অন্যরকম হয়ে জন্মেছি বলে কি আমি মানুষ না?
‘আমার কি দোষ? অন্যরকম হয়ে জন্মেছি বলে কি আমি মানুষ না? আমারও তো ইচ্ছা হয় সবার মতো করে বাঁচতে। তবে পারিনি। আমার পরিবার আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এখন কোন খোঁজ খবরও নেয় না। আমাকে সবাই অবহেলা করে। আমার পরিবার আমাকে পরিচয়ও দেয় না। পরিবারের দাবি- আমাকে পরিচয় দিলে আমার ছোট ভাই বোনের বিয়ে হবে না। আমারও ইচ্ছা করে সবার মত স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে’ ঠিক এই ভাবেই নিজের মনের কথাগুলো বলছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) অধিকারী শিউলি।
রাজধানীর ‘ধানমন্ডি লেক’এখানে সবাই আসে পরিবার ও প্রিয় মানুষটির সাথে কিছুটা সময় একান্ত ভাবে কাটাতে। আবার কেউ বা আসে জীবিকা নির্বাহের খোঁজে। কাজরে ফাঁকে আমিও মাঝে মাঝে লেকে যাই।
ওখানে গেলেই প্রতিদিন একটা হিজড়া এসে বলে, ‘ভাইয়া কয়টা টাকা দাও না।’ সাংবাদিক হওয়ার কারণে মনের মধ্যের বিবেকটা জেগে উঠল। জানতে ইচ্ছে হলো শিউলীর সম্পর্কে। এরপর একদিন সুযোগ বুঝে শিউলীর কাছে জানতে চাইলাম তার নিজের সম্পর্কে। তখন শিউলী জানিয়েছে তার কষ্টেভরা জীবনের গল্প।
পাঠক আজকের লেখাটা কোন রাজনৈতিক, বিনোদন বা কোন প্রভাবশালীর খবর নয়। কেন যেন ইচ্ছে হলো শিউলিকে নিয়ে দু-কলম লেখার। শিউলির সকল কাজ কর্ম পর্যাবেক্ষণ করে দীর্ঘ ৫দিন পর লেখাটা লিখতে সক্ষম হয়েছি।
আসুন জেনে নেওয়া যাক হিজড়াদের জীবনের গল্প।
তোমার নাম কি? শিউলি।
বাড়ি কোথায়? এয়ারপোর্ট।
বাবা-মা কি করে?
শিউলির দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে শুরু করে।
শিউলি বাবা-মায়ের আদরের সন্তান ছিল। আর দশটা শিশুর মতো করেই বেড়ে উঠছিলো পরিবারের সাথে। জীবনের মাত্র ১০টি বছর পার হতেই শিউলির জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। বুঝতে পারে সে হিজড়া। তার মধ্যে মেয়েলী ভাব জন্মাতে থাকে। এরপর তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়।
পাঠক বলে রাখি, শিউলির বাবা এয়ারপোর্ট এলাকার এক সনামধণ্য ব্যবসায়ী। গাড়ী বাড়ি আর সাজ পোশাক সবই ছিল শিউলির জীবনে। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শিউলি ২য়। শিউলির অনুরোধে বাবার পরিচয় গোপন রাখা হলো।
শিউলি বলেন, আমার জীবন থেকে ১০ বছর পার হতেই নেমে আসে অন্ধকার। আমার কাছ থেকে চলে যায় হাসি-সুখ। আমি যখন একা থাকি কান্না ছাড়া আমার জীবনে আর কিছুই থাকে না। আমার বাবা-মা, ভাই -বোন থেকেও নেই। আমার মন কাঁদে তাদের জন্য কিন্তু আমার জন্য তাদের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। আমার ভাগ্য আজ আমাকে এখানে এনেছে।
পরিবার কেন তাকে বের করে দিয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি হিজড়া হওয়ায় পরিবারের মান সন্মান চলে যাবে। এ জন্যে আমার পরিবার আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। তাছাড়া আমার ছোট দুই বোন আছে তাদের ভালো ঘরে বিয়ে হবে না। তাই আমার পরিবার আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখে নি।
পরিবার থেকে বের করে দেয়ার পর শিউলীর স্থান কোন বিলাশ বহুল বাড়ীতে হয়নি। তার স্থান হয়েছে হিজড়া সর্দানীর কাছে। আর সেখানেই এখনো জীবন যাপন করছেন শিউলি।
বর্তমানে কি ভাবে চলছে, জানতে চাইলে শিউলী বলেন, আমি আছি এক সর্দারনীর কাছে। আমাকে থাকতে দিয়েছে। আমি সারাদিন ঘুরে যে টাকা উপার্জন করি তা সব তুলে দিতে হয় তার হাতে। তার ইচ্ছা হলে আমাকে টাকা দেয়, না হলে থাকা খাওয়াতেই চলে যায়।
শিউলী বলেন, আমরা আজ সমাজের চোখে বোঝার মতো। আমাদেরকে দেখলে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। আপনাদের মাধ্যমে আমি শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই আমার কি দোষ?
শুধু শিউলিই নয়, এমন হাজারো শিউলিকে দিয়ে উপর্জন করে নিজেদের থলি ভর্তি করছে কতিপয় অনেক সর্দারনী। আর তারা থেকে যায় ধরা ছোয়ার বাইরে।
শিউলির কথার সাথে একটি কথা বলতে হয়, হিজড়া হয়ে জন্মানো তো দোষের কিছু নয়। আমাদের সমাজে হাজারো শিউলি আজ জিম্মি হয়ে জীবন যাপন করছে। তাদের ভবিৎষত কি? কে তাদের দ্বায়িত্ব নিবে?
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তাদের কর্মসংস্থানের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। কর্মসংস্থান হিসেবে হিজড়াদের বিভিন্ন ট্রাফিক পুলিশের সহযোগী, বাংলাদেশ পুলিশ বাহীনিসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত করা হতে পারে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
চা কন্যা খায়রুন ইতিহাস গড়লেন
চা শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সব মহলেই পরিচিত হবিগঞ্জেরবিস্তারিত পড়ুন
চার্জ গঠন বাতিল চেয়ে রিট করবেন ড. ইউনূস
শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.বিস্তারিত পড়ুন
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন