আমার নাম ‘পাইলট’ হওয়ার পেছনে একটি গল্প আছে: খালেদ মাসুদ পাইলট
ক্রিকেটার খালেদ মাসুদ, তার ডাক নাম পাইলট। তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফলতম উইকেটরক্ষক। বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের হয়ে ২০০১ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০০৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফির ফাইনালে তার ব্যাট থেকে আসা ছয় রান কেনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ জয়ে বিশেষ অবদান রেখেছিল। চলছে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজ। ম্যাচের ভালো-মন্দ এবং তার ব্যক্তিগত জীবনের হালচাল প্রসঙ্গে কথা হলো তার। খবর: প্রিয়.কম
মাসুদ ভাই, কেমন আছেন?
খালেদ মাসুদ: এইতো ভালো আছি ভাই।
বাংলাদেশ তো শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বেশ ভালো পারফর্মেন্স করছে। আপনার মন্তব্য কী?
খালেদ মাসুদ: অবশ্যই খুব ভালো পারফর্ম করছে আমাদের টিম। গোটা দলটাই ভালো খেলছে। ব্যাটিং, বোলিং, সবই ভালো করছে।
আপনার সময়কার কিছু ক্রিকেটাররের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তারা বললেন- বাংলাদেশের বোলিংয়ে ইম্প্রুভমেন্ট প্রয়োজন। আপনি কী বলেন?
খালেদ মাসুদ: তারা কোন অ্যাঙ্গেল থেকে বলেছেন জানি না। তবে আমার কাছে আমাদের বোলিংয়ে কোনো ঘাটতি আছে বলে মনে হচ্ছে না। মাশরাফি আছে, কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ আছে, সাকিব ভালো বল করে। তো বোলিং তো ঠিকই আছে। শ্রীলঙ্কাকে ৯০ রানে হারিয়েছি আমরা। ভালো বোলিং না করলে কি সম্ভব হতো! তো আমার মতামত হচ্ছে ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশের বোলিংয়ে কোনো দুর্বলতা নেই।
কিন্তু আমাদের দলের পারফর্মেন্স তো আপ-ডাউন করে। আজ ভালো তো কাল মন্দ। এর কারণ কী?
খালেদ মাসুদ: এটা আসলে খেলোয়াড়দের মানসিকতার বিষয়। আবার প্রিপারেশনের ঘাটতিও বলতে পারেন। হয়তো কোনো খেলোয়াড় কোনো কারণে ম্যাচের আগে আপসেট হয়ে পড়ছে, তখন সে ভালো পারফর্ম করতে পারছে না। ফর্ম কলাপস করে। এটা গোটা টিমের উপর প্রভাব ফেলছে। তাই হয়তো এরকম হয়।
মাশরাফির ক্যাপ্টেনসি নিয়ে কোনো মন্তব্য?
খালেদ মাসুদ: নিঃসন্দেহে ও একজন ভালো ক্যাপ্টেন। ১০০ তে ৯৯ দেওয়া যায় ওকে।
অনেকেই বলে থাকেন- মুশফিকুর রহমান ৪ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামলে ভালো হতো। তো একজন উইকেট কিপারের পক্ষে টানা ৫০ ওভার কিপিং করে আবার ৪ নম্বরে ব্যাট করা কী সম্ভব? আপনিও তো উইকেট কিপার ছিলেন।
খালেদ মাসুদ: হ্যাঁ, এটা সম্ভব। সাঙ্গাকারাও তো উইকেট কিপিং করতেন। তিনি কিপিং করার পরেও তো ওপেনিং ব্যাটিং করেছেন। তো ৪ নম্বরে ব্যাট করা সম্ভব একজন উইকেট কিপারের পক্ষে। কারণ একজন খেলোয়াড় একটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলার আগে টানা ছয় ঘণ্টার প্রিপারেশন নিয়েই নামেন। তাদের সেভাবেই প্রশিক্ষিত করা হয়। খেলোয়াড়দের পেশি শক্তি থাকে। তা ছাড়াও ফিল্ডিং শেষে ৩০ মিনিটের একটা বিশ্রাম তো পাওয়া যায় ব্যাটিং করতে নামার আগে। তো উইকেট কিপিং করে আবার প্রথম দিকে ব্যাট করতে নামা অসম্ভব কিছু না।
বাংলাদেশের সামনের ম্যাচগুলো নিয়ে আপনার প্রেডিকশন কী?
খালেদ মাসুদ: আমাদের এখন খুব ভালো সময় যাচ্ছে। আমরা ভালো খেলব। এছাড়াও শ্রীলঙ্কায় এখন যে দলটি খেলছে সেখানে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়েরা নেই। কিন্তু বাংলাদেশ দলে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় রয়েছে। তো সেদিক থেকেও আমরা এগিয়ে আছি। আমরা ভালো করব।
আমরা অনেক সময় জয়ের দ্বারপ্রান্তে গিয়েও হেরে যাই কেন?
খালেদ মাসুদ: এটা আগে হতো। সামনে আর হবে না বলে আমার বিশ্বাস। এ সমস্যা দূর করতে হলে খেলোয়াড়দের কনফিডেন্স লেভেল আরও বাড়াতে হবে। অস্ট্রেলিয়া টিমকে দেখবেন- ওরা খুব দুরাবস্থায় পড়েও খেই হারিয়ে ফেলে না, ঘুরে দাঁড়ায়। ঘুরে দাঁড়াতে পারে ওরা। তো আমাদের দলের খেলোয়াড়দেরও ঐ লেভেলের কনফিডেন্স রাখতে হবে মনে।
সামনের বিশ্বকাপে আমরা সেমিফাইনাল খেলার আশা করতে পারি?
খালেদ মাসুদ: আসলে ওয়ানডে ম্যাচের বিষয়ে আগে থেকে কিছু বলা যায় না। এটা নির্ভর করে টুর্নামেন্টের মোমেন্টামের ওপর। তবে আমাদের দেশ ভালো খেলছে। আমাদের বেশ কিছু অলরাউন্ডার রয়েছে। তো আমরা সেমিফাইনাল ছোঁয়ার আশা করতেই পারি।
দলে নতুন মুখ নিয়ে আসার ব্যাপারে আপনি কিছু বলবেন?
খালেদ মাসুদ: আমাদের দেশে কিন্তু ট্যালেন্ট প্লেয়ার আছে। যেমন ধরুন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ, কোথায় ছিল কে জানত! ও চলে এলো। বিশ্ব কাঁপাল। এরকম ট্যালেন্ট আরও রয়েছে। হ্যাঁ, অনেক সময় অনেকেই বাদ পড়ে যায়। তাদের স্থানে নতুন খেলোয়াড় আসে। যারা বাদ পড়ে যায় যাদের আসলে গোটা খেলার প্রক্রিয়ায় কিছু গণ্ডগোল থাকে বিধায় বাদ পড়ে যায়। তবে আমাদের উচিত একটি ভালো ব্যাকআপ টিম রেডি রাখা, যাতে জাতীয় দলের কোনো খেলোয়াড় অফ ফর্মে চলে গেলে সেখান থেকে ভালো খেলোয়াড় নিয়ে আসা যায়। এ জন্য ‘এ দলের’ দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। ভালো ভালো টিমের সঙ্গে ওদের খেলার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। ওরা বিভিন্ন দেশে খেলতে যাবে, খেলবে। খেলে খেলে অভিজ্ঞ হয়ে জাতীয় দলে খেলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে থাকবে ওরা।
এবার একটু ভিন্ন আঙ্গিকে প্রশ্ন করব। আপনার ডাক নাম ‘পাইলট’ হওয়ার কারণ কী?
খালেদ মাসুদ: আমার নাম ‘পাইলট’ হওয়ার পেছনে ছোট একটি গল্প আছে। আমার মামা আমাকে এ নাম দিয়েছিলেন। ছোটবেলায় আমি অনেক ট্যালেন্ট ছিলাম। মামা আমাকে পাইলট বানাতে চেয়েছিলেন। তিনি আমাকে ‘পাইলট-পাইলট’ বলেই ডাকতেন। তারপর খেলোয়াড় জীবনে এলাম। সাংবাদিকরা আমার নামে যখন নিউজ করত তখন তারাও নামের পাশে পাইলট জুড়ে দিতেন। তো এভাবেই বিষয়টি প্রতিষ্ঠা হয়ে গিয়েছে।
বর্তমানে কী নিয়ে ব্যস্ত আছেন?
খালেদ মাসুদ: ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের কোচ ও ম্যানেজার হিসেবে রাজশাহীতে ছিলাম এ কয়দিন। সামনে ৮ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত ‘ক্লেমন ইনডোর ইউনি ক্রিকেট’ রয়েছে। সেটার অর্গানাইজার টিমে রয়েছি। এবার ৩২ টি ইউনিভার্সিটি অংশগ্রহণ করবে।
ইনডোর ক্রিকেটের আয়োজন করে আসলে লাভ কী?
খালেদ মাসুদ: দেখুন, আগে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক খেলাধুলা হতো। সেই ধারাটা ধরে রাখতেই এই আয়োজন। মানে ক্রিকেট কেন্দ্রিক বিনোদনটা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাঁচিয়ে রাখতেই এমন উদ্যোগ। এটিকে পরবর্তীতে আউটডোরে আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।
আপনি আপনার ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে সন্তুষ্ট কী?
খালেদ মাসুদ: হ্যাঁ, আমি সার্থক। আমি সন্তুষ্ট আমার ক্যারিয়ার নিয়ে। আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন আমি তাতেই খুশি।
আমার শেষ প্রশ্ন- অনেক খেলোয়াড়েরাই সাংবাদিক তথা মিডিয়া বান্ধব নয়। এর কারণ কী?
খালেদ মাসুদ: এটা আসলে একটি ভুল বোঝাবোঝি ছাড়া আর কিছুই নয়। একজন খেলোয়াড় যখন খেলোয়াড়ি প্রফেশনে আসেন, তখন তার ব্যস্ততা অনেক বেড়ে যায়। শুধু সাংবাদিক কেন, সে তখন তার কাছের আত্মীয় কিংবা বন্ধু বান্ধবদেরও সময় দিতে পারে না অনেক সময়। আবার অনেক সময় টায়ার্ডনেসের কারণেও সাংবাদিকদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়ে পারে। আবার এটা অনেক সময় মন-মানসিকতার উপরেও নির্ভর করে। অনেকে ইচ্ছা করেই মিডিয়া অ্যাভোয়েড করে। এই আর কি।
অনেক ধন্যবাদ পাইলট ভাই আপনাকে। আমিও আপনাকে ‘পাইলট’ নামেই ডাকলাম। কোনো সমস্যা নেই তো?
খালেদ মাসুদ: না না, ঠিক আছে। আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন