আমার শরীরে কোনও পুরুষের ছোঁওয়া লাগতে দেব না…
সে এক বীভৎস অভিজ্ঞতা। এত দিন হয়ে গেল আমার শরীরী অভিযানের। কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা কখনও হয়নি। এই কাজে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের অনেকের সঙ্গেই হয়তো এমন কিছু হয়ে থাকবে। কিন্তু আমার সঙ্গে হয়নি। ওই একবারই যে যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছিল, তা ছিল নারকীয়। সে কথা মনে পড়লে, আজ শিউরে উঠি না। অবাক হয়ে যাই। কীভাবে সয়েছিলাম?
সেই শীতে বাবার শরীরটা বেশ খারাপ করেছিল। দক্ষিণ কলকাতার নামকরা হাসপাতালের বেডে বাবাকে দেখতাম মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করতে। এই যে সংবাদমাধ্যমে লেখা হয় ‘‘মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা’’ সেই ব্যাপারটা কী, সেটা বাবাকে দেখে বুঝেছিলাম। বাবা সেই পাঞ্জায় জিতে গিয়েছিলেন। ফিরে এসেছিলেন একেবারে স্বমহিমায়।
কর্পোরেট চাকরিতে মাঝেমধ্যে এখনও একটা কথা বলা হয় ‘‘লেট্স ডু আ গাঙ্গুলি’’। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই বিখ্যাত কামব্যাকের কথা মাথায় রেখে এ কথাটা কর্পোরেট জগতে চালু হয়েছিল। বাবাও একটা ‘‘গাঙ্গুলী’’ করে ফেলেছিলেন। বাবা সুস্থ হওয়ার পরে মায়ের সঙ্গে বাইরে গেলেন। বাইরে মানে একেবারে দেশের বাইরে। বিলেতের উইন্টার বাবার বরাবর প্রিয়। আমি যাইনি। আর ঠিক সেই সময়েই ঘটনাটা ঘটেছিল। একেক সময়ে মনে হয়, কেন ওই সময়েই ঘটেছিল? মা-বাবা থাকলে হয়তো…আবার এ-ও মনে হয় যে, ভাগ্যিস ছিলেন না। নইলে আবারও একটা কুযুক্তি খাড়া করে…
এক সকালে ফোন এল ক্লায়েন্টের থেকে। তিনি ছিলেন এমন একজন, যাঁর সঙ্গে আমি অনেক কিছু শেয়ার করতাম। দিনের পর দিন শরীরী সম্পর্কের পরে কোথাও একটা আত্মীয়তা গড়ে উঠেছিল। সে ছিল এক অদ্ভুত সম্পর্ক। না প্রেম, না ভালবাসা, না স্বার্থ, না অভিমান। পরের সপ্তাহে সেই সম্পর্কের কথা আপনাদের বলব।
যা-ই হোক, তিনি ফোনে বললেন, ‘‘আমার এক বোনের সঙ্গে তোমার আলাপ করাব।’’ উনি ক্লায়েন্ট ধরলে এই কথাটাই বলতেন। সবাই ওঁর বোন। দুনিয়াজুড়ে বোনবাজি করে বেড়ান। ওঁর প্রায় সবক’টা ‘বোন’ই ওঁর মতো। পুরুষ শরীরের প্রতি অগাধ আকর্ষণ। হাতে পেলে একেবারে তারিয়ে তারিয়ে যৌনতা উপভোগ করেন। তাই এঁর রেফারেন্সে আমি কোনও দিনই আপত্তি করিনি। তবে ওই ঘটনার পর থেকে আমার সেই ভরসা ভেঙে গিয়েছিল। যাঁর রেফারেন্সে গিয়েছিলাম, তিনিও পরে যারপরনাই বিব্রত হয়েছিলেন। এবং তাতে আমার লাভই হয়েছিল। কীভাবে, তা পরের কিস্তিতে জানাচ্ছি।
তো সেই তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন তাঁর ‘বোনে’র কাছে। কথাবার্তা যা হল, তা হুবহু তুলে দিচ্ছি। তাতে বুঝতে সুবিধে হবে তাঁর চরিত্রটি। পরিচয়ের পরে মুখে ঈষৎ হাসি দেখা গেল। তার পরেই বলে বসলেন, ‘‘আমার কিন্তু আজ রাতেই চাই।’’ যিনি নিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি আমার দিকে তাকালেন। আমি সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়তেই এল দ্বিতীয় কথা, ‘‘কাল সকালে পৌঁছে দিতে পারব না।’’
আমি বললাম, ‘‘চলে যাব। ট্যাক্সি পাওয়া যায় তো?’’
