অবশেষে মুসলিম অভিবাসী নিয়ে ট্রাম্পের নরম সুর
যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের আগমন নিষিদ্ধ করা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমেরিকা অভিবাসীদের নিয়ে গর্বিত জাতি এবং আমরা এ ধারণার প্রতি আন্তরিক থাকব।’ চরম উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর সংশয়ের মধ্যেই গতকাল রোববার বিকেলে এক বিবৃতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প এ কথা জানালেন।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের আগমন নিষিদ্ধ করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমান নিষিদ্ধ করার বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের ভুল প্রচারণা। আমেরিকা অভিবাসীদের নিয়ে গর্বিত একটি জাতি এবং আমরা এ ধারণার প্রতি আন্তরিক থাকব। দেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই তা করা হবে বলে ট্রাম্প তাঁর বিবৃতিতে উল্লেখ করেন। বিবৃতিতে বলা হয়, এ ধরনের সাময়িক নিষেধাজ্ঞা প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে ২০১১ সালেও করা হয়েছিল। যে সাতটি মুসলিম দেশের নাম এসেছে, এসব দেশের সঙ্গে জঙ্গিবাদের সংশ্লিষ্টতার নাম এসেছে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়েও।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্তত আরও ৪০টি মুসলিমপ্রধান দেশ রয়েছে। সেসব দেশের ব্যাপারে তাঁর নির্বাহী আদেশের কোনো প্রভাব নেই বলে ট্রাম্প বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন। তিন মাসের সাময়িক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সবকিছু যাচাই করা হবে, আমেরিকার জনগণের নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়েই সবকিছু করা হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। সিরিয়ার শরণার্থীদের ব্যাপারেও তিনি সহানুভূতিশীল উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন, এসব শরণার্থীর সাহায্যের জন্য উপায় খোঁজা হবে।
সিরিয়া থেকে শরণার্থী আগমন এবং সাতটি মুসলিম দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আগমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে গত শুক্রবার নির্বাহী আদেশ জারি করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এরপরই শুরু হয় নানা বিশৃঙ্খলা। আকাশপথে যুক্তরাষ্ট্রগামী বহু যাত্রীকে বাইরের বিমানবন্দরেই আটকে দেওয়া হয়। গত শনিবার রাতে নিউইয়র্কের ফেডারেল আদালত নির্বাহী আদেশের ফলে কোনো অভিবাসীকে জোরপূর্বক বিতাড়নের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেন।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ জারির সময় ওই সব দেশ থেকে যেসব যাত্রী ফ্লাইটে ছিলেন, তাঁদের অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরে নেমে সমস্যায় পড়তে হয়। অনেককে আটক করে ডিটেনশন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। শনিবার সকাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিমানবন্দরগুলো পরিণত হয় আতঙ্কের এলাকায়। উদ্বিগ্ন লোকজন ছুটে যায় পরিস্থিতির শিকার অভিবাসীদের সমর্থনে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একসঙ্গে বিমানবন্দর এলাকায় এমন প্রতিবাদী মানুষের ঢল কখনো দেখা যায়নি। ঢালাওভাবে মুসলমানদের আগমন বন্ধ করা হচ্ছে কি না—এ নিয়ে বাংলাদেশিসহ অন্য অভিবাসীদের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। দেশে-বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরসহ আমেরিকার প্রধান বিমানবন্দরগুলোতে মানুষের ঢল নামে।
রাতভর এসব প্রতিবাদ-বিক্ষোভে মূলত শ্বেতাঙ্গ লোকজনের উপস্থিতিই ছিল বেশি। অভিবাসীবান্ধব হিসেবে পরিচিত আমেরিকার সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ-বিক্ষোভে যোগ দিয়ে অনেকেই বলতে থাকে, এ আমাদের পরিচয় হতে পারে না। উদারনৈতিক রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো রাস্তায় নেমে আসে। নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে একদল শ্বেতাঙ্গ অভিবাসন আইনজীবীদের স্বেচ্ছাসেবা দেওয়ার জন্য পোস্টার হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
সাত দেশের অভিবাসীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জানিয়ে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের প্রতিবাদে রোববার ম্যানহাটানের ব্যাটারি পার্কে বিক্ষোভ। ছবি: এএফপিশনিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া প্রতিবাদ বিক্ষোভ সর্বত্র ছিল শান্তিপূর্ণ। রোববার হোয়াইট হাউসের সামনেও বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশে লোকজন অভিবাসীবান্ধব স্লোগান দেন। নিউইয়র্কের স্ট্যাচু অব লিবার্টি দেখা যায় এমন সড়কপথ, ম্যানহাটনের বেটারি পার্ক এলাকায় বড় ধরনের প্রতিবাদ সমাবেশ যোগ দেয় প্রতিবাদকারীরা। জেএফকে বিমানবন্দরে রীতিমতো অবস্থান নিয়ে টানা প্রতিবাদ চলছে। ব্যাপকসংখ্যক বাংলাদেশিরাও এসব প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেন। মুসলিম দেশ থেকে আনুষ্ঠানিক জোরালো কোনো প্রতিবাদ না এলেও যুক্তরাজ্যসহ জার্মানি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের সমালোচনা করে।
নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত ডেমোক্রেটিক সিনেটর এবং সিনেটে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান চার্লস শুমার বলেছেন, প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ বাতিল করার জন্য কংগ্রেসে প্রচেষ্টা চালানো হবে। কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকানদের সহযোগিতা ছাড়া কিছুই করা সম্ভব নয় বলে সিনেটর চার্লস শুমার বলেছেন।
বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের কোনো দেশ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের তালিকায় না থাকলেও আমাদের অভিবাসীরা অজানা আশঙ্কায় ভুগছেন। অনেকেই তাঁদের অভিবাসন, পারিবারিক অভিবাসন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। বাংলাদেশি আইনজীবীসহ বাংলা সংবাদমাধ্যমে তাঁরা ফোন করে খোঁজখবর নিচ্ছেন। নিজেদের অভিবাসন অবস্থা নিয়ে পরামর্শ কামনা করছেন।
এর মধ্যে নিউইয়র্কসহ অন্যান্য অভিবাসীবহুল রাজ্যে বাংলাদেশি নাগরিক সংগঠনগুলো সাধারণ প্রবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। অমূলক উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় না পড়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী প্রথম আলোর কাছে দেওয়া বক্তব্যে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশিদের উৎকণ্ঠার কোনো কারণ নেই। যাঁদের গ্রিন কার্ড আছে, বৈধ অভিবাসন আছে, তাঁদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
নাগরিক আন্দোলনের নেতা আইনজীবী এন মজুমদার বলেছেন, ‘বাংলাদেশসহ যেকোনো অভিবাসীর পক্ষে আমরা দাঁড়াব।’
অভিবাসী আইনজীবী অ্যাটর্নি শেখ সেলিম বলেছেন, নির্বাহী আদেশ কোনো আইন নয়। আমেরিকা আইনের দেশ। যাঁরা গ্রিন কার্ড নিয়ে বা বৈধভাবে আমেরিকায় এসেছেন, তাঁদের এ নির্বাহী আদেশে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। বিমানবন্দরে কোনো সমস্যায় পড়লে আইনগত প্রতিকার পাওয়ার অধিকার আছে বলে তিনি বলেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন