বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২৮, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

‘আপুর কথা খুব মনে পড়ে’

‘আমার আপুর কথা খুব মনে পড়ে। আপুর সঙ্গে আমরা খুব মজা করতাম। আমাদের দু’জনকে (রবি ও ছোট বোন তিশা) আপু খুব ভালোবাসত। আমার বড় আপু আর নেই। আমার আপুকে খুন করেছে এক পাষণ্ড। আমি ওই খুনির ফাঁসি চাই।’ কথাগুলো ছোট্ট ভাই শিশু রবি হোসেনের। রবি রাজধানীর কাকরাইলের উইলস লিটল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী নিহত সুরাইয়া আক্তার রিশার একমাত্র ভাই। রিশারা দুই বোন ও এক ভাই। এর মধ্যে রিশা সবার বড়। এরপর রবি। সবার ছোট রোদেলা আক্তার তিশা। বাবা-মা ও স্বজনদের সঙ্গে এই ছোট্ট দুটি শিশুও তাদের বোনের হত্যাকারীর ফাঁসি চায়।

বুধবার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে রিশার স্মরণে আয়োজিত শোকসভায় এসেছিল রবি ও তিশা। স্কুল মাঠে কথা হয় তাদের সঙ্গে। রবি জানায়, রিশা ও সে (রবি) এক কক্ষে একসঙ্গে ঘুমোত। এখন রিশা নেই। তাই সেই ঘরে সে আর ঘুমোয় না। বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুমোয়। রাত হলেই বোনের কথা খুব বেশি মনে পড়ে তার। কষ্টটাও বেড়ে যায় ছোট্ট এই শিশুটির। রবি বলে, ‘আপু ছাড়া ঘুমোতে অনেক কষ্ট হয়। আপু আমাকে ঘুম পাড়াত। মাথায় হাত বুলিয়ে দিত। এখন কে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে?’ ঘাতক ওবায়দুলের ফাঁসি দাবি করে রবি বলে, ‘আমি চাই তাকে (ওবায়দুল) ফাঁসি দিক। আমার আপু অনেক কষ্ট পেয়ে মারা গেছে। আপু যে কষ্ট পেয়েছে সেই কষ্ট ওই খুনিকেও দেয়া হোক। আমার আপু আমাকে অনেক আদর করত। এখন আপু আমাকে আর আদর করবে না।’ রবি উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র। একই স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে পড়ে রোদেলা আক্তার তিশা। তিশা প্রতিদিন স্কুল শেষে বড় বোন রিশার সঙ্গে স্কুলভ্যানে বাসায় ফিরত। সেই ছিল তার স্কুল শেষে বাসায় ফেরার সঙ্গী। এখন থেকে ছোট্ট তিশাকে স্কুল থেকে একাই ফিরতে হবে বাসায়। তিশা বলে, ‘আমার ভাইয়া আছে। আপু (রিশা) নেই। আপু আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করত। আপু আমাকে আর আদর করবে না। আমার আপুকে স্কুলের সামনে ছুরি মেরে খুন করা হয়েছে। আমি ওই খুনির ফাঁসি চাই। আমার বোন যেমন বেঁচে নেই ওই খুনিকেও যেন সরকার বাঁচিয়ে না রাখে।’

কাজী আলাউদ্দীন রোডের ওই বাড়ির পরিচয় এখন ‘রিশাদের বাড়ি’। পুরান ঢাকার বঙ্গবাজার মার্কেটের উল্টোদিকে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অফিসের পাশে কাজী আলাউদ্দীন রোডেই ওদের বাসা। সেখানে গিয়ে যে কেউ জিজ্ঞেস করলেই সবাই বাড়ি দেখিয়ে বলবে এটা রিশাদের বাড়ি। রিশা মরে এই বাড়িটি সবাইকে চিনিয়ে গেল। কথাগুলো বলেছিলেন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী ছুরিকাঘাতে নিহত সুরাইয়া আক্তার রিশার বাবা রমজান হোসেন।

রিশার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোরআন খতম চলছে। ছয়তলা বাড়িটির চতুর্থ তলায় রিশা থাকত বাবা-মা, এক ভাই আর এক বোনকে নিয়ে। বাড়িতে আত্মীয়স্বজনের ভিড়। রিশার কক্ষে ঢুকে দেখা গেল, তার পড়ার টেবিলের ওপরে গোছানো রয়েছে বইখাতা, নোটবুকসহ যাবতীয় কিছু। টেবিলের সামনের দেয়ালে লাগানো রয়েছে প্লাস্টিকের প্রজাপতি। ওয়ারড্রবের ওপরে সাউন্ড সিস্টেম, পাশেই টিভি। ‘আপুর খুব প্রিয় জিনিস এগুলো’ জানায় তিশার ছোট বোন রোদেলা আক্তার তিশা। এগুলো ধরলেই আপু বকা দিত। আর কিছুর জন্য বকা খাইনি ওর কাছে, বলেই কাঁদতে থাকে তিশা। আপুরে, তুই ফিরে আয় বলেই আর্তনাদ করতে থাকে সে। তার চিৎকারে কক্ষে ছুটে আসেন অন্য আত্মীয়রা।

রিশার খালা শাহানাজ বলেন, একজন খুন হলে প্রথমে অনেক হৈচৈ পড়ে। খুনি ধরা পড়ার পর কিছুদিন হৈচৈ হয়। এরপর ঢাকা পড়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের অনুরোধ রিশার হত্যার বিষয়টিও যেন ঢাকা না পড়ে। দ্রুত ওবায়দুলের ফাঁসি কার্যকরের দাবি জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, রিশা যেভাবে দিয়ে মেরেছে তা সহ্য করা যাচ্ছে না। রিশার বড় মামি ডালিয়া আক্তার ইতি বলেন, ‘পুলিশ যেন একটুখানির জন্য ঘাতককে আমাদের হাতে দেয়। আমরা তার মুখে স্যান্ডেল মারতে চাই। একটা থাপ্পড় হলেও মারতে চাই।’

