আমার জীবন আর কেমন হবে? খুনির সন্তানদের জীবন যেমন হয়…
নিজের বাবা-মাকে কে না ভালোবাসে? কে না চায় বুক ফুলিয়ে মাথা উঁচু করে নিজের বাবা-মায়ের কথা বলতে? কিন্তু কেমন হবে ব্যাপারটা যদি আপনি জানতে পারেন যে আপনার বাবা-মা আর দশটা সাধারন মানুষের মতন নয়? বাস্তব জীবনে আসলে তারা পেশাদার খুনি? আসুন জেনে নিই বাস্তব জীবনেই এমন একজন সিরিয়াল কিলারের সন্তানের মনের কথা।
মেলিসা মুর
১৯৯৫ সালে মেলিসা মুরের বাবা পেশাদার খুনি কিথ জ্যাসপারসনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়ে যায়। যদিও পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার আগ অব্দি জানতেন না মেলিসা বাবার এই রুপের কথা। তবে কিছুটা হলেও হয়তো আন্দাজ করতে পেরেছিলেন তিনি। বুঝতে পেরেছিলেন তারা ভালোবাসার বাবা আর ঠিক আগের মতন নেই। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। আত্মহত্যার কথাও ভাবেন। তবে একটা সময় নিজেকে সামলে ওঠেন তিনি। পরবর্তীতে নিজের মতন আরো যত পেশাদার খুনির আত্মীয় আছেন তাদেরকে মানসিক সাহায্য করবার জন্যে একটি কার্যক্রম চালু করেন মেলিসা। আর সেখানেই নিজের বাবাকে নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতার বিনিময় করেন মেলিসা। যেটা প্রায় হুবহু তুলে দেয়া হল এখানে।
“১৯৯৪ সালের এক শরৎকাল ছিল সেটা। আমি আর আমার ভাই বোনেরা বাবার সাথে করে তার ট্রাকে চড়ে বসেছিলাম। আমাদেরকে বাইরে নিয়ে যাচ্ছিল বাবা সকালের খাবারের জন্যে। আমার বাবা কিথ জ্যাসপারসন। পেশায় একজন সাধারণ ট্রাক চালক (অন্তত তখনো অব্দি আমরা তাই জানতাম ) ছিল বাবা। মায়ের সাথে ছাড়াছাড়ি হবার পর থেকে বাবার সাথে খুব কমই দেখা করা হত আমাদের। তাই সেদিন বাইরে সবাই মিলে বের হবার পর বেশ ভালো লাগছিল। খুশি ছিল আমার আর দুই-ভাই বোনও। কিন্তু রাস্তার মাঝখানেই দরকারী কিছু কাজের জন্যে নেমে যায় ওরা। গাড়িতে করে বাবার সাথে খেতে যাই কেবল আমি।
বাবা সবসময়ই সিগারেট খাওয়ার খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে বলতো আমাদেরকে। মানা করত সিগারেট খেতে। নিজেও অপছন্দ করত ওটাকে। কিন্তু সেদিন সকালে বাবার ট্রাকে এক প্যাকেট সিগারেট দেখতে পায় আমার ছোট ভাই। বাবাকে বলে বাবা সিগারেট খাচ্ছে কিনা? বাবা স্রেফ না বলে। আমার বন্ধুদের জন্য ওটা নিয়েছি- বলেছিল বাবা। সেসময় বাবার ট্রাকের একটা কোনায় একটা টেপও দেখতে পাই আমি। বাবা ট্রাকে টেপ দিয়ে কি করে? একবার এই চিন্তা মাথায় আসলেও সিগারেটের প্যাকেট আর নানারকম চিন্তায় সেটা নিয়ে খুব বেশি ভাবা হয়নি তখন আমার।
আর তাছাড়া মেয়েদের নিয়ে করা বাবার বাজে রসিকতাগুলো তো রয়েছেই। পথের যেকোন মেয়েকে খারাপ ইঙ্গিত দেওয়া, বাজে কথা বলা- এসব অনেকটা গা-সওয়া হয়ে গেলেও ভালো লাগতো না আমার। শুধু পথের ধারে থাকা মেয়েরাই নয়। মায়ের সাথে নিজের সম্পর্ক নিয়েও খোলামেলা আলাপ করত বাবা আমার সাথে। ভালো লাগত না আমার। তখন আমি সবে পনের। কিন্তু বাবাকে খুব ভালোবাসতাম আমি। দাঁদে দাঁত চেপে সময়গুলোকে পার করতাম।
পাশে বাবা থাকলে এসব ঝামেলার সাথে সাথে কেমন একটা ভয়ও কাজ করত মনের ভেতরে। বুঝতাম না কি জন্যে এরকম হচ্ছে। তবুও কেমন একটা উদ্বেগ কাজ করত ভেতরে ভেতরে।
সেদিন আমরা খেতে গেলাম। আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে যে বাবা সেদিনই প্রথম আমাকে বলেছিল- খালি চোখে যা দেখা যায় তাই সব নয় মিসি! আমি মনে খানিকটা ভয় নিয়ে অবাক হয়ে বলেছিলাম- এসবের মানে কি বাবা?
