উপন্যাস পর্ব-১
বাবা আছে বাবা নেই
তুমি মৌলানা শরাফত খানের মেয়ে! কুচকানো চোখ দুটি ছানাবড়া করে রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে বললেন বিজয়বাবু।
মসৃণ কপালটা কুচকে গেছে। আমার পরিচয় জেনে তিনি পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্যের কিছু দেখলেন বলে মনে হলো।
নাক ফুলিয়ে মুখের ভেতরেই কী যেন বললেন। আমি ঠাওর করতে পারলাম না।
রমা। রমা। অ্যাই রমা। ডাকলেন বিজয়বাবু।
রমা আমার বান্ধবী। দুজনে বঙ্কিম চন্দ্র ঘোষ ইনষ্টিটিউটে নবম শ্রেণিতে পড়ছি। রমা পড়ালেখায় খুব ভালো। মেধা তালিকায় প্রথম। আচরণও বেশ ভালো। কারো সাথে ঝগড়া-বিবাদে নেই। ক্লাসের অন্যান্য মেয়েরা রমার সঙ্গে বেশ ভাব করতে চায়। কিন্তু আমার সঙ্গেই ওর ভাব ভালো। ক্লাসের কোনো বান্ধবীকে রমা কখনো বাড়িতেও আনেনি। আমিই প্রথম।
আমাকে বাইরের ঘরে বসিয়ে রেখে রমা ভেতর ঘরে গেল। ক্ষাণিক পরেই বিজয়বাবু এলেন। একথা-ওকথা জানার পর আমি মৌলানা শরাফত খানের মেয়ে এটা জেনে উনি ফুঁসে উঠলেন কেন? বেশ অস্বস্তি বোধ করছি। বেরিয়ে যাব কি না ভাবছি। রমাটা এখনো আসছে না কেন? বিজয়বাবু হাত দুটো পেছনে দিয়ে পায়চারি করছেন। চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। তেলেবেগুনে জ্বলছেন। এরই মাঝে গজ গজ করে বারকয়েক ডাকলেন রমাকে। আমি মাথা নিচু করে বসে আছি।
আষাঢ়ের মাঝামাঝি। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথেই রমাদের বাড়িতে এসেছি। আকাশে মেঘের ঘনঘটা। গুড়ুম-গুড়ুম ডাকছে মেঘপাল। যখন তখন নামবে বারিধারা। থালে কয়েকটি নাড়ু আর জল নিয়ে ফিরল রমা।
বাবা! তুমি কতক্ষণ? বলেই রমা বিজয়বাবুর চেহারার দিকে তাকিয়ে চুপসে গেল। পেছনে রমার মা। আমি দাঁড়ালাম। পুরো পরিস্থিতি অনভিপ্রেত। অনাকাঙ্ক্ষিত এবং বিস্ময়কর। রমা, রমার মা আমার কাছে দাঁড়িয়ে। বিজয়বাবু এলএমএফ ডাক্তার হলেও গ্রামে তাঁর বেশ নাম-ডাক আছে। তাঁর কাছে আমি বেশ কবার চিকিৎসা নিতেও এসেছিলাম। তখন তো তিনি এমন আচরণ করেননি। কিন্তু আজ! হিসাবটা মেলাতে পারছি না।
তিনজনই কলাগাছের মতো দাঁড়িয়ে আছি। বিস্ময়ে একে অপরকে দেখছি। থেকে থেকে বজ্রপাত নীরবতা ভাঙছে। মুষলধারে অবিরাম বৃষ্টি।
বাবা ও রাবেয়া। আমার সঙ্গে পড়ে। বলল রমা।
চুপ কর। ধমকটা এমন জোরে বিজয়বাবুর মুখ থেকে বেরুল যেন বিনা মেঘেই ঘরে বজ্রপাত হলো। রমার হাত থেকে নাড়ুর থাল পড়ে ঝন ঝনাৎ করে উঠল। মেঝেতে জল গড়িয়ে পড়ল। রমার মা হা করে দেখছে। টিনের চালে আওয়াজ তুলে বৃষ্টি শুরু হলো।
রমা।
ডাকলেন বিজয়বাবু।
আজ্ঞে বাবা। অস্পষ্ট স্বরে জবাব দিল রমা।
আমি দিব্যি বুঝতে পারছি রমার হাত-পা কাঁপছে।
