শিশুটিকে পুলিশ সদস্যই বাসে তুলে দিত, তাহলে কেন?
চট্টগামে নিহত এসপির স্ত্রী মাহমুদা খানম হত্যার ঘটনার আগে ছেলেটিকে প্রতিদিনই পুলিশ কনস্টেবল সাদ্দাম হোসেন সকালে এসে স্কুলবাসে তুলে দিতেন। শনিবার রাতে তাঁকে ফোন করা হয়নি। এ জন্য কাল তিনি আসেননি। ফলে মা মাহমুদা খানমের সঙ্গেই কাল বাসা থেকে বের হয়েছিল সে। পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনলাইন এক্টিভিস্ট শামস রাশীদ জয়।
বাবুল আক্তারের বাসার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন পুলিশের কনস্টেবল সাদ্দাম হোসেন। বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম খুন হওয়ার খবর শুনে সাদ্দাম ছুটে যান ওই বাসায়। শিশুটিকে কোলে নিয়ে কাঁদতে থাকেন তিনি। চিৎকার করে বলতে থাকেন, কেন তাঁকে ফোন করা হয়নি। কেন ভাবি (মাহমুদা) তাঁকে আসতে বললেন না।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যায় ওই বাসা থেকে পুলিশ লাইনে গিয়েছি। শনিবার রাতে কেন ভাবি আমাকে ফোন করলেন না। আজ (গতকাল) সকালেও কেন জানালেন না। আমি যদি আসতাম তাহলে হয়তো ভাবি বেঁচে যেতেন। আজ সকালে আমি কেন বাসায় আসলাম না…।’
মাহমুদা খানমের এমন মৃত্যুর জন্য নিজেকে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারছিলেন না এই পুলিশ সদস্য। অন্যরা সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলেও তাঁর কান্না থামছিল না। সকাল নয়টার দিকে তিনি যখন আক্ষেপ আর আহাজারি করছিলেন, এর দুই ঘণ্টা আগে ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ও গুলিতে খুন হন মাহমুদা খানম। ঘটনাস্থল থেকে ওই বাসার দূরত্ব বড়জোর ১০০ গজ।
ফেসবুকে জয় লিখেছেন- ‘কনস্টেবলের না আসার কারণ কি? অসুস্থতা, ডিউটি, আদেশ, দেরী, না অন্য কিছু? আসছে না, সেটা কি জানিয়েছিল?’
জঙ্গিদের আতঙ্ক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুর নিহত হবার ঘটনায় একটা ভয়ংকর তথ্য উঠে এসেছে : ‘সাদ্দাম হোসেন নামের এক কনস্টেবল জানান, সাধারণত সকালে একজন কনস্টেবল এসে বাবুল আক্তারের ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যেতেন। পরে মিতু তার ছোট মেয়েকে নিয়ে যেতেন কাছের এক স্কুলে। সেখানে প্লে গ্রুপে ভর্তি করা হয়েছে মেয়েটিকে। রোববার সকালে কনস্টেবলদের কেউ না আসায় মিতু নিজেই ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে বেরিয়ে খুন হন। তার ছোট মেয়ে তখন বাসায়, গৃহকর্মীর কাছে।’
তাহলে কি, নিহত মিতুর সকাল সাড়ে ছয়টায় জনবিরল সময়ে এই রাস্তায় হেঁটে যাওয়াটা রুটিন ছিল না? উনার রুটিন ছিল আরও অনেক পরে বের হওয়া? খুনিরা কি তাহলে এত সময় ধরে অপেক্ষা করতো? পথচারী ও দোকানদারদের প্রশ্নের উদ্রেক না করে এত সময় ধরে অপেক্ষা করা কি ও আর নিজাম রোডে সম্ভব?
না কি, খুনিরা আগে থেকে খবর পেয়েছিল? আগে খবর পেলে সেই খবর কে কে জানতে পারে? সেই কনস্টেবল, কনস্টেবলের সহকর্মী, নিহত মিতুর গৃহকর্মী, ভবনের প্রহরী, পড়শী, বা অন্য কেউ?
কনস্টেবলের না আসার কারণ কি? অসুস্থতা, ডিউটি, আদেশ, দেরী, না অন্য কিছু? আসছে না, সেটা কি জানিয়েছিল?
এই ঘটনা সংশ্লিষ্ট কারও মোবাইলের লাইনে কি ফোন-ট্যাপিং অন করা ছিল, মানে ইনারা কাউকে খবর না দিলেও সেই খবর কি তৃতীয় পক্ষ পেতে পারতো? সেটা হয়ে থাকলে সেই ট্যাপিং এর অ্যাডমিন কে?
অনেক প্রশ্ন, অনেক ক্লু। এবার ক্লু বেশী হওয়ার কথা। অন্যান্যবার যেমন ফরেনসিক পুলিশ আসার আগেই জনতা আর সাংবাদিক যেভাবে ক্রাইম-সিন পায়ে মাড়িয়ে আলামতের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন, এবার সেটা হয় নি মনে হয়। তাই মনে হচ্ছে খুনিরা দ্রুতই ধরা পড়বে।
এত কথা বলছি, কারণ এই আঘাতটি রাষ্ট্রের উপর। রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের উপর। কতটা সঠিকতা ও দ্রুততার সাথে এই খুনিদের আইনের আওতায় আনা হবে তার উপর অনেকটা নির্ভর করবে এই সমাজের সামনের পথটি আরও শান্তির না আরও নৈরাজ্যের হবে।
ইতিমধ্যেই দেখছি দিকে দিকে থেকে ক্রসফায়ারের দাবী আসছে। ক্রসফায়ার হলে সেটা জনগণও পছন্দ করবে, অতীতেও করেছে। কিন্তু পেছনের অপরাধীরা, গডফাদারেরা পার পেয়ে যাবে। তেমনটা যেন না হয়।
জঙ্গি দমন করতে হলে গডফাদারদের দমন করতে হবে। ক্রসফায়ার করা মানেই গডফাদারদের স্যুট টাই পড়ে সুশীলগিরি, টকশোবাজি, মানবাধিকারবারিগিরি, দূতাবাসমর্দন, বিদেশী জঙ্গিদের দায় স্বীকারের ব্যবসা, অ্যামনেস্টিদের বাণিজ্য, ওয়ান ইলেভেনের জন্য গ্যাংবাজি, ইত্যাদি করার সুযোগে ‘লাইফ’ দেয়া।
দয়া করে জঙ্গিদের গডফাদারদের ‘লাইফ’ দেবেন না। খুনিদের পাকড়াও করেন, সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেন, ও তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সাক্ষ্য, সূত্র, প্রমাণ, ইত্যাদি থেকে জঙ্গিদের সাথে সাথে গডফাদারদেরও আইনের আওতায় আনুন। শুধু আজকের জঙ্গি না, ভবিষ্যতের জঙ্গিও দমন হবে তাতে করে।
পাকড়াও করা জঙ্গিদের বিচার করা হচ্ছে প্রচলিত আইনে। যেই পন্থায় ‘বিলম্ব’ শুধু স্বাভাবিক না, অপরাধীর অধিকারের পর্যায়ে পৌঁছেছে। মনে হয় সময় হয়েছে জঙ্গিদের বিচারের জন্য পৃথক আইন ও আদালতের ব্যবস্থা করার। কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি বা সুপেরিয়র রেসপন্সিবিলিটির দায় সেই আইনের অংশ হতে হবে। জঙ্গি ধরা পড়বে আর ষড়যন্ত্রকারীরা বহাল তবিয়তে ভবিষ্যতে নতুন জঙ্গি উৎপাদন চালিয়ে যাবে, তাতে করে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জঙ্গিমুক্ত হবে না – কখনই।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
চট্টগ্রামে চিনির গুদামে আগুন- ১৭ ঘণ্টা পরও পুরোপুরি নেভেনি
গতকাল (৪ মার্চ) বিকালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার ঈসানগর এলাকায় অবস্থিতবিস্তারিত পড়ুন
পাল্টাপাল্টি অবস্থানে ছাত্রলীগ চবিতে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষক আমীর উদ্দিনকে অপসারণ ও লাঞ্ছনার বিষয়েবিস্তারিত পড়ুন
ঋণের বোঝা নিয়ে দম্পতির ‘আত্মহত্যা’
মন্দিরের পাশেই কুঁড়েঘরে থাকতেন পুরোহিত স্বপন দে ও তাঁর স্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন