধরে এককভাবে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন। এমনকি মন্ত্রী এক সিদ্ধান্ত দিলে তা পাশ কাটিয়ে অন্য সিদ্ধান্ত নেয়ার ঘটনাও রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ভর্তিতে মহা জটিলতা তৈরি হয়। এ নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। চরম ভাবমূর্তি সংকটে পড়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ রোববার সংবাদ সম্মেলন করে দেশবাসীর কাছে দুঃখপ্রকাশ করে পরিস্থিতি সামাল দেন শিক্ষামন্ত্রী। এরই একদিন পর তিনি এমন নির্দেশনা জারি করলেন।
নির্দেশনা জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। মঙ্গলবার রাতে তিনি টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, আসলে সবাই জানেন যে, রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক ক্ষমতা মন্ত্রীর। নতুন করে এটা মনে করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। আমি সংসদে কাজে ব্যস্ত থাকি। তাই কেউ যেন আমার অনুপস্থিতিতে কোনো সিদ্ধান্ত না নেন, সে বিষয়টি সবাইকে জানাতে আজ (মঙ্গলবার) একটি নোট দিয়েছি। আমার পিএস (ব্যক্তিগত সচিব) তা সবাইকে পড়িয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শিক্ষামন্ত্রীর স্বাক্ষরসহ মন্ত্রণালয়ে জারি করা এ নির্দেশনার এক জায়গায় বলা হয়েছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার সার্বিক বিষয়ে কথা হয়েছে, তিনিই ডেকে বলে দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের সব সিদ্ধান্ত মন্ত্রী চূড়ান্ত করবেন। আমাকে না জানিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে না। সূত্র জানায়, এ নির্দেশনা জারির পর তাকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরও নেয়া হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এমন নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সচিব নজরুল ইসলাম খানের কর্তৃত্ব খর্ব হল। এর ফলে সচিব কার্যত ক্ষমতাহীন হয়ে পড়লেন।
শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বিভিন্ন কাজে ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে বারবার মন্ত্রীকে উপেক্ষা করছিলেন। মন্ত্রণালয়ের কাজে মন্ত্রী নিজস্ব একটি দর্শন অনুসরণ করেন। বিশেষ করে কোনো কর্মকর্তাকে কষ্ট না দেয়া, সিদ্ধান্ত গ্রহণে সব কর্মকর্তার বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারের মতামত নেয়ার কাজটি করেন তিনি। কিন্তু সচিব কাজে যোগদানের পর এসব উপেক্ষা করে চলছিলেন। বিগত ১০ মাসে সচিব অনেকবার মন্ত্রীর মতের বিরুদ্ধে পরিপত্র জারি থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ ঘটনা হল, একাদশ শ্রেণীতে অনলাইন ভর্তি কার্যক্রম। শিক্ষামন্ত্রী ৩০০ আসন আছে এমন কলেজে এ পদ্ধতি বাস্তবায়নের নোট দেন। কিন্তু ওই নোটের পরে সচিব আরেক নোট লিখে সব কলেজে এ পদ্ধতি চাপিয়ে দেন।
এছাড়া এসএসসি এবং এইচএসসির ফলের ভিত্তিতে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে আদেশ জারি করা হয়েছিল গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখে পরের দিনই তা প্রত্যাহার করতে হয়েছিল। এছাড়া নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলেও ক্লাসে ৭০ শতাংশ উপস্থিতির ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রীদের এসএসসি ও এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ দিয়ে গত ৩ মার্চ পরিপত্র জারি করেন শিক্ষা সচিব। এ নির্দেশনা নিয়েও শিক্ষক-অভিভাবক মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে সাঁতার শেখানো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টয়লেট ব্যবস্থাপনা, এমপিও বিকেন্দ্রীকরণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট তৈরি, শিক্ষাসফরসহ আরও বেশ কয়েকটি বিষয়ে পরিপত্র জারি করেন শিক্ষা সচিব। এসব বিষয়েও মন্ত্রীর পরিবর্তে নিজের মতামত চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা ছিল বলে সূত্র জানায়। মঙ্গলবার জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী, মন্ত্রীকে না জানিয়ে এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তাই।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পোষ্য কোটাকে ‘লাল কার্ড’ দেখালেন রাবি শিক্ষার্থীরা
পোষ্য কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করায় রাজশাজী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)বিস্তারিত পড়ুন
ভারতীয় হাইকমিশনারকে দেওয়া বিএনপির ৩ সংগঠনের স্মারকলিপিতে যা রয়েছে
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, জাতীয় পতাকারবিস্তারিত পড়ুন
বাশার আল-আসাদের পতনের নায়ক কে এই জোলানি?
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন ইসলামপন্থী সশস্ত্রবিস্তারিত পড়ুন