এই মেয়েটিকে বেরিয়ে যেতে বল। বললেন বিজয়বাবু।
রমা আর রমার মা চোখ তুলে তাকালেন।
আজ্ঞে বাবা? হাজারো প্রশ্ন চোখে নিয়ে রমা বিজয়বাবুর দিকে তাকাল।
বললাম এই মেয়েটিকে বেরিয়ে যেতে বল। ধমকের সুরে বললেন বিজয়বাবু।
বৃষ্টিটা থামুক। মুখ খুললেন রমার মা। তিনিও ভয়ে কাঁপছেন। চেহারাটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। আর আমার দুচোখে জল টলমল করছে। অজান্তেই গড়িয়ে পড়ল গাল বেয়ে।
না। ওকে এক্ষুনি বেরিয়ে যেতে বল। আমি ওই মুখ দেখতে চাই না।
বিজয়বাবুর চিৎকারে রমা ও রমার মা মূর্ছা যাওয়ার উপক্রম। কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।
অঝোর বৃষ্টির মাঝে বেরিয়ে পড়লাম। মেঘ ঢাকা আকাশ। সন্ধ্যে হওয়ার আগেই অন্ধকার ঘনীভূত হচ্ছে। স্কুলের ব্যাগটা বুকে নিয়ে নগ্ন পায়ে হাঁটছি। ভিজে জবুথবু। কাঁদায় পা পিছলে যাচ্ছে। স্যান্ডেল জোড়া খুলে হাতে নিলাম। ব্যাগটাকে বৃষ্টির থাবা থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি। একবার পেছন ফিরলাম। রমা ও রমার মা তাকিয়ে আছে। সামনে ফিরে চলতেই পা পিছলে পড়ে গেলাম। কাঁদা মেখে সারা গা একাকার। আর পেছন ফিরে তাকাইনি।
রাস্তার মোড়ে এসে গনি মিয়ার চা দোকানের কার্নিশে দাঁড়িয়েছি। ভেতরে অনেক লোকজন। চা-সিগারেট ফুঁকছে আর কোনায় রাখা সাদাকালো টেলিভিশন দেখছে। বৃষ্টি থামার লক্ষণ নেই। কার্নিশে দাঁড়ালেও বাতাসের ঝাপটায় ভিজে যাচ্ছি। অন্ধকারও ঘনিয়ে আসছে।
ভিতরে আইসা বসো। বৃষ্টি থামুক। ভেতর থেকে কেউ একজন বলল।
চা দোকানের ভেতরে চোখ পড়তেই বাকিউলের চোখাচোখি হলাম। মুহূর্তেই আমার পিলে চমকালো। বুকের ধুঁকপুকানি বেড়ে গেল। বাকিউলের কালো বিশ্রী চেহারায় এক চিলতে হাসি লক্ষ করলাম। হাসিটা ভয়ংকর। চা দোকানের বেঞ্চিতে নড়াচড়া করছে। কাল বিলম্ব না করে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। পেছনে বাকিউল ডাকছে।
রাবেয়া… অ রাবেয়া। ছাতা নিয়া যাও।
ফিরেও তাকালাম না।
যখন বাড়িতে ঢুকছি, তখন মসজিদে মাগরিবের আজান হচ্ছে। বাবা মসজিদে গেছেন। তিনি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদেই আদায় করে থাকেন। হাতে আঙুলের ডগায় তসবিটা থাকে। ও দিয়ে কী জপেন তা তিনিই ভালো জানেন। মা ঘরের দাওয়ায় বসে রাস্তার দিকেই তাকিয়ে আছেন। আমাকে আসতে দেখে উঠে দাঁড়ালেন।
কী রে ভিজে এলি যে? শিমুর সঙ্গে দেখা হয়নি? শিমু তো তোকে ছাতা নিয়ে আনতে গেল।
মা এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলেন। শিমু আমার ছোট বোন। এবার ষষ্ঠ শ্রেণিতে পা রাখল।
কী রে চুপ করে আছিস কেন? মা বললেন।
না মা। শিমুর সঙ্গে দেখা হয়নি?
তা হলে ও গেল কোথায়?
ও হয়তো ঠিকই গিয়েছে। আমি অন্য কোথাও গিয়েছিলাম।
কোথায় গিয়েছিলি?
বলছি মা। আগে ব্যাগের বইগুলো বার করে রাখ। পিছু পিছু শিমু ঢুকল।
আপু তুই কোথায় গিয়েছিলি? আমি স্কুল পর্যন্ত খুঁজে এলাম।
শিমু যাও। হাত মুখ ধুয়ে এসে পড়তে বসো। মা ব্যাগ গোছাতে গোছাতেই বলল।
শিমু আর কোনো কথা বাড়াল না।
হাঁস-মুরগিগুলো বৃষ্টিতে ভিজে চুপসে আছে। আঁড়ালের কার্নিশে গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে। দরজা খোলা নেই। ভেজা কাপড়ে গিয়ে আঁড়ালের দরজা খুলে দিলাম। হাঁস-মুরগিগুলো সুর সুর করে ঢুকে পড়ল। মা হারিকেন-কুপি ধরালো।
আমি কলতলায় গিয়ে গোসল সেরে আসতে চাইলাম। মা বারণ করল। সন্ধ্যের পর কলতলায় যাওয়ার দরকার নেই। এমনিতেই জামা পাল্টে হাত-মুখ ধুয়ে এলাম।
শিমু পড়তে বসেছে। টেবিলে হারিকেন মিটমিট করে জ্বলছে। পাশের চেয়ারটা টেনে বসলাম। গা গরম লাগছে। মনে হয় কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসবে। চোখ-নাক জ্বলছে। মাথাটা ঝিম ধরে আছে। বই-খাতাগুলো ভিজে চুপসে গেছে। মা সেগুলো বিছানায় ছড়িয়ে দিয়েছে। ব্যাকরণ বইটা টেবিলেই ছিল। সেটা নিয়ে নাড়াচড়া করছি। বই হাতে না দেখলে মা ভীষণ বকে।
সরষের তেল আর পেঁয়াজ-মরিচে মুড়ি ভেজে দিয়ে গেল মা। শিমু খেতে খেতে পড়ছে। আমার বিজয়বাবুর চেহারাটা মনে পড়ল। ‘এই মেয়েটিকে এক্ষুনি বেরিয়ে যেতে বল।’
শিমু আর আমি রাতে মায়ের সঙ্গেই ঘুমাই। পানের বাটা নিয়ে বিছানায় বসেছে মা। শিমু ঘুমিয়ে পড়েছে। সামনের ঘরে বাবা। এ ঘর থেকে দুই ঘর পরে। মা পান সাজিয়ে মুখে দিল। আমি তাকিয়ে আছি। গায়ে জ্বরের ভাবটা রয়ে গেছে। কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়েছি।
কী রে অমন করে কী দেখছিস? যেন পান খাওয়া নতুন দেখছিস। বলল মা।
না মা। এমনি।
স্কুল থেকে কোথায় গিয়েছিলি তা তো বলিসনি। যা দিন-কাল পড়েছে, না বলে কোথাও যাস না।
আচ্ছা মা তোমাকে রমার কথা বলেছি না? আমাদের ক্লাসে পড়ে। রোল নম্বর এক। ওই যে বিজয় ডাক্তারের মেয়ে।
হ্যাঁ। হ্যাঁ। বলেছিস তো। মেয়েটি পড়াশোনায় বেশ ভালো। তোর সঙ্গেও বেশ ভাব।
মা আজ রমাদের বাড়ি গিয়েছিলাম।
ও। তো কেমন দেখলি? রমার মাও নিশ্চয় বেশ ভালো।
হ্যাঁ মা ভালো।
কিছুটা সময় পার হলো। মা হারিকেনের আলো নিবু নিবু করে দিয়ে আমার পাশে শুলো। চারদিকে সুনসান নীরবতা। অদূরে হুতুম পেঁচার ডাক। জানালার ওপাশ থকে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাকও কানে আসছে।
কী রে চুপ করে আছিস যে? নীরবতা ভাঙল মা। মা, বিজয় ডাক্তার আমার বাবার নাম জানতে চাইল। যখনই বললাম মৌলানা শরাফত খান আমার বাবা, তখনই উনি বেশ চমকালেন। চেহারাটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। আমার সঙ্গে আর কোনো কথাই বললেন না।
তারপর দেখলাম রমা আর রমার মায়ের চেহারাটা কেমন চুপসে গেছে।
অন্ধকারে মা আমার হাত ধরে ঝাকুনি দিল। ফিসফিস করে বলল আস্তে বল। তোর বাবা শুনতে পাবে।
পাবে না মা। বাবা তো সামনের ঘরে। আচ্ছা মা বাবার সঙ্গে কি ওদের কোনো শত্রুতা আছে?
হ্যাঁ। তোর বাবার সঙ্গে ওদের আজন্ম শত্রুতা।
কেন?
ওসব এখন আর বলে কাজ নেই। ঘুমা। আর শোন কখনো রমাদের বাড়ি যাস না।
না মা। এ হতে পারে না। কেন এ আজন্ম শত্রুতা সেটা আমাকে জানতেই হবে। না হয় কাল থেকে আমি আর স্কুলে যাব না।
চুপ কর তো। ঘুমা।
মা তুমি তো আমার কাছে কিছু লুকোও না। সব কথাই আমাকে বলো। এখন কেন…? আর বলতে পারি না। কান্নায় আমার গলা ধরে আসে।
রাবু। মা আমাকে রাবু বলেই ডাকে।
হুঁ।
আমি জানতাম কথাগুলো কোনো একদিন তোকে বলতে হবে। মৃত্যুর আগে আমি তোকে বলে যেতাম। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি বলতে হবে সেটা আশা করিনি। নিয়তি বড়ই নির্মম রাবু। নিয়তি বড়ই নির্মম।
উনিশ শ’ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের কথা তো তুই শুনেছিস। হ্যাঁ মা শুনেছি। পাকিস্তানের দুটো ভাগ ছিল। পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তান। আর বাংলাদেশ ছিল পূর্ব পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ স্বাধীন হয়েছে। আর এ দেশের নাম হয়েছে বাংলাদেশ।
রাজাকারের নাম শুনেছিস?
হ্যাঁ মা। সে তো আমাদের বইতেও পড়েছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক বাঙালি পাকিস্তানিদের পক্ষ নিয়েছিল। তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করেছে। আরো কত ক্ষতি করেছে।
মা রাবু।
জ্বি মা।
তুই দেখছি মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অনেক কিছুই জানিস। আর তুই যা জানিস তা মিথ্যে নয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই কাঞ্চনপুর গ্রামে কোথায় কী হয়েছিল তার অনেক কিছুই আমরা জানি। কিন্তু কেউ মুখ খুলি না।
আচ্ছা মা তোমার কাছে জানতে চাইলাম বিজয় ডাক্তার আমার বাবার নাম শুনে অমন চেহারা করলেন কেন? আর তুমি শোনাচ্ছ আমাকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প। এ কিসের মধ্যে কী?
বিজয় ডাক্তারের কথা বলার জন্যই তো এত কথা বললাম। বিজয় ডাক্তারের বাবা ছিলেন নারায়ণ ডাক্তার। তার ছিল বিশাল প্রতিপত্তি। হিন্দু জমিদারদের একজন।
তো।
নারায়ণ ডাক্তার একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় রাজাকারের হাতে খুন হয়।
কী বলছো, মা?
হ্যাঁ।
আর সেই নারায়ণ ডাক্তারের খুনি তোর জন্মদাতা বাবা।
কী!
চিৎকার দিয়ে আমি শোয়া থেকে বসে পড়ি। চিৎকারটা কত জোরে দিয়েছি নিজেই ঠিক বুঝতে পারিনি। আমার সারা শরীর কাঁপছে। মনে হয় দম আটকে আসছে। মা উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। ও ঘর থেকে বাবা জোর গলায় বললেন কী হলো রে রাবেয়ার মা।
না কিছু না। মনে হয় স্বপ্ন দেখেছে রাবু। মা বলল।
দোয়া-দরুদ পড়ে ফুঁ দাও। বাবা ও ঘর থেকে বললেন।
হ্যাঁ দিচ্ছি। আপনি ঘুমান।
মার মুখের একথা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। কিন্তু আমার মা তো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা। শুধু আমার কাছে। তাকে তো অবিশ্বাস করা যায় না। আমি পাথর হয়ে বসে রইলাম। মা আমার দুই হাত ধরে ঝাঁকুনি দিলেন। বুকে টেনে নিলেন। মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে আমি ডুকরে কেঁদে উঠলাম। মাও কান্নার বাঁধ ধরে রাখতে পারল না। দুজনে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছি। পাশে শিমুর নিষ্পাপ মুখ।
বেশ খানিক সময় পেরিয়ে গেল। মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে শুয়ে আছি। থেকে থেকে কান্নার ঢেঁকুর উঠছে।
আমরা যে বসত-ভিটার ওপর ঘর করে আছি, এটাও নারায়ণ ডাক্তারের জায়গা। যুদ্ধের সময় তোর বাবা জোর করে দখল করেছিল।
কী বলছো মা?
হ্যাঁ।
আচ্ছা মা, তোমার বিয়ে কি মুক্তিযুদ্ধের আগে হয়েছিল? না পরে।
পরে।
তাহলে তুমি কি সবকিছু জেনেশুনেই বাবাকে বিয়ে করেছিলে?
বলব। তোকে আমি সব বলব। রাত অনেক হয়েছে। এখন ঘুমা। আর শোন কাল সকালে যেন তোর বাবা কিছুই বুঝতে না পারে। স্বাভাবিক থাকবি। হ্যাঁ মা স্বাভাবিক থাকব। কিন্তু মা-
আবার কিন্তু কি?
মৌলানা শরাফত খান এতদিন যাকে আমি বাবা বলে ডাকতাম, তাকে আজ থেকে আর বাবা ডাকব না। আমার মুখ দিয়ে ওই খুনি লোকটাকে আর বাবা ডাক আসবে না।
কী বলছিস রাবু?
হ্যাঁ মা, আমার শপথ।
তাহলে তো সব বুঝে যাবে।
বুঝবে না। তবে সময় হলে তখন আমি নিজেই বুঝিয়ে দেব।
ঠিক আছে। কিন্তু এমন কিছু করিস না যাতে সংসারে নতুন করে অশান্তি হয়।
মা তুমি ভেবো না।
আয় বুকে আয়।
মা আমাকে বুকে জড়িয়ে নিল। কিন্তু আমার দুই চোখে ঘুম আসে না।
(চলবে)
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
আহা চিকুনগুনিয়া !
ঈদের দিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে মেঝেতে পা দিয়ে আমিবিস্তারিত পড়ুন
‘দৃষ্টিশক্তি থাকা, কিন্তু জীবনে লক্ষ্য না থাকা অন্ধত্বের চেয়েও খারাপ’
চক্ষু, কর্ন, জিহবা, নাসিকা, ত্বক – মানুষের এই পাঁচটি ইন্দ্রিয়েরবিস্তারিত পড়ুন
ধর্ষিতা মেয়েটির গল্প
পারিনি সেদিন নিজেকে শোষকদের হাত থেকে রক্ষা করতে, পারিনি সেদিনবিস্তারিত পড়ুন