রিশার মেজ মামি রিতা বলেন, আমাদের পুরো পরিবারের বড় মেয়ে রিশা। ও ছিল সবার অনেক আদরের। এত হাসিখুশি মেয়েটা কোথায় চলে গেল, কোথায় রেখে এলাম আমরা ওকে। কান্না সামলে তিনি বলেন, ওর ওই হাসিটাই বোধহয় কাল হয়েছিল। অন্ধকার সহ্য করতে পারত না বলে ওর বাবা আইপিএস কেনে। সেই মেয়েটা এখন অন্ধকার ঘরে একা একা থাকছে, খোদার এ কেমন বিচার বুঝি না।

রিশার বড় মামা মুন্না বলেন, পুরো এলাকা রিশার জন্য শোকে কাতর। এই এলাকাতেই ওরা ১১ বছর ধরে আছে। ছোট থেকে বড় হয়েছে এখানে। এলাকাতে এখন আমাদের পরিচয় রিশার মামা, রিশার চাচা হিসেবে। কিন্তু এই পরিচয় তো আমরা চাইনি। মেয়েটা মরে গিয়ে আমাদের পরিচিত করে গেল।

বাসায় এসেছিল রিশার স্কুলের পাঁচজন শিক্ষক। সেখানে তারা রিশাকে স্মরণ করে বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করেন। রিশার শিক্ষক মাখন লাল দাস বলেন, ‘আমার বাড়ি গাজীপুরে, রিশার গ্রামের বাড়িও সেখানে। কোনোদিন পড়া না পারলে মুখে হাসি নিয়ে বলত, স্যার আপনার বাড়ি আর আমার বাড়ি একই জায়গায়, এবারের মতো মাফ করে দেন। সেই মেয়েটা এভাবে চলে গেল, এটা ভাবতেই পারি না।’ আরেক শিক্ষক ইকবাল হোসেন বলেন, ‘একবার আমিসহ কয়েকজনকে ওর বাসায় আসতে বলেছিল। কিন্তু বৃষ্টি থাকার কারণে আসা হয়নি। সেই বাসায় এলাম যখন রিশা নেই। রিশা দেখল না, জানল না, ওর বাসায় আমরা এসেছি।’

বাসা থেকে বেরোবার সময় বাংলার শিক্ষক ফৌজিয়া আক্তার বলেন, ‘রিশাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার আগেই আমরা সেখানে উপস্থিত হই। ওর পোশাক কেটে দেই ব্লেড দিয়ে, অপারেশনের পোশাক পরানোর জন্য। ও তখনও জ্ঞান হারায়নি, পুরো জ্ঞান তার ছিল। ড্রেস যখন কাটছিলাম তখনও তার লজ্জাবোধ প্রবল ছিল, আমাকে ড্রেস কাটতে বাধা দেয়। হাত ধরে ম্যাডাম বলে ডাক দেয়। ওর সেই ডাক, সেই স্পর্শ আমি ভুলতে পারছি না। আমার এই হাতে ওর স্পর্শ লেগে আছে বলেই আঁচলে মুখ ঢাকেন ফৌজিয়া আক্তার।

এদিকে রিশার স্বজনরা বলছেন, আসামি গ্রেফতার হয়েছে ভালো সংবাদ, তবে ঘটনা যেন চাপা পড়ে না যায়। দ্রুত হত্যাকারীর বিচার দাবি করেন তারা।

উল্লেখ্য, গত বুধবার (২৪ আগস্ট) বেলা পৌনে ১২টার দিকে কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনেই একটি টেইলার্সের কাটিং মাস্টার ওবায়দুল খান ছুরিকাঘাত করে রিশাকে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চার দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে রোববার (২৮ আগস্ট) রিশা মারা যায়।যুগান্তর।

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

রাজধানীতে আনসার ব্যাটালিয়ন মোতায়েন

ঢাকা মহানগরীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৬ প্লাটুন আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য মোতায়েনবিস্তারিত পড়ুন

ঢাবি বন্ধের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগে ধন্যবাদ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হল ছেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদেরবিস্তারিত পড়ুন

রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ আহত ২৩

রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষে ছাত্রলীগ, শিক্ষার্থী, মহিলা আওয়ামী লীগবিস্তারিত পড়ুন

  • জাহাঙ্গীরনগর রণক্ষেত্র, অর্ধশতাধিক আহত 
  • রাজধানীর শনির আখড়া ও ধনিয়ায় গুলিবিদ্ধ ৬
  • বিএনপি ও সমমনা দলের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
  • মিরপুরে অজ্ঞান পার্টির কবলে কিশোর, খোয়ালো অটোরিকশা
  • নয়াপল্টনে র‍্যাবের অভিযানে অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জামাদিসহ আটক ১
  • গার্ডরুমে সহকর্মীর গুলিতে পুলিশ সদস্য নিহত
  • বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুদকের ৭২ কর্মকর্তার চাকরি ছাড়ায় নানা আলোচনা
  • রাজধানীর শিশু হাসপাতালে আগুন
  • বায়ু দূষণ: শীর্ষস্থানে বাংলাদেশ, দ্বিতীয় স্থানে পাকিস্তান
  • ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, তাড়াহুড়োয় ভুল হয়ে গেছে: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
  • রাজধানীতে হাতিরপুলের আগুন নিয়ন্ত্রণে
  • হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া