বাবা বলেছিল- আমার তোমাকে কিছু বলার আছে। আর সেটা সত্যিই অনেক জরুরী। সেটা কি জানতে চাওয়ার পর বাবা বলেছিল- আমি সেটা তোমাকে বলতে পারব না। কারন আমি তোমাকে বললেই তুমি সেটা পুলিশকে বলে দেবে। আমি দেখতে যেমন আসলে তেমনটা নই।
বাবার কথাগুলো শুনে অসুস্থবোধ করছিলাম। তাড়াতাড়ি তাই ওয়াশরুমে চলে গিয়েছিলাম। ভাবছিলাম বাবা কি বলবে। আমি সেটা সহ্য করতে পারব কিনা। তবে বাবা সেদিন আর কিছু বলেনি। অথবা আমার ভাগ্যটা সেদিন ভালোই ছিল বলতে হবে।
আমার এরপর মনে পড়ত সেই ছোট্টবেলার দিনগুলোর কথা। তখন আমার বয়স পাঁচ। বাবা তখন আমাদের সাথেই থাকত। একবার অনেকগুলো বিড়ালের বাচ্চাকে পেয়েছিলাম আমরা বাসার কোনায়। বাবা সেগুলোকে নিয়ে তারে ঝুলিয়ে দিয়েছিল। পরদিন সকালে সেগুলোর লাশ আমি দেখতে পেয়েছিলাম বাসার পেছনে। আরেকদিনের কথা। একটা বেড়ালকে পুষব বলে ঠিক করেছিলাম আমরা ভাই-বোনেরা। বাবা সেটাকে এক হাতে পিন দিয়ে খোঁচা মারছিল আর অন্য হাতে গলা মুচড়ে ধরেছিল। মারা গিয়েছিল সেটাও। ওদেরকে মারার সময় অন্যরকম একটা আনন্দ ফুটে উঠত বাবার চোখে-মুখে। জানতাম বাবা নিষ্ঠুর। তাই বলে এতটা জানতাম না। জানলাম ১৯৯৫ সালের এক সুন্দর দিনে। মা এসে বলল বাবাকে খুনের দায়ে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছে। তাও সেটা একটা খুন নয়। মোট সাতটা খুনের অভিযোগ ছিল বাবার বিরুদ্ধে। নির্মমভাবে সে হত্যা আর ধর্ষন করেছে সাতজন মহিলাকে।
মনে মনে চাইতাম বাবার শাস্তি। খবর রাখতাম পেপারে। কিন্তু একদিন যখন দেখলাম বাবার ফাঁসি হতে পারে তখন আর সহ্য হল না। শত হলেও নিজের বাবা। পেপার পড়া বন্ধ করলাম। স্কুল কলেজে কোন ছেলে-মেয়ের মা তাদের বাচ্চাকে আমার সাথে খেলতে দিত না। পাছে আমি তাদের ক্ষতি করে ফেলি! আমার কোন বন্ধু ছিল না। মাঝে মাঝে ভাবতাম আত্মহত্যার কথা।
কিন্তু তারপরেও একটা সময় আমার সাথে এমন একজনের দেখা হল যাকে আমি বিয়ে করে ফেললাম। সব ভুলতে বসেছিলাম। কিন্তু সেদিন আমার মেয়ে যখন বলল- মা, তোমার বাবা কোথায়? তখন সবটা কেমন পাল্টে গেল। সত্যিই তো! কতদিন আর লুকিয়ে রাখব নিজের পরিচয়কে? মেলে ধরলাম নিজেকে অপরাহ উইনফ্রের অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে। পেলাম হাজার হাজার চিঠি আর মেইল। মোট ৩০০ পরিবারকে পেলাম যাদের কোন একজন সদস্য খুনী। এমন অনেক খুনী বাবার মেয়ে এখন আমার মতনই আত্মহত্যা করতে চাইছে। সাহস দিতে শুরু করলাম ওদের। দেখা করলাম আমার বাবার নির্মম অত্যাচারের শিকার এক মহিলার সাথে।
অনেকদিন ধরে মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরছিল। সেই ছোটবেলা থেকে। বাবা সেদিন সকালে আমাকে তার এই অন্ধকার দিকের কথাই শোনাতে চেয়েছিল। যদি আমি সবটা শুনে পুলিশকে বলতাম তবে কি বাবা আমাকে মেরে ফেলত? তার নিজের মেয়েকে?
কয়েকদিন আগে দাদু বাবার সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। ফেরার পর দাদু জানালো বাবা বলেছে সে নাকি তার বাচ্চাদেরকেও হত্যা করার কথা ভেবেছিল।
এতদিন একটা কাঁটা খচখচ করত বুকের ভেতরে। আমার বাবাকে মিডিয়ার সবাই চেনে হাসি মুখের খুনী হিসেবে। কিন্তু সে তো সত্যিই একজন ভালো বাবা ছিল। মেয়ে হয়ে তার বিরুদ্ধে দাড়ানোটা কি আমার ঠিক হল? খুনী কিথ নয়, বাবা কিথের কথা ভেবেই কথাগুলো মনে করতাম আমি। কিন্তু এখন আমি জানি, আমি যা করছি ঠিক করছি। একজন খুনী বাবা হলেও সে খুনীই!
যদিও আমার পাওয়া শেষ খবর অনুযায়ী কিথ জ্যাসপারসন এখনো নিজেকে খুনী ভাবেনা। ভাবে পুরোটাই তার বিচারের ভুল
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
চা কন্যা খায়রুন ইতিহাস গড়লেন
চা শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সব মহলেই পরিচিত হবিগঞ্জেরবিস্তারিত পড়ুন
চার্জ গঠন বাতিল চেয়ে রিট করবেন ড. ইউনূস
শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.বিস্তারিত পড়ুন
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন