অচল ঢাকা ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনে , জনভোগান্তি চরমে
পূর্বঘোষিত কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর অন্তত আটটি স্পটে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনরত বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর ফলে ওই সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এতে কিছু সড়কে যেমন তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি কিছু সড়কে যানবাহনের দেখা মিলছে না। এ পরিস্থিতিতে কেউ যানবাহনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে সময় পার করছেন। আবার কেউ হেঁটে তপ্ত দুপুরে গন্তব্যের উদ্দেশে ছুটছেন।
টিউশন ফি’র ওপর আরোপিত সাড়ে ৭ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহারের দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন রবিবার সকাল থেকেই রাস্তায় নামেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিন রাজধানীর ধানমণ্ডি, কলাবাগান, পান্থপথ, আসাদগেট, বনানী, মহাখালী, রামপুরা, বাড্ডা ও উত্তরায় গিয়ে দেখা যায়, ওই সব এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। এর ফলে ওই সব সড়কে পরিবহন চলাচল করতে না পারায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
কারওয়ান বাজার থেকে মতিঝিল যেতে চান আব্দুল মজিদ। প্রায় ১ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও তিনি কোনো বাস পাননি। পরে দেড় শ’ টাকায় সিএনজি ভাড়া করে রওয়ানা দেন। পুরো রাস্তা প্রায় ফাঁকা, বড় কোনো গাড়ি নেই। প্রাইভেটকার ও সিএনজি চলছে। কিন্তু পল্টন মোড় এলাকায় এসে সিএনজি পড়ে বেশ বড় রকমের যানজটে। শেষপর্যন্ত অফিসে পৌঁছেছেন আব্দুল মজিদ।
তিনি বলেন, যেখানে মানুষ আছে, সেখানে কোনো যানবাহন নেই। আর যেখানে যানবাহন, সেখানে শুধু যানবাহনের জট। এ ভোগান্তি চোখে না দেখলে বোঝানো যাবে না।
ক্লাস বর্জনের পর ক্যাম্পাসের সামনের রামপুরা-বাড্ডা সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্টের শিক্ষার্থীরা।
রামপুরার আফতাবনগরে রবিবার সকাল ১০টা থেকে ক্লাস বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর সাড়ে ১০টা থেকে তারা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সালাহ উদ্দিন মিঠু বলেন, ‘ভ্যাট প্রতাহারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা ক্লাস বর্জনের পর সড়ক অবরোধ করেছি। সারাদেশে যে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে সে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের সরকারি সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আমাদের এ চলমান আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
রাজধানীর পান্থপথ সিগন্যালে সড়ক অবরোধ করেছেন তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ভ্যাট প্রত্যহার না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন তারা।
বেলা সাড়ে ১০টা থেকে এশিয়া প্যাসিফিক, সিটি ইউনিভার্সিটি ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী পান্থপথ সিগন্যালে সড়ক অবরোধ করেন। এতে নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, ফার্মগেট এলাকার আন্তঃসড়কগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী শুভ রায় বলেন, ভ্যাট প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাস্তা ছাড়ছি না। অবরোধ লাগাতার করার ব্যাপারে আমরা সবাই একমত।
এদিকে কলাবাগান ও ধানমণ্ডির বিভিন্ন স্পটে রবিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা।
‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ আন্দোলনের মুখপাত্র ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমরা মিছিল নিয়ে ধানমণ্ডির বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়েছি।’
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে ১০টা থেকে তাদের ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান নেন। পরে পৌনে ১১টায় সোবহানবাগে রাস্তা অবরোধ করে রাখেন তারা। ফলে ধানমণ্ডি-মিরপুর রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
সিটি ইউনিভার্সিটির আন্দোলনরত শিক্ষার্থী রবি চৌধুরী বলেন, ‘১১টা থেকে আমরা রাস্তায় নেমেছি।’
এদিকে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ধানমণ্ডির খান মসজিদ রোড অবরোধ করে রেখেছেন স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। তারা ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে নানা ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন।
এছাড়া ইউ ল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।
ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে উত্তরার হাউস বিল্ডিং এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থী। ফলে আব্দুল্লাহপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। বেলা ১০টা থেকেই বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি, শান্তা মারিয়াম ও উত্তরা ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উত্তরা হাউস বিল্ডিং সড়ক অবরোধ করে রাখে।
পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর অবরোধে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের হাউস বিল্ডিং থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের দখলে থাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে শান্তা মারিয়ামের শিক্ষার্থী শোয়েব বলেন, পুলিশ সদস্যরা আমাদের রাস্তা অবরোধ ছেড়ে মানববন্ধন করতে বলেছিল। কিন্তু আমরা দাবি বাস্তবায়ন না হলে রাস্তা ছাড়ব না।
এদিকে উত্তরায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পুলিশ লাঠিপেটা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে বনানী (পশ্চিম) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী হোসেন খান বলেন, ‘আমারা কোনো শিক্ষার্থীকে লাঠিপেটা বা হামলা করিনি। বরং শান্তিপূর্ণ আন্দোলন পালনে পুলিশ তাদের সহায়তা করছে। তা না হলে উত্তরা এলাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এতগুলো শিক্ষার্থী এক জায়গায় জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে পারত না।’
অন্যদিকে মহাখালী থেকে কাকলি পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন সাউথ ইস্ট, নর্দান, এআইইউবি, প্রাইম এশিয়াসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ফলে মহাখালী ও কাকলি চৌরাস্তা থেকে গুলশান, বনানী, উত্তরা, মিরপুর কিংবা গুলিস্তান কোনো দিকের যানবাহনই চলাচল করতে পারছে না।
তবে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিকে ঘিরে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও।
গুলশান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করছি তারা যেন সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রাজধানীতে আনসার ব্যাটালিয়ন মোতায়েন
ঢাকা মহানগরীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৬ প্লাটুন আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য মোতায়েনবিস্তারিত পড়ুন
ঢাবি বন্ধের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগে ধন্যবাদ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হল ছেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদেরবিস্তারিত পড়ুন
রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ আহত ২৩
রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষে ছাত্রলীগ, শিক্ষার্থী, মহিলা আওয়ামী লীগবিস্তারিত পড়ুন