‘‘যায়। ভোরবেলা থেকেই পাওয়া যায়।’’
এ প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, ইনি কিন্তু অবিবাহিতা।
এর পরে পেরিয়ে গেল সন্ধে এবং এল সেই বীভৎস রাত। সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন ঘরে। এ সব আমার গা-সওয়া। বিয়ে না-করার কারণেই কি না জানি না, এঁর শরীরে এখনও সেই টানটান ব্যাপারটা রয়ে গিয়েছে। বুক, কোমর এবং শরীরের বাকি অংশ নিটোল, মেদের পরতে বেশ হিসেবি একটা ব্যাপার রয়েছে। ক়ৃষ্ণকায় শরীরটা সামনে এসে দাঁড়াল। তার পরে দাঁড়িয়েই থাকল। মিনিটের পর মিনিট যায়। তিনি দাঁড়িয়েই থাকেন। আমার শরীরে ঢেউ ওঠে। আমি উঠে দাঁড়াই। ঠিক তখনই ঘটে গেল ব্যাপারটা।
উনি বিদ্যুতের মতো ছিটকে চলে গেলেন একটু দূরে। আমি ধরতে গেলাম, তিনি আবার ছিটকে গেলেন। প্রথমে মনে হয়েছিল, এ যেন এক খেলা। ভুল ভাঙল। নির্দেশ এল, ‘‘ছোঁবে না আমাকে।’’
‘‘মানে?’’
‘‘আমার শরীরে কোনও পুরুষের ছোঁওয়া লাগতে দেব না।’’
‘‘তা হলে আমাকে ডাকার কারণ?’’
‘‘দেখব।’’
‘‘কী?’’
‘‘এদিকে এস।’’
নগ্ন শরীরটা বেডরুম পেরিয়ে তরতর করে এগিয়ে গেল ড্রয়িং রুমে। পিছন পিছন আমি। সোফার উপরে রাখা একটা খবরের কাগজ ছুড়ে দিয়ে বললেন, ‘‘এটা ততক্ষণ পড়তে থাকো। আমি আসছি।’’
কাগজ হাতে সোফায় বসে রইলাম পাথরের মতো। এ আবার কী! ধপ্ করে সোফায় বসলাম। বসেই আছি। মিনিট পনেরো কেটেছে বোধহয়। হঠাৎ বাঁই করে কী একটা হাওয়ায় কেটে সপাং করে আমার কাঁধে পড়ল। যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠলাম। তার পর পড়তেই থাকল। আমার চিৎকার কি বাইরে যাচ্ছে? জানি না। আমি রক্তাক্ত হচ্ছি ক্রমশ। শুনতে পাচ্ছি চিৎকার, ‘আমাকে ধোঁকা! আমাকে ছেড়ে যাওয়া! আমাকে ঠকানো! দেখ শালা, দেখ। ভাল করে দেখ। কে আজ তোকে আমার হাত থেকে বাঁচায় দেখব।’
আমি ঠকিয়েছি? এঁকে! মনে কথা মুখে আসার আগেই মাথাটা ঝুঁকে এল আমার একেবারে মুখের উপরে।
হিস্হিস্ করে ভেসে এল কয়েকটা শব্দ, ‘তুই ঠকাসনি। কিন্তু সেটা আসলে তুই-ই ছিলি। মনে করে দেখ।’
তার পর লিকলিকে বেতটা শান্ত হল। আমি কোনওক্রমে সোফায় বসলাম। এইবারে শুরু হল দ্বিতীয় দফা। ওই শরীরটা আমার শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে চলে যাচ্ছে বারবার। বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে হালকা ছোঁওয়া, কিন্তু ধরা দিচ্ছে না। অক্সিটোসিন-এর কথা আমি জানি। ব্যথা-যন্ত্রণা সেরে যায়। যৌনতায় এই হরমোনের নিঃসরণ ঘটে। ইনি সেই হরমোনটি আমার শরীরের ভিতরে তিরবেগে ছোটাচ্ছেন খুব কায়দা করে। আমি এখন যন্ত্রণার কথা ভুলছি। ধরতে চাইছি শরীরটাকে। পারছি না।
