আন্টিরহস্য ও বাঙালি
উত্তরভারত যেখানে সবিতা ভাবীতে আটকে থেকেছে, দাক্ষিণাত্য সেখানে নির্মাণ করেছে ‘গৃহলক্ষ্মী’ ভেলাম্মাকে। এই প্রান্তযৌবনা গৃহবধূর বাসনাকুসুমকে তিলে তিলে ফুটিয়ে তোলা হয় এক কমিক-স্ট্রিপে। এর কোনও প্রিন্ট ভার্সন আছে কি না জানা নেই।
সকল কাকিমা-ই কি আন্টি?
এই প্রশ্নের উত্তরে একটা কথাই বলা যায়, কোনও কোনও কাকিমা আন্টি বটে, সকল কাকিমাই ‘আন্টি’ নন। অথবা জীবনানন্দের অনুসরণে বলাই যায়, সকলেই আন্টি নন, কেউ কেউ…।
বাংলা বাজারে এই বিদেশি সম্বোধনটি কতদিনের পুরনো? তেমন খতিয়ে দেখলে মনে হবেই, কই আজি হতে ত্রিশ বৎসর আগেও তো বাজারে এত ‘আন্টি’ ছিলেন না। ইং-মাধ্যম নুড়কুত-ইস্কুলে বা বা ব্ল্যাকশিপবৃন্দ নিকের-বোকারপরে দিদিমণিকে ‘মিস’ বলত, আর অশিক্ষক, প্রযত্নশালিনী নারীবর্গকে ‘আন্টি’ বলে ডাকত। সে ডাকের মধ্যে কোনও ক্ষুৎকাতরতা ছিল না। নেহাৎ বালখিল্য সেই ডাক কী করে ভারতবর্ষময় হাঁকারে পরিণতি পেল, তা বলা মুশকিল।
না, এই মুসাবিদা মোটেই কোনও খিল্যতাকে প্রশ্রয় দেবে না। এ লেখা সাবালকদের জন্য। কোনও রকমের হৃদয়দৌর্বল্যকেও এই লেখা আশ্রয় দেবে না। এ লেখার উদ্দেশ্য, ইন্টরনেট শাসিত বং-সংস্কৃতিতে ‘আন্টি’ নামক ফেনোমেননটির স্মৃতি, সত্তা ও ভবিষ্যৎ।
সেই কৌশোরের কথা মনে করুন হে চল্লিশ-ছুঁই ছুঁই বৃষস্কন্ধ। সেই বয়ঃসন্ধিপর্বে আপনি আপনার পাড়াতুতো কাকিমার অঙ্গে অঙ্গে যে রংমশাল জ্বলতে দেখেছিলেন। তার কোনও তুলনা কি আর মিলল? সে কাল অতি ঘোরঘট্ট কাল। শহরের সেই আলোছায়া দোলা কত রজনীকে উতলা করেছিল, তা আপনিই জানেন। কিন্তু সেই কাকিমা-কীর্তন আর আজকের আন্টি-সন্দর্ভ মোটেই এক জিনিস নয়। সেই নাভির নীচে শাড়ি পরা, ঠোঁটের কোণে প্রশ্রয়ের হাসি সাঁটা কাকিমার দল আটকে ছিলেন রসময় গুপ্ত প্রণীত ‘কামঘন’ পুস্তকের ভাঙা হরফে, নিউজ প্রিন্টের মলিনতায়। তাঁরা ‘আন্টি’ নন। স্মৃতির গহন থেকে তাঁদের সেই সময়ের ছায়া-অবয়ব আর্তনাদ করে বলবে— আমরা তারা নই।
সম্মৃতিটুকু থাক। থাকুক যতনে। আমরা বরং সেই সব কাকিমা-স্মৃতি থেকে বেরিয়ে এস খোঁজ করি ‘আন্টি’-দের। ইং-মাধ্যম-প্রসূত কলটারে যাঁরা এই ‘আন্টি’ তকমায় অভিষিক্তা, তাঁরা আমাদের ঈপ্সিতা ‘আন্টিকুল’ নন। সাইবার আন্টি এক ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি। তাঁরাও ছায়ামানবী বটে, কিন্তু চল্লিশোর্ধ্ব বাঙালি-পুরুষের স্মরণকোষে জমে থাকা কাকিমা-স্মৃতির সঙ্গে তার কোনও তাল্লুক নেই। গত দশ-পনেরো বছরে দক্ষিণী বি-মুভির দৌলতে এক বিশেষ টাইপের নারী-অবয়ব বাংলা বাজারে আমদানি হয়। তাঁদের বয়ঃক্রম ৩৫ থেকে ৪০-এর মধ্যে কোনও অনির্দেশ্য জায়গায় পর্ন-জারগনে যাঁদের ‘চাবি’ বলা হয়, এঁদের চেহারা তাঁদেরই আশেপাশে। তার উপরে এঁদের আর একটি সিম্পটম হল শাড়ি। ব্যাপারটাকে সব দিক থেকে গুটিয়ে কনসেপচুয়ালাইজ করে যে তিলোত্তমাকে ইন্টারনেট নির্মাণ করে, তার নাম ‘ভেলাম্মা’।
উত্তরভারত যেখানে সবিতা ভাবীতে আটকে থেকেছে, দাক্ষিণাত্য সেখানে নির্মাণ করেছে ‘গৃহলক্ষ্মী’ ভেলাম্মাকে। এই প্রান্তযৌবনা গৃহবধূর বাসনাকুসুমকে তিলে তিলে ফুটিয়ে তোলা হয় এক কমিক-স্ট্রিপে। এর কোনও প্রিন্ট ভার্সন আছে কি না জানা নেই। তবে, দক্ষিণী এই শ্রীময়ী তাঁর লিবিডো নিয়ে, লিবিডোর চরিতার্থতা নিয়ে আর সেই চরিতার্থতা-সঞ্জাত বিবেক দংশন নিয়ে বাঙলি পুরুষের জিন-মানচিত্রের গভীরে থাকা আকাঙ্ক্ষার তন্ত্রীতে টংকারের পরে টংকার তুলতে সমর্থ হয়।
ভেলাম্মা আনপ্যারালাল। তাকে সামনে রেখেই কি আন্টিরহস্য পাক খেল গত সাত-আট বছরে? নাকি ‘আন্টি’ সেই তামিল-মালয়ালাম ‘নুন শো’-থেকে উঠে আসা হস্তিনী নারীর দল, তা নিয়ে গবেষণার অবকাশ রয়েছে। কিন্তু এ পোড়ার দেশে তা হওয়ার নয়। ‘স্ক্যান্ডাল’ সাইটে ‘আন্টি’ হিসেবে যাঁরা পোস্টায়িত, তাঁরাও এই অনির্দেশ্য বয়স, শরীর, লিবিডো আর বিবেকের ঝিলিক একটা নতুন আর্কিটাইপ তৈরি করল কি সাইবার-পরিসরে? রসিকজন বলতে পারবেন।
রিয়্যালিটির চক্করে ‘ভাবি’, ‘বৌদি’ টপকে আন্টির আবির্ভাবকে বাঙালি কীভাবে দেখছে, জানার উপায় ফেসবুক। ‘আন্টি’-তকমা দিয়ে যেসব অ্যাকাউন্ট রয়েছে তাতে একবার ঝাঁক মারলেই বোঝা ঠাবে কোন ফেটিশ-এ আক্রান্ত সোনার বাংলা। হ্যাঁ, এই ‘আন্টি’-সন্দর্ভে আজ বাঙালিই অগ্রবর্তী। দক্ষিণী ভেলাম্মা-র খাপে বেমালুম বসে যান, শিথিলবসনা বাঙালি প্রান্তযৌবনার দল। কৌশোরের কামনাকুসুম বিকশিত হল অস্তরাগের আলোয়। আর যাঁরা নবীন ‘ব্রহ্মচারী’? তাঁরাও নতুন সন্দর্ভে গোড়া থেকেই ভার্চুয়াল ফেটিশ হিসেবে ‘আন্টিলাভার’ হয়ে উঠছেন।
কোনও বাস্তবতা নয়। কথা কয়োনা, শব্দ কোরো না। একটি মাত্র মাউস ক্লিক-এ সকল কাকিমাই ‘আন্টি’ হয়ে উঠেছেন। ‘নীল’ দিগন্তে এখন ম্যাজিক!!
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন