বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের (প্রতিবন্ধী) আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তর সম্প্রতি সারাদেশে জরিপ চালিয়ে ১৫ লাখ ১০ হাজার প্রতিবন্ধী শনাক্ত করেছে। বর্তমানে তাদের তথ্যাবলী নিয়ে একটি শক্তিশালী ডাটাবেজ তৈরি করছে অধিদপ্তর।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. জিল্লার রহমান বাসসকে জানিয়েছেন, ডাটাবেজের এ তালিকা ধরে আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবন্ধীদের সবাইকে স্মার্ট কার্ড দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। তবে এটা সম্ভব না হলে ২০১৮ সালের প্রথম তিনমাসের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন করা হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে জরিপের তালিকা ধরে প্রতিবন্ধীদের সাময়িক পরিচয়পত্র দেওয়ার কাজ অধিদপ্তর শুরু করেছে। সেই সঙ্গে অধিদপ্তর ডাটাবেজ তৈরির কাজও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আগামী বছরের মে মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সচিব বলেন, নতুন বছরের জুন থেকে যে কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কোডনম্বর ধরে ডাটাবেজে ঢুকলে তার সব তথ্য জানা যাবে। ওই সব তথ্যের মধ্যে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, অটিজমের প্রকৃতি, পরিবারে বর্তমানে অটিজম আর কেউ আছেন কিনা, অতীতে কেউ ছিলেন কিনা, পরিবারের অটিজমের হিস্ট্রি, আর্থিক সঙ্গতি, সরকার প্রদেয় কোন কোন ভাতা ও সুবিধা তিনি পাচ্ছেন, কোনটি পাচ্ছেন না, তিনি কর্মক্ষম কিনা বা কর্মের সামর্থ রয়েছে কিনা ইত্যাদি থাকবে।

ডাটাবেজের কাজটি সম্পন্ন হলে ওইসব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সরকারের পক্ষ থেকে আরও গবেষণা করা হবে যাতে প্রতিবন্ধিতার কারণ উদঘাটন ও তার রাশ টেনে ধরা যায় বলে জানান তিনি।

জিল্লার রহমান বলেন, তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধীদের যত বেশি সম্ভব বাস্তবিক সুবিধা দেওয়া যায় সে লক্ষেও কাজ করছেন তারা। যেমন, কোন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যদি যোগ্যতানুযায়ী সরকারি কোনো দফতরে চাকরির জন্য আবেদন করেন এবং তার আবেদনের একটি কপি যদি মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দেওয়া হয়, তাহলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তার চাকরি পাওয়ার ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।

প্রতিবন্ধীদের জন্য বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করে ভারপ্রাপ্ত এ সচিব বলেন, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সারাদেশে ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্যকেন্দ্রের মাধ্যমে দৈনিক প্রায় ১০ হাজার প্রতিবন্ধী বা প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে থাকা মানুষ বিনামূল্যে বিভিন্ন থেরাপিউটিক সেবা নিচ্ছেন। এছাড়া কাউন্সিলিং, প্রশিক্ষণ ও সহায়ক সামগ্রী পাচ্ছেন বিনামূল্যে।

তিনি বলেন, এসব কেন্দ্রে নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী শিশু ও ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে এনডিডি কর্নার। এছাড়া এ ফাউন্ডেশনের আওতায় সারাদেশে বিনামূল্যে পড়াশোনার লক্ষে অটিজম শিশুদের জন্য ১০টি স্কুল রয়েছে। পরিচালিত হচ্ছে ৬২টি বিশেষ স্কুল। দেশব্যাপী ৩২টি মোবাইল থেরাপি ভ্যান দেশের প্রত্যন্ত জনপদে ‘আরলি স্ক্রিনিং, অ্যাসেসমেন্ট ও ইন্টারভেনশন’ নিশ্চিত করছে, অনেক উন্নত দেশেও যা বিরল। এ ফাউন্ডেশন শেখ হাসিনার সরকারের প্রথম মেয়াদে অর্থাৎ ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠা পায় বলেও তিনি জানান।

জিল্লার বলেন, এ বছর সরকার সাড়ে ৭ লাখ অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাথাপিছু ৬শ’ টাকা করে মোট ৫৪০ কোটি টাকার ভাতা দিয়েছে। দেশের ৭০ হাজার প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীর জন্য ৫০ কোটি টাকার উপবৃত্তি দিয়েছে।

তিনি বলেন, ৬৪ জেলায় সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় ৬৪০ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য বিনামূল্যে আবাসিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এছাড়া দেশে ১২টি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী স্কুলে প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ বিশেষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও চলছে।

ভারপ্রাপ্ত সচিব আরো বলেন, এটুআই প্রোগ্রামের আওতায় ৬টি ই-লার্নিং সেন্টারে প্রতি কোর্সে ১শ’ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য তথ্য-প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ চালু করা হয়েছে। এর ফলে দেশের প্রতিবন্ধী শিশুরা পরিণত হচ্ছে দক্ষ জনশক্তিতে।

তিনি বলেন, পিছিয়ে পড়া এ বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাবার মতো হৃদয়ে মমতা ধারণ করে এদের উন্নয়নে দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতার কারণে মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে প্রতিবন্ধীরাও সমানতালে এগিয়ে যাবে। খবর: বাসস।