হাঁকডাকেই সীমাবদ্ধ জমি-ভবন দখলমুক্ত করার উদ্যোগ
অস্তিত্ব সংকটে ঢাকার ৫১ প্রাইমারি স্কুল
মোহাম্মদপুর টাউনহল সংলগ্ন জাকির হোসেন রোডের বিহারি ক্যাম্পের পাশে শাহীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ৩৬ শতাংশ জমির ৬ শতাংশের ওপর বিদ্যালয়ের চারতলা ভবন। এখন এই ৬ শতাংশের ভবন ছাড়া আর কোনো জমি বিদ্যালয়ের দখলে নেই। প্রভাবশালীরা বিদ্যালয়ের তিন দিকই দখল করে তিনতলাবিশিষ্ট তিনটি পাকা দালান উঠিয়ে ভাড়া দিয়েছে। বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে সিটি করপোরেশনের ময়লার ভাগাড়। এর ওপর দিয়েই ক্লাসে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
রাজধানীর পুরান ঢাকার বংশাল রোডের ৫.৫৮ শতাংশ জমিতে এফকেএম সরকারি (বালিকা) প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪০ সালে। এর ৪০ বছর পর আশির দশকের শুরুতে নির্মিত হয় চারতলা ভবন। এই ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় যাত্রা করে বংশাল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। এরপর এই উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শাখাও খোলা হয়। একপর্যায়ে বিদ্যালয় ভবনে শুরু হয় বাণিজ্যিক কার্যক্রম। চারতলার স্কুল ভবনকে কমিউনিটি হল হিসেবে ভাড়া দেওয়া শুরু হয়। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বসে রান্না করার চুলা। চারদিকে গড়ে ওঠে পাকা ভবন। রাস্তার পাশে ভবনটিতে দোকান তৈরি করে ভাড়া দেওয়া হয়। এখন বিদ্যালয়টিতে জাতীয় পতাকা ওঠানোর মতো কোনো ফাঁকা জায়গাও নেই। জানালাও খোলা যায় না। বিদ্যালয়ের সাইনবোর্ডটিও আর চোখে পড়ে না। এখন এই দোকানগুলোর মাঝ বরাবর তিন ফুট রাস্তা হচ্ছে বিদ্যালয়ের প্রবেশপথ! বংশাল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় আর দোকান কোঠার আড়ালে মূল প্রতিষ্ঠান এফকেএম সরকারি (বালিকা) প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন অস্তিত্ব সংকটে।
শাহীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এফকেএম সরকারি (বালিকা) প্রাথমিক বিদ্যালয়—এ দুটি রাজধানীর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দখলবাজদের থাবার উদাহরণ মাত্র। রাজধানীর ৩৪১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫১টিই কোনো না কোনোভাবে প্রভাবশালী দখলবাজদের খপ্পরে পড়েছে। এ হিসাব প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির। এ কমিটি ২০১৪ সালের অক্টোবরে একটি উপকমিটি করে দেয়। এরপর স্থায়ী কমিটির করে দেওয়া উপকমিটি ওই ৫১টি বিদ্যালয়ের ২৩টি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করে।
উপকমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ওই সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেদখল হওয়া জমি ও ভবন উদ্ধার করার বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন গত ৩০ মার্চ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেন ঢাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিও) শাহিন আরা বেগম। তাতে দেখা গেছে, একটি মাত্র বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ উদ্ধার করা ছাড়া আর কোনো অগ্রগতি নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর দখলদারিত্বের পেছনে রয়েছে ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। আবার বিদ্যালয়গুলোর পরিচালনার দায়িত্বেও রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। নিয়ম অনুসারে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা তাদের মনোনয়ন দিয়ে থাকেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যদের নির্লিপ্ত ভূমিকা, কখনো বা প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অন্যরা, আবার কখনো তারা নিজেরাই সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে দখলদারের ভূমিকায় নামে। তবে কেবল ব্যক্তিবিশেষের দখলদারিত্বের কবলেই পড়েনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। সাতটি বিদ্যালয়ের জমিতে বসেছে ওয়াসার পাম্প, ১০টি বিদ্যালয়ের জমি হাই স্কুল এবং পাঁচটি বিদ্যালয়ের জমি বিভিন্ন কলেজ দখল করেছে।
কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধান : দক্ষিণ বাসাবো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যাত্রা করে ১৯৬২ সালে। সাবেক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানা যায়, সাড়ে তিন কাঠা জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। সামনে বিশাল মাঠ ছিল। এখন মূল ভবন ছাড়া এর সব দখল হয়ে গেছে। একদিকে টিনশেডের দোকানপাট, হোটেল ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। পাশেই নির্মিত হচ্ছে ছয়তলা ভবন। এখন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পাঁচজন শিক্ষার্থী দাঁড়ানোর মতো কোনো ফাঁকা জায়গা নেই। অ্যাসেম্বলি হয় ক্লাসের মধ্যেই। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘কী ব্যবস্থা নেব, আমার কাছে বিদ্যালয়ের কোনো দলিলই নেই। তা ছাড়া একজন প্রধান শিক্ষকের দ্বারা কতটুকুই বা করা সম্ভব, অন্যরা যদি দায়িত্ব না নেন।’ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সালাম জানান, তিনি গত বছর থেকে এই দায়িত্বে এসেছেন। তাঁর আগে যিনি দায়িত্বে ছিলেন, তিনি (স্থানীয় বিএনপি নেতা) এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন। তিনি জানান, বিদ্যালয়ের সীমানা চিহ্নিত করার ব্যাপারে জেলা প্রশাসন থেকে সার্ভেয়ার আসবে বলে তিনি শুনেছিলেন। কিন্তু তারা আসেনি। সরেজমিনে গিয়ে দখল হয়ে যাওয়া জমিতে গড়ে ওঠা হোটেলের মালিক আব্দুস সালামকে পাওয়া যায়নি। হোটেলের ম্যানেজার দাবি করেন, তাঁরা কোনো জমি দখল করেননি, বরং তাঁদের জমিতেই বিদ্যালয় চলছে।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালসংলগ্ন ধলপুর এলাকায় ব্রাহ্মণচিরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ৩৯ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৫ সালে। ৭ শতাংশ জমির ওপর চারতলা ভবন নির্মিত হয় ১৯৮৭ সালে। এখন ওই ভবন আর একচিলতে প্রবেশপথ ছাড়া কোনো জমিই বিদ্যালয়ের দখলে নেই। ১৯৯২ সালে এই বিদ্যালয়ের জমির একাংশে ইউসেপ স্কুল গড়ে ওঠে। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা তমিউদ্দিনের নামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিতে হাই স্কুল গড়ে ওঠে। ১৯৯৫ সালের দিকে সেটি বন্ধ হয়ে গেলে সে জায়গার দখল নেন স্থানীয় সালমা ইসলাম। তাঁর দাবি, তিনি ভূমিদাতার বংশধরদের কাছ থেকে জমি কিনেছেন। এই দখলের পেছনে তৎকালীন বিদ্যালয় পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশ ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপর ২০০৮ সালে বিশাল মাঠ দখল করে নেন ভূমিদাতার উত্তরাধিকার পরিচয়দানকারী দেলোয়ার হোসেন গং। তাঁরা রীতিমতো পাকা ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। এ নিয়ে আদালতে দায়ের করা তিনটি মামলার মধ্যে দুটির রায়ই বিদ্যালয়ের পক্ষে এসেছে। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংসদীয় প্রতিনিধিদল এই বিদ্যালয় পরিদর্শন করে অবিলম্বে দখলদারদের সরে যেতে বলে আসে। আর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলে। এরপর দখলদার সালমা ইসলাম বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির লোকজনকে হুমকি-ধমকি দেন ও প্রধান শিক্ষিকার নামে মামলা করেন। দখলদাররা নিজেদের স্থানীয় এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার লোক বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে গত ২৯ মে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
প্রশাসন ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির উদাসীনতা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্থের বিনিময়ে নীরবতা পালনের সুযোগেই সরকারি বিদ্যালয়ের জমি হাতছাড়া হয়েছে। দখলদাররা সব সময়ই ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় এমপিসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। স্থানীয় এমপিরা কখনো ভোটের হিসাবের কারণে, কখনো বা আর্থিক সুবিধা পেয়ে রহস্যজনক ভূমিকা পালন করেন, যা পরোক্ষভাবে দখলদারদের পক্ষেই যাচ্ছে।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটির গঠিত উপকমিটির অনুসন্ধান ও সুপারিশ : এফকেএম সরকারি (বালিকা) প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে কমিটি বংশাল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখা বন্ধ, দ্বিতীয় তলা এফকেএম সরকারি (বালিকা) প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ছেড়ে দেওয়া এবং দোকান উচ্ছেদ করতে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। কিন্তু গত দেড় বছরে এর একটিও কার্যকর হয়নি। অগ্রগতি প্রতিবেদনে ডিপিও (ডিস্ট্রিক্ট প্রাইমারি অফিসার) জানিয়েছেন, উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখা বন্ধ ও দ্বিতীয় তলা ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে পত্র দিতে ডিপিইতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আর দোকান উচ্ছেদের ব্যাপারে চিঠি দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসককে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘দখলবাজরা চারদিক দিয়ে বিদ্যালয়কে ঘিরে ফেলেছে। এখানে একরকম অবরুদ্ধ অবস্থা। জমির কাগজপত্রও এখন আমাদের হাতে নেই।’ বিদ্যালয়ের জমিতে যে চারটি দোকান করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে এ থেকে মাসিক ভাড়া ওঠে দুই লাখ টাকা করে। সেই টাকা কারা নেয় তাও তিনি জানেন না বলে দাবি করেন। দোকানের মালিক-কর্মচারীরাও এ ব্যাপারে মুখ খোলেনি। কেউ বলে, ভাড়ার টাকা হাই স্কুলকে দেওয়া হয়; কেউ বলে, দোকান-কোঠার জমি ওয়াকফ সম্পত্তি—এই টাকা আওলাদ নামের একজনকে দেওয়া হয়। বিস্তারিত জানার জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. সেলিমুর রহমানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আগে তাঁর পিতা এই দায়িত্বে ছিলেন। এখন তিনি দায়িত্বে থাকলেও পেশাগত কারণে সময় দিতে পারেন না। বিদ্যালয় বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে তিনি আরেকজন সদস্যের নাম দিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠিত সাবকমিটি শাহীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করে ২০১৪ সালের ২২ ডিসেম্বর। কমিটি অবৈধ দখলদারদের তালিকা করে উচ্ছেদ এবং ডাস্টবিন দ্রুত সরিয়ে ফেলতে পরিচালনা কমিটিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের সহযোগিতা নেওয়ার সুপারিশ করে আসে। কিন্তু গত দেড় বছরে একটি সুপারিশও কার্যকর হয়নি। বরং ওই পরিদর্শনের পরই উত্তর দিকের তিনতলা পাকা ভবনটি নির্মিত হয়েছে। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দা। কিন্তু বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিতে ওই শিক্ষার্থীদের কোনো অভিভাবক নেই। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হেলেনা হক স্থানীয় আওয়ামী যুব মহিলা লীগের সভাপতি। তিনি জানান, বিদ্যালয় বন্ধের সময়ই দালানগুলো নির্মিত হয়েছে। বাধা দিতে গেলে দখলদাররা জানায়, ওপরমহলকে জানিয়েই তারা এটা করছে। তার পরও বাধা দিতে গেলে সন্তানদের উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। হুমকির ব্যাপারে কিংবা অবৈধ দখলের বিষয়ে থানায় কোনো জিডি করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় কাউন্সিলরের সহায়তা চাইলে তিনি আদালতের আশ্রয় নিতে বলেছেন বলে জানান।
সূত্রাপুরের এমএ আলীম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা কম পরিমাণে রেকর্ড হওয়ায় ল্যান্ড ট্রাইব্যুনালে রেকর্ড সংশোধনের মামলা করা ও আদালতের ডিক্রি অনুযায়ী অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার কথা বলা হয়েছিল উপকমিটির সুপারিশে। রেকর্ড সংশোধনের মামলা করার জন্য থানা শিক্ষা কর্মকর্তাকে আর উচ্ছেদের ব্যাপারে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে—এ বিষয়ে অগ্রগতি এ পর্যন্তই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি হাফিজ উদ্দিন খান ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত এমএ আলীম বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে পাকিস্তান আমলে দায়িত্ব পালনকালে বিদ্যালয়ের কাগজপত্র হাতিয়ে নেন। কাগজপত্র জালিয়াতি করে ১৯৮৭ সালের দিকে তিনি এই বিদ্যালয়ের ১১.৬০ শতাংশ জমির মধ্যে ৫.৪০ শতাংশ জমি দখলে নেন। ১৯৯৩ সালের দিকে তিনি আনোয়ারুল কবির নামের এক ব্যক্তির কাছে তাঁর দখল করা জমি বিক্রি করে দেন। আনোয়ারুল কবির সেখানে পাঁচতলা আবাসিক ভবন নির্মাণ করে এখন ভাড়া দিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিরীন আক্তার জানিয়েছেন, অবৈধ উচ্ছেদের বিষয়ে ‘বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে’। আর রেকর্ডের বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল খায়েরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘টানা ১৩ বছর লড়াই করে পকেটের টাকা ব্যয় করে বিদ্যালয়ের পক্ষে রায় পেয়েছি। এখন উচ্ছেদ কে করবে? আমার বয়স হয়েছে, আমি আর পারছি না। এখন সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।’
সরকারি সার্ভেয়ারকে দিয়ে পল্লবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ের জমি মেপে সীমানা নির্ধারণ করে দেয়াল নির্মাণ, উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখার কার্যক্রম ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বন্ধ করা, উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক অংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন থেকে সরিয়ে নেওয়া এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরনো ভবন ভেঙে নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ করার কথা বলা হয় উপকমিটির সুপারিশে। কিন্তু এখনো সীমানা নির্ধারণ করা হয়নি, উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখার কার্যক্রম বন্ধ হয়নি, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উচ্চ বিদ্যালয়ের অংশ সরিয়ে নেওয়া হয়নি। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হয়েছে মাত্র।
গেণ্ডারিয়া মহিলা সমিতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গায় নির্মিত দোকানপাট জরুরি ভিত্তিতে উচ্ছেদ, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সীমান্ত গ্রন্থাগারের মাঝের দেয়াল ভেঙে দেওয়া, প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে গ্রন্থাগার পরিচালনা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য জরুরি ভিত্তিতে একটি নতুন ভবন নির্মাণের কথা বলা হয়েছিল সুপারিশে। এসব বিষয়ে অগ্রগতি হলো—দোকান উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসককে চিঠি দেওয়া, দেয়াল ভাঙার জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তাগাদা দেওয়া এবং নতুন ভবনের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটির উপকমিটির পরিদর্শন করা ২৩টি বিদ্যালয়ের ২২টির ক্ষেত্রেই অগ্রগতির চিত্র এ রকম। যে একটি বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কিঞ্চিৎ অগ্রগতি হয়েছে সেটি হলো কলাবাগানের ধানমণ্ডি ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। উপকমিটি দুই সপ্তাহের মধ্যে এর দুটি কক্ষ উদ্ধার করতে বলেছিল। একটি কক্ষ ধানমণ্ডি ল কলেজ লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহার করছিল; আরেকটি কক্ষ ল কলেজের কর্মচারীরা ব্যবহার করছিলেন। এ পর্যন্ত ল কলেজের লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহৃত কক্ষটি উদ্ধার করা হয়েছে।
অগ্রগতি প্রতিবেদনে দু-একটি বিদ্যালয়ের সামনে থেকে বিলবোর্ড এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। কিন্তু সেগুলো সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে উচ্ছেদ হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলমগীর বলেন, জমি ও ভবন উদ্ধারের ব্যাপারে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যের জন্য অধিদপ্তরের পরিচালক (নীতিমালা ও কার্যক্রম) আনোয়ারুল হকের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি। কিন্তু আনোয়ারুল হক বিস্তারিত তথ্য জানাতে অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে অধিদপ্তরের নীতিমালা ও কার্যক্রম শাখার কর্মকর্তা দেবেশ চন্দ্র সরকার ও মির্জা মো. আব্দুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কথা বলার জন্য একজন অন্যজনকে দেখিয়ে দেন। তাঁরা দায় এড়িয়ে গেলেও সূত্র জানায়, বিদ্যালয়ের জমি ও ভবন উদ্ধারের তৎপরতা অধিদপ্তরের এই শাখা থেকেই মনিটর করার কথা, কিন্তু দখলদারদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে শাখার কর্মকর্তারা নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছেন।
উদ্ধার তৎপরতায় দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকা প্রসঙ্গে ঢাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহিন আরা বেগম বলেন, ‘দখল করা কক্ষ তো আমরা চাইলেই মুক্ত করতে পারি না। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি তারা উচ্ছেদ করবে।’
উল্লেখ্য, রাজধানীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেদখল হওয়া জমি ও ভবন উদ্ধার করার লক্ষ্যে করণীয় নির্ধারণের জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পাঁচ সদস্যের উপকমিটি গঠিত হয় ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর। আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন আহ্বায়ক আর সদস্যরা হলেন নজরুল ইসলাম বাবু, আলী আজম, মোহাম্মদ ইলিয়াছ ও উম্মে রাজিয়া কাজল।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ড. ইউনূস: নির্বিঘ্নে সব জায়গায় পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “এবার দুর্গাপূজারবিস্তারিত পড়ুন
সোমবারের বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার
এক কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাস করেনবিস্তারিত পড়ুন
১৪ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৬৪ কোটি ডলার
এ মাসের প্রথম ১৪ দিনে এসেছে ১৬৪ কোটি ৬৭ লাখবিস্তারিত পড়ুন