এভাবে কিছুক্ষণ চলার পরে আচমকা আমার মুঠোয় এল একটি হাত। হ্যাঁচকা মেরে টেনে নিলাম। যেই না শরীরে হাত বোলাতে গিয়েছি, অমনি প্রাণঘাতী জ্বালা শুরু হল পুরুষাঙ্গের একেবারে কাছে। হাতে লুকিয়ে রাখা ব্লেড চালিয়ে দিয়েছেন!
‘‘আসবি? আয়, আয়। আয় না! ধর আমাকে। ছিঁড়ে খা। গোটা রাত আমি তোর। আয়!’’
উন্মাদিনী! এইবারে আমি সভয়ে পিছিয়ে যেতে থাকলাম। একটু একটু করে। ব্লেড হাতে এগিয়ে আসছে আর একজন।
‘‘অনেক দিন ধরে ভোগ করেছিস আমাকে। কিচ্ছু বলিনি। এইবারে দেখ, আমি কী করতে পারি।’’
দরজায় ছিটকিনি, গেটে তালা। চাবি কোথায়, আমি জানি না। ফলে, ওই অবস্থায় সেরা কাজটাই আমাকে করতে হল। দৌড়ে চলে গেলাম শোওয়ার ঘরে। ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলাম।
বাইরে থেকে তখন আছাড় পড়ছে দরজার উপরে। সঙ্গে অশ্রাব্য খিস্তি। কোনও মহিলা নিজের শরীর সম্পর্কে এমন কথা বলতে পারেন, তা ধারণার বাইরে। ভোরের দিকে একসময়ে সে সব থামল। দরজা ফাঁক করে দেখি, পড়ে আছে শ্রান্ত, নগ্ন একটা শরীর। পাশ কাটিয়ে তোলপাড় করে চাবি খুঁজলাম। পেয়েও গেলাম। তার পর বাইরে এসে রাস্তায় নেমে সোজা ট্যাক্সি এবং বাড়ি।
পরে শুধু একটা কথাই মনে হয়েছিল। আমার শরীরে মাত্র এই ক’টা দাগ। ওই মনের ভিতরে কত ক্ষত রয়েছে, তার হিসেব রাখে ক’জন?
আমি যদি একরাতের জন্য নরকদর্শন করে থাকি, তা হলে দিনের পর দিন, আজীবন নরকদর্শন করে গিয়েছেন আরও একজন। কেউ তাঁকে কথা দিয়ে পথের ধারে ফেলে রেখে চলে গিয়েছেন। আর ফিরে আসেননি। ধুলোয় পড়ে থাকা ফুলটাকে যন্ত্রণা পিষে মেরেছে। হয়তো মেরেই চলেছে…আজও…
তাঁর কোনও খোঁজ আমি আর রাখিনি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
চা কন্যা খায়রুন ইতিহাস গড়লেন
চা শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সব মহলেই পরিচিত হবিগঞ্জেরবিস্তারিত পড়ুন
চার্জ গঠন বাতিল চেয়ে রিট করবেন ড. ইউনূস
শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.বিস্তারিত পড়ুন
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন