অন্যরকম আর বিখ্যাত যত জেল দাঙ্গা!
জেল, কয়েদী, পুলিশ- শব্দগুলো শুনলেই গা কেমন শিউরে ওঠে। তার ওপর যদি ব্যাপারটা হয় জেলদাঙ্গা তাহলে তো আর কোন কথাই নেই। নিশ্চয়ই খুব ভয়ংকর কোন ব্যাপার! এই তো ভাবছেন? আসলেও তাই। একেকটা জেলদাঙ্গা মানেই তো আরো কিছু মানুষের লাশ। সেটা পুলিশেরই হোক কিংবা কয়েদীর। কিন্তু আপনি কি জানেন যে পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কিছু জেলদাঙ্গার উল্লেখ রয়েছে যেগুলো বস্তুত দাঙ্গা আর খুনের ব্যাপারটাকে বয়ে নিয়ে বেড়ালেও আদতে অনেকটাই হাস্যকর আর অন্যরকম। চলুন তাহলে দেখে আসি এমনই কিছু জেলদাঙ্গাকে।
১. আসামীকে খুন করে পুলিশ গেল জেলে!
কারানডিরুর ঘটনা। ১৯৯২ সালের কথা সেটা। ল্যাটিন আমেরিকার সবচাইতে বড় জেলখানা কারানডিরু আরো একটা কারণে পরিচিত ছিল। আর সেটা হল এর অতিরিক্ত বাসিন্দা। জায়গা মোট ৩.৫০০ জনের জন্যে হলেও সেখানে মোট কয়েদী ছিল ৭,৩০০। ফলে যে কোন সময় যে কোন দুর্ঘটনা ঘটবার জন্যে একদম তৈরিই ছিল মানসিকভাবে সবাই। আর খুব বেশি অপেক্ষাও করতে হয়নি সেজন্যে। অক্টোবরের এক সুন্দর বিকেলে হঠাৎ করেই এক জেলের ভেতরকার দুই প্রতিদ্বন্ধী মাদক চোরাচালান দলের ভেতরে লেগে গেল তুমুল ঝামেলা। প্রথমটায় খুব একটা আমলে নেয়নি পুলিশ সেটাকে। তবে তিন ঘন্টা কেটে যাওয়ার পরেও যখন ঘটনার কোন সমাপ্তি দেখা গেলনা, বরং একটু একটু করে সীমা ছাড়িয়ে যেতে লাগল সেটা- এগিয়ে গেল পুলিশ। শুরু হল ৩০০ জন পুলিশের অবিরাম গোলাগুলি। টানা গুলিবর্ষণে মারা গেল ১১১ জন কয়েদী (ভাইস)। কেবল তাই নয় আহত হল আরো ৩৫ জন। পুলিশদের ভেতরে কেউ মারা না গেলেও আহত হল ২২ জন। আর এই পুলিশের না মারা যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই শুরু হল কথা। অনেকের কথায় পরে জানা যায় যে পুলিশেরা নির্বিচারে গুলি করেছিল সেদিন। এমন অনেকেই মারা পড়েছিল গুলিতে যাদের কোন রকম আক্রমণের মনোভাব ছিলনা। চাক্ষুষ সাক্ষীদের মতে অনেকে সেসময় লুকিয়ে ছিল কিংবা আত্মসমর্পন করেছিল। কিন্তু তবুও পুলিশ তাদেরকে গুলি করে মেরে ফেলে। ব্যাপারটি একসময় এতটাই জোরালো হয়ে ওঠে যে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগেও অভিযুক্ত করা হয় কারানডিরু দাঙ্গার সাথে যুক্ত পুলিশদেরকে। কর্নেল উবিরতন গুয়মারাইসকে অতিরিক্ত শক্তি মোতায়েনের অভিযোগে আভিযুক্ত করে তাকে ও আরো অনেক পুলিশকে কয়েদীদের খুনের দায়ে জেলের সাজা দেওয়া হয়। অনেককে দেওয়া হয় ৬২৪ বছর অব্দি জেলের শাস্তি।
২. জেলেই যখন আশ্রয় নিল কয়েদীরা!
কোয়ালা-ই- জাঙ্গীর দাঙ্গার কথা বলছি। ২০০১ সালের নভেম্বরের কথা সেটা। তখনো ১১ সেপ্টেম্বরের কথা মন থেকে হারায়নি মানুষের। ঠিক এমন একটি সময়েই আফগানিস্তানে উত্তরের মৈত্রীপক্ষ তালেবান ও আল-কায়েদার মোট ১,০০০ জন মানুষকে আটক করে এবং কোয়ালা-ই-জাঙ্গীতে কয়েদ করে। সবটাই ঠিক ছিল তাদের। কেবল ভুল রয়ে গিয়েছিল একটি জায়গায়। আর সেটা হল এতগুলো মানুষকে বন্দী করবার পরেও তাদের মাথায় একবারের জন্যেও আসেনি যে এদের তল্লাশি করা দরকার। ফলে সেটাই হয়েছিল যেটা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। পকেটে করে নিয়ে আসা লুকোন গ্রেনেডের আঘাতে মারা যেতে হয় অনেককে তখন ঐ জেলখানায়। তবে ঘটনা এতটুকুতেই শেষ হয়নি। ব্যাপার আরো ভিন্ন মোড় নেয় যখন এই ঘটনার তদন্ত করতে সিআইএ এর দুজন আমেরিকান অফিসার ২৫ নভেম্বর আফগানিস্তানে আসে। গার্ডের কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে জনি মাইকেল স্প্যান নামের একজনকে মেরে ফেলে এক কয়েদী। এরপর আরো কয়েদীদের সাথে মিলে দাঙ্গা বাঁধিয়ে দেয় সে সেখানে। পরবর্তীতে পুরো ব্যাপারটা সামাল দিতে আমেরিকা ও ব্রিটেন এগিয়ে আসে। সাহায্য করে উত্তরের মৈত্রীদের। টানা এক সপ্তাহ গোলাগুলি চলতে তাকে। অনেক কয়েদী মারা যায়। তবে শেষ অব্দি আর সবাইকে আয়ত্ত্বে আনা গেলেও ১০০ জন কয়েদী মাটির নীচে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানেই তারা পরবর্তী চারদিন অবস্থান করে ও প্রতিরোধ চালিয়ে যায়। প্রথমে বেরিয় আসতে বললেও না শোনায় তেল ঢালা হয় নীচে আর জ্বালিয়ে দেওয়া হয় আগুন। কিন্তু তাতেও কোন কাজ না হওয়ায় বরফ শীতল পানি দিয়ে ভরে দিতে শুরু করে সৈন্যরা নীচের ঘরটি। এবার বেরিয়ে আসে তখন অব্দি বেঁচে থাকা কয়েদীরা। তবে এত ঝামেলার শেষে আটককৃত ১,০০০ জন কয়েদীর ভেতরে জীবিতাবস্থায় পাওয়া যায় মাত্র ৮৬ জনকেই!
