বিএনপি-জামায়াতে টানাপোড়েন, না অন্য কিছু?

অনেক দিন ধরেই রাজনীতিতে প্রকাশ্যে নেই জামায়াতে ইসলামী। এমনকি ২০-দলীয় জোটের বৈঠকে কোনো প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে না এই অন্যতম শরিক দলটি। গত পরপর তিনটি বৈঠকে এ অবস্থা দেখা গেছে। অথচ বর্তমান সময়ের চেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতেও জোটের বৈঠকে নিয়মিত প্রতিনিধি পাঠাতো জামায়াত।
জোটের সঙ্গে এই দূরত্ব রেখে চলার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি জামায়াতের পক্ষ থেকে। ফলে জোটের অন্য দলগুলোর মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে নানা কৌতূহলের। জোটের ভেতরে-বাইরে চলছে নানা আলোচনা।
এদিকে বিএনপির কোনো পর্যায়ের নেতাও মুখ খুলছেন না এ ব্যাপারে। জামায়াত প্রসঙ্গ এলেই তারা গদবাঁধা বক্তব্য আ্ওড়ে যান। বলা হয়, জামায়াতের নেতারা বৈঠকে না থাকলেও তাদের সম্মতি আছে। শরিক দল হিসেবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগও আছে। তবে এই বক্তব্য মানতে নারাজ জামায়াতের সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে জোটের এমন দলের নেতারা। তারা বলছেন, সম্পর্কের টানাপোড়েন না হলে জামায়াত কেন এভাবে একর পর এক বৈঠক বর্জন করবে?
জোটের একটি দলের মহাসচিবের দাবি, গত পৌরসভা নির্বাচনের আগে থেকে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু। তবে জোটগতভাবে নির্বাচনের কথা বললেও বিএনপির পক্ষ থেকে শরিকদের ছাড় না দেয়ায় পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করে। এ কারণেই হয়তো জোটের বৈঠকে অংশ নিচ্ছে না জামায়াত।
একটু পেছনে ফেরা যাক। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে জোট নেতাদের সঙ্গে ওই মাসের ১৯ তারিখ বৈঠক করেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে বৈঠকে যোগ দেননি জামায়াতের কোনো প্রতিনিধি।
ওই সভার শেষে বিএনপির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদিকদের জানান, তারা পৌরসভা নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নেবেন। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে ২৩৪টির মধ্যে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও এলডিপিকে একটি করে পৌরসভায় ছাড় দেয়া ছাড়া অন্য কোনো দলকে ছাড় দেয়া হয়নি। এ নিয়ে জোটের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল।
দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে না পারলেও জামায়াত কমপক্ষে ২০টির মতো পৌরসভায় বিএনপির কাছ থেকে ছাড় চেয়েছিল। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে আশানুরূপ সাড়া না মেলায় প্রায় ৩০টি পৌরসভায় স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামে দলটি। শেষ পর্যন্ত জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা মেয়র পদে নির্বাচিত হন। অনেকগুলো কাউন্সিলর পদেও জামায়াত-সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হন।
পৌরসভা নির্বাচনের উত্তাপ শেষ হতে না হতেই আসে দেশব্যাপী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হওয়া এই নির্বাচনও ২০ দল জোটগতভাবে অংশ নেবে কি না এমন আলোচনা সামনে চলে আসে।
পরে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকেও অংশ নেয়নি জামায়াত।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেয়া হয় পৌরসভার মতো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও জোটগতভাবে অংশ নেবে ২০ দল। তবে জোটের একাধিক দলের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায় ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, জোটের বৈঠকে কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন করা হবে এ নিয়ে সেভাবে কারও মতামত নেয়া হয়নি।
জোটের কয়েকজন নেতা বিএনপির কাছে চেয়ারম্যান প্রার্থী দেয়ার সুযোগ চাইলে অন্য একজন এ নিয়ে বিএনপিকে চাপ না দেয়ার অনুরোধ জানান। পরে জোটগতভাবে নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হয়।
কিন্তু গত দুই দফার ইউপি নির্বাচনে জোটের শরিকদের মধ্যে জামায়াত ছাড়া বাকি দলগুলো হাতেগোনা কয়েক জায়গায় প্রার্থী দেয় বলে জানা গেছে। তবে জামায়াত অধ্যুষিত হিসেবে পরিচিত জায়গাগুলোতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রার্থী দেয় বলে জোট সূত্রে জানা গেছে।
দুই দফা ইউপি নির্বাচনে মাঠে থাকলেও বিএনপি তথা ২০-দলীয় জোট শেষ ধাপ পর্যন্ত নির্বাচনী লড়াইয়ে থাকবে না বলে শোনা যায়। পরে এ নিয়ে মতামত জানতে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। জানা যায়, বেশির ভাগ নেতা নির্বাচনে থাকার পক্ষে মত দেন। পরে সোমবার জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি-প্রধান। সেখানেও একজন জোট নেতা নির্বাচন বর্জনের পক্ষে কথা বলেন। বাকিরা নির্বাচনে থাকার পক্ষে মত দেন। বৈঠকের পরেই বিএনপি নির্বাচনে থাকছে বলে ঘোষণা দেয়া হয়।
এদিকে অন্যান্য সময়ের মতো সোমবারের বৈঠকেও সবার নজর ছিল জামায়াতের যোগ দেয়া-না দেয়ার দিকে। এবারও জামায়াতের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না বৈঠকে।
বৈঠক অনুষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “অন্যান্য দলের মতো জামায়াতকে সব সময় বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে জামায়াতের নেতাদের পাওয়া কষ্টকর হয়। এরপরও কেন আসে না তারাই ভালো বলতে পারবেন।”
জামায়াতকে নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে বলেও মনে করেন ওই নেতা।
জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ আছে জোটের এমন একটি দলের মহাসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “দুই দলের সম্পর্কে যে টানাপোড়েন চলছে, তা কিন্তু দিনে দিনে স্পষ্ট হচ্ছে। হরতাল-অবরোধের সময়ও জামায়াতের প্রতিনিধি জোটের বৈঠকে অংশ নিতেন। এখন তো পরিস্থিতি স্বাভাবিক।কিন্তু জোটের বৈঠকে তারা আসছে না।” এমন অবস্থা চলতে থাকলে তা জোটের জন্য ক্ষতিকর হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন

আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন

জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন