যে ছয় কারণে বহিষ্কার ঢাবির ১৬ ছাত্র
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে আজীবন বহিষ্কৃত ১৬ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে পৃথকভাবে অন্তত ১৪টিরও বেশি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে যৌন হয়রানি, ধর্ষণের হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি, শিক্ষককে ধাক্কা মারা ও কক্ষ ভাঙচুর, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার মতো অভিযোগ আছে।
গত রোববার রাতে সিন্ডিকেট সভায় ১৬ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। এ সময় সিন্ডিকেটে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষককেও সাময়িক বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ বলেন, ‘১৬ জনের সবাই রাষ্ট্র এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের পরিপন্থী কাজ করায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে।
তাদের অপরাধ চিহ্নিত হওয়ার পর প্রথমে তাদের প্রক্টরিয়াল বিধি ৫(২) ধারা অনুযায়ী সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিষদের সাব-কমিটি প্রত্যেকের অপরাধের ধরন সম্পূর্ণভাবে চিহ্নিত করে এবং সবাইকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারপর সিন্ডিকেট সভায় তাদের স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ করে সাব-কমিটি।’
হিজবুত তাহরির প্রচারপত্রের জন্য ছয়জন
গত বছরের জুনের শেষের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের শিক্ষকদের রুমে গিয়ে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীরের প্রচারপত্র (লিফলেট) বিতরণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরে ওই দৃশ্য অনুষদের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় ধরা পড়ে এবং শিক্ষকরাও তাদের বিষয়ে অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। গত ৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মোট পাঁচজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রক্টরিয়াল বিধি ৫(২) ধারা অনুযায়ী সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গত ৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে হিজবুত তাহরীরের প্রচারপত্র বিতরণ করার সময় ওই ইনস্টিটিউটের এক ছাত্রকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে তাকেও সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ।
হিজবুত তাহরীর প্রচারপত্র বিলির দায়ে আজীবনের জন্য বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মো. আবদুল মতিন, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজের মো. শিহাব উদ্দিন ও সাঈদী হাসান সজীব, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমের নকিব ফরহান, আলমগীর হোসেন এবং তরিকুল ইসলাম।
পরীক্ষায় প্রক্সির জন্য তিনজন
গত বছরের ২ নভেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র আলী হোসেন জনি। একই অপরাধে ২৭ নভেম্বর নার্সিং কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক হন মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মেহেদী হাসান সুমন এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক হন ফার্মেসি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র রাসেল সোহরাব। পরে তাঁদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ।
ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির দায়ে তিনজন
২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকায় গত বছরের নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের ছাত্র মো. ফরহাদ উদ্দিন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এস এম ইমরুল কায়েস শুভ এবং চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগের দ্বীন মোহাম্মদ সোহেলকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সাময়িক বহিষ্কার করে।
যৌন নিপীড়নে জড়িত থাকায় দুজন
গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় হাতেনাতে আটক করে ভূ-তত্ত্ব বিভাগের ছাত্র আমির আবরার নাহিদকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর। ওই ঘটনার ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা এবং একে কেন্দ্র করে অমর একুশে হলের প্রাধ্যক্ষের কক্ষ ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত ছিলেন খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সাদ্দাম হোসেন। পরে দুজনকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ধর্ষণের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজিতে একজন
গত বছরের ১৬ আগস্ট রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বান্ধবীকে ধর্ষণের ভয় দেখিয়ে তাঁর বন্ধুর কাছ থেকে এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নেওয়ায় রাজীব বাড়ৈ নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি ও বুদ্ধিস্ট বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। তিনি জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের পাঠাগার সম্পাদক ছিলেন। পরে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ব্যঙ্গচিত্র করার দায়ে একজন
গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর চারুকলা অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক ড. নিসার হোসেনকে ব্যঙ্গ করে পোস্টার ছাপিয়ে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন আরেফিন হোসেন নামের ওই অনুষদের এক ছাত্র। পরে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরেফিন হোসেন চারুকলা অনুষদের ডিন কক্ষ ভাঙচুর করেন। পরে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ বলেন, ‘এ ধরনের বহিষ্কারের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত একটি বিষয়। তবে এবার কিছুটা বেশি হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি করার ইচ্ছা আমাদের নেই। কিছু অপরাধের এ ধরনের শাস্তি দিতেই হয়, যাতে ভবিষ্যতে এমন অপরাধ কেউ করার সাহস না পায়।’
এদিকে সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, গত রোববার রাতে সিন্ডিকেট সভায় আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের জার্মান ভাষা বিভাগের শিক্ষক আশরাফ উজ জামান সরকারকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। তিনি অনুমতি না নিয়ে জার্মান দূতাবাসে চাকরি নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ আছে। এ ছাড়া এক ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িত থাকার অভিযোগে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক আবু মূসা মো. আরিফ বিল্লাহর দুই বছরের বার্ষিক বর্ধিত বেতন (ইনক্রিমেন্ট) বন্ধ ও এক বছর কোনো ধরনের ইনক্রিমেন্ট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
বিক্ষোভকারীদের অধিকার সমুন্নত রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, বিক্ষোভকারীদের অধিকার সমুন্নতবিস্তারিত পড়ুন
ঢাবি বন্ধের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগে ধন্যবাদ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হল ছেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদেরবিস্তারিত পড়ুন
হত্যাকাণ্ডসহ সব অনভিপ্রেত ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অহেতুক কতগুলো মূল্যবান জীবন ঝরে গেল।বিস্তারিত পড়ুন