৩. সাধারন মানুষ লড়ল কয়েদীদের জন্যে!
এমন একটা দৃশ্য চিন্তা করুন তো যেখানে কয়েদীরা নয়, বরং সাধারন মানুষেরা দাঙ্গা করছে, লড়ছে, আন্দোলন করছে জেলখানার সামনে। আর তাও কয়েদীদের জন্যে? নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন! ভাবছেন সাধারণ মানুষদের কি এমন দরকার পড়েছে যে তারা জেলের ঐ বাজে আর অসভ্য অপরাধীদেরকে বাঁচাতে চাইবে? বাঁচাতে নয়, নিউ ইয়র্কের অবার্ন রাজ্যের নাগরিকেরা রেহাই দিতে চেয়েছিলেন অবার্ন জেলের কয়েদীদেরকে আরো বেশি বাজে, কঠোর আর অপরাধী এক মানুষের হাত থেকে। আর এই মানুষটি ছিলেন আর কেউ না, জেলখানার ওয়ার্ডেন এলাম লিন্ডস। ১৮২১ সালের কথা সেটা। প্রচন্ড অত্যাচারী হিসেবে শুরু থেকেই কুখ্যাত ছিলেন লিন্ডস। কি করতেন না তিনি অপরাদীদেরকে সাজা দেবার জন্যে? কয়েদীদেরকেও বিনা কারণে এটা ওটা শাস্তি দিতেন তিনি। আর তাও কোন ছোট-খাটো শাস্তি নয়, অনেক মারাত্মক সব শাস্তি। সেরকমই একদিন এক প্রহরীকে ডেকে লিন্ডস আদেশ দেন এক কয়েদীকে চাবুক মারতে। প্রহরী না করে দেওয়ায় তাকে গুলি করেন লিন্ডস। এ ঘটনায় ক্ষেপে ওঠে কেবল জেলখানার মানুষগুলোই নয়, পুরো রাজ্যের মানুষ ( লিস্টভার্স )। তারা আন্দোলন শুরু করে। পরবর্তীতে লিন্ডস এক চর্মকারকে এনে চাবুক চালানোর ব্যাপারটা সম্পন্ন করলেও জেল থেকে বেরোবার পর অবস্থা দেখবার মতন হয় চর্মকারের। তাকে শাস্তি দেয় নাগরিকেরা। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন লিন্ডস। তবে তার চাইতেও অনেক বেশি ক্ষেপে ওঠে কয়েদীরা। এলোপাথাড়িভাবে বেরিয়ে যেতে শুরু করে তারা। আগুন লাগিয়ে দিতে শুরু করে এখানে সেখানে। পরবর্তীতে পরিস্থিতি আয়ত্ত্বে আনেন লিন্ডস। আর পুরো ব্যাপারটা কয়েদীদের কাছে হয়ে দাড়ায় ফুটন্ত তেল থেকে আগুনে পড়ার মতন। আরো অনেক বেশি ভয়ানক আর অত্যাচারী হয়ে ওঠেন ওয়ার্ডেন।
৪. মিথ্যেবাদী কয়েদি!
ফ্রাঙ্ক অ্যাবাগনেল নামক এক কয়েদীর গল্প এটা। সেবার আটলান্টার জেলে আটকে রাখা হয় এই অপরাধীকে। ১৯৭১ সাল ছিল সেটা। বেশকিছুদিনের ভেতরে ফ্রাঙ্ক সম্পর্কে মাথাব্যথা পুরোটাই কমে গিয়েছিল পুলিশের। আর এই সময়েরই সুযোগ নেয় ফ্রাঙ্গ। আশপাশের প্রহরীদেরকে ধীরে ধীরে সে বিশ্বাস করিয়ে ফেলে যে সে আসলে কয়েদী নয়, বরং পুলিশের গোয়েন্দা ( বিজনেস ইনসাইডার )। কয়েদী সেজে সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে তথ্য নিচ্ছে। একটা সময় প্রহরীরা এতটাই বিশ্বাস করে ফেলে তাকে যে নিজ দায়িত্বে জেলের বাইরে দিয়ে আসে ফ্রাঙ্ককে। এরপর? আর কোনদিন দেখা পাওয়া যায়নি ফ্রাঙ্কের।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন