অজানা গল্পঃ গহীন অরণ্যে এক সংগ্রামী নারী
গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের একটি গ্রাম ফুলানিরসিট। সে গ্রামটির চারপাশেই রয়েছে সংরক্ষিত বনবিভাগের গহীর অরণ্য। অরণ্যের বুক চিড়ে রয়েছে একটি সড়ক। সেই সড়ক ধরে দুই কিলোমিটার গন্তব্যে কোনো ধরনের জনবসতি নেই। যে কেউ সড়ক ধরে যাতায়াত করলে গা ছমছম করে উঠবে। তবে এই রাস্তার উপরেই রয়েছে একটি ছোট চায়ের দোকান। যেখানে দোকানদারের দায়িত্বে রয়েছে ১২ বছর বয়সী আয়েশা আক্তার।
মায়ের অনুপস্থিতিতে বাবা ও ভাইকে নিয়ে গড়া সংসারের দায়িত্বপালন ও দোকানদারি শেষে তাকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয়ে পাঠ নিতে হয়। নিজের ও বড় ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচও যোগাতে হয় আয়েশা আক্তারকে। আর এভাবেই চলছে গহীন অরণ্যে তার টিকে থাকার সংগ্রাম।
আয়েশার বাবা মনসুর আহমেদের বাড়ি ছিল ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ব্রক্ষপুত্রের তীরে। সে বছর আটেক আগের কথা, নদীর তীব্র ভাঙনে ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেলে জীবিকার সন্ধানে মেয়ে আয়েশা ও পুত্র আসাদ মিয়াকে নিয়ে চলে আসেন গাজীপুরের শ্রীপুরে। তবে কোথাও মাথা গোঁজার ঠাই না পেয়ে এক স্বজনের পরামর্শমতে চলে যান মাওনা ইউনিয়নের ফুলারিসীট গ্রামে। সেখানে বেঁচে থাকার তাগিদে রাস্তার পাশেই খড়কুটো দিয়ে গড়ে তুলেন অস্থায়ী ঘর। ঘরের ভেতরে বাপ ছেলে মেয়ের রাতের বেলায় থাকার ব্যবস্থা হলেও সংসার চালানোর ব্যয় নির্বাহের জন্য বারান্দায় চায়ের দোকান খুলে বসেন। আর দোকানদারির দায়িত্ব পড়ে আয়েশার ওপর। আয়েশার অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বারতোপা উচ্চ বিদ্যালয় হতে সপ্তম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে সে। তাঁর ভাই আসাদ মিয়াও অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে শুরু হয় আয়েশার সংগ্রাম যা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। সকালে একদিকে পরিবারের রান্না ও দোকান সামলে তাকে হেঁটে পাঁচ কিলোমিটার দূরে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। পানির যোগানের চাহিদা মেটানোর জন্য টিয়োবওয়েলের ব্যবস্থা না থাকায় দুই কিলোমিটার দূর হতে কষ্ট করে তাকে দোকান ও পরিবারের জন্য পানি টেনে আনতে হয়। দোকানদারির ফাঁকে ফাঁকে আবার বিদ্যালয়ের পড়া শিখতে মন দিতে হয় তাকে।
আয়েশার বাবা মনসুর আহমেদ জানান, দারিদ্র্যের কারণে তাকে বিভিন্ন জায়গায় কাজে যেতে হয় অনেক সময় ফিরতে হয় গভীর রাতে এ সময় গভীর বনের ভেতর তাকে একাই থাকতে হয়। পুরো সংসার সামলানোর ভার এখন আয়েশার ওপর। সে চায়ের দোকান পরিচালনার পাশাপাশি তার ভাইয়েরও লেখাপড়ার খরচের যোগান দিয়ে থাকেন। তবে নিজের লেখাপড়ার পাশাপাশি সংসার চালাতে তার মেয়েকে প্রতিদিন ১৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করতে হয়। তার সাফকথা সে কষ্ট করে নিজে ও তার ভাই যেভাবেই হোক উচ্চ শিক্ষালাভ করবে।
আয়েশার ভাই আসাদ মিয়া জানান, এমন বোন পেয়ে তিনি খুব খুশি। তার মায়ের অবর্তমানে সংসারের সবকিছু সময়মত আয়েশা করে থাকেন। আবার নিজের লেখাপড়াও সমানতালে করে যাচ্ছেন। তবে সে মাঝে মাঝে আয়েশার কাজে সহযোগিতা করেন।
আয়েশা আক্তার নিজের অভিপ্রায় ব্যক্ত করতে গিয়ে জানায়, তাঁর স্বপ্ন যেভাবেই হোক উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। এর জন্য যেকোনো ধরনের পরিশ্রম করতে সে আগ্রহী। নিজের ও ভাইয়ের লেখাপড়ার জন্য সে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করে। কখনো সংসারের রান্না আবার কখনো রান্নার লাকড়ি কুড়ানো পাশাপাশি দুই কিলোমিটার দূর থেকে পানির যোগান দেয়া এরই মাঝে আবার দোকান চালিয়ে বিদ্যালয়ে গমন করা সবই সংগ্রামের মধ্যেই করতে হচ্ছে।
মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য সুরুজ্জামান জানান, আয়েশা ও তাঁর ভাই নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে চায়ের দোকান চালিয়ে লেখাপড়া করে যাচ্ছে। আয়েশাকে এলাকার সবাই মেয়ের মতো স্নেহ করেন। তবে মেয়েটি আমাদের এলাকার এক রোল মডেল।
বারতোপা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক কবির হোসেন জানান, আয়েশা অনেক দূর হতে হেটে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেন। একটি চায়ের ব্যবসা পরিচালনা ও সংসার সামলিয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়া সত্যিই প্রশংসনীয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
চা কন্যা খায়রুন ইতিহাস গড়লেন
চা শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সব মহলেই পরিচিত হবিগঞ্জেরবিস্তারিত পড়ুন
চার্জ গঠন বাতিল চেয়ে রিট করবেন ড. ইউনূস
শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.বিস্তারিত পড়ুন
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন