’’আমি বাঁচতে চাই শুধু আমার বইগুলো বের করার জন্য’’
ডাঃ আবুল হাসান বুলু(এমবিবিএস) (৬১)। ডাঃ বুলু জন্মগ্রহণ করেন নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার ওয়াপদা এলাকার হাজীবাড়িতে। শিক্ষাজীবনে হাইস্কুল এবং কলেজের গন্ডি পেরোনোর পর ডাঃ বুলু ভর্তি হন রংপুর মেডিক্যাল কলেজে। তিনি সেখানে এমবিবিএস শেষ করে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান। ১৯৭৬ সাল। সিঙ্গাপুরের প্রখ্যাত রয়্যাল হেলথ্ ক্লিনিকে তিনি মেডিসিন বিভাগে কনসালটেন্ট হিসেবে যোগ দেন। সেখানে চাকরি করেন ৫ বছর । এরপর ১৯৮১ সাল থেকে বিভিন্ন প্রমোদতরীতে মোবাইল মেডিক্যাল টিমের নের্তৃত্ব দিয়েছেন ডাঃ বুলু। সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন স্থানে কর্মজীবনের ২১টি বছর কাটিয়েছেন তিনি। অসংখ্য মানুষকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করেছেন, অনেকের ভ্রমনকে করেছেন আনন্দময়। ডাঃ বুলু সিঙ্গাপুরেই এক প্রবাসী নারীকে বিয়ে করেন ১৯৭৭ সালে।বিয়ের বছর দুয়েক পর তার স্ত্রীর কোলজুড়ে আসে একটি পুত্রসন্তান। ভালই চলছিল তার প্রবাস জীবনের দিনগুলো। কর্মঘন্টার পর ডাঃ বুলু ফিরে আসতেন তার প্রবাসের ছোট্ট সেই সুখের নীড়ে। যেখানে ডাঃ বুলু তার তুষাড় শুভ্র পুত্রের চোখের তারায় হারিয়ে যেতেন। সারাদিনের ক্লান্তি নিমিষেই ম্লান হয়ে যেত ছেলের হাসিমাখা মুখ দেখে। এভাবেই কাটছিল ডাঃ বুলুর সংসার। কর্মজীবনের ২১টি বছর অতিক্রম হবার পর ডাঃ বুলু বাংলাদেশে ফিরে আসেন।লেখাপড়ার খাতিরে সিঙ্গাপুরে থেকে যায় তার স্ত্রী-আদরের পুত্র। ১৯৯৭ সাল থেকে ডাঃ বুলু সৈয়দপুরে। তিনি বাংলাদেশে এসে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি সমসাময়িক বিভিন্ন সমস্যার উপরে বিভিন্ন দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে কলাম লেখা শুরু করেন । তার লেখার মধ্যে ছিল উত্তরাঞ্চলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাল্যবিবাহের আধিক্য ও এর কুফল, সুদ-দাদন ব্যবসায়ীদের মরণ ছোবল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক শিক্ষর্থীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়, সৈয়দপুর-দিনাজপুর বাইপাস সড়কের জন্য আন্দোলন, নীলফামারী জেলার সবচেয়ে বড় হাট-বাজার ঢেলাপীড় স্থাপন সহ আরো অনেক কিছু । নীলফামারী অঞ্চলে অনেকেরই ফ্রি চিকিৎসা করে নিজের উদারতার পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। তার ইচ্ছা ছিল সারাজীবন মানুষের সেবা করে যাবেন, গণমানুষের কথা কলাম আকারে তুলে ধরবেন।কিন্তু আজ তিনি শয্যাশায়ী । বিছানা থেকে একা উঠতে পারেন না । ডাঃ বুলু ২০১৪ সালের ৩০শে নভেম্বর সৈয়দপুরের জিআরপি ক্যান্টিনের টয়লেটে পা পিছলে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। তার মাথার সার্ভাইকাল ভার্টিব্রা স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। স্পাইনাল কর্ডের গুরুতর ইনজুরির কারণে শরীরের অস্থিগুলো বাঁকা হয়ে যায় । সেই সাথে অসহ্য ব্যাথার কারণে দাড়াতে পারেন না, শরীরকে এপাশ-ওপাশ করার ক্ষমতাও তার নেই ।
ডা: বুলু রংপুর মেডিক্যালের নিউরোলজিষ্ট ডাঃ প্রফেসর এম হাবিবুর রহমানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিয়েছেন অনেকদিন । মাঝখানে রংপুরের একটি বিশেষায়িত প্রাইভেট হাসপাতালে তিনমাস চিকিৎসা নিয়ে অর্থের সংকুলান না হওয়ায় বাসায় ফিরেছেন ।
ডাঃ বুলু বলেন, নিজের যা ছিল তা দিয়ে তো চেষ্টা করছি, আত্মীয়-স্বজনও তো কম দিলনা । ওরা কত আর দেয়! আমার একমাত্র পুত্র সন্তান বর্তমানে কানাডা প্রবাসী । ওখানে একটা সরকারী ব্যাংকে অফিসার হিসেবে ও চাকরি করে । মাঝে মাঝে খোঁজ নেয় । একথা বলেই তার কাঁপা-কাঁপা ডান হাতটি চোখের কাছে নিয়ে যান ।
একসময় মানুষের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকা মানুষটির এখন বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে পিঠে ক্ষতের দেখা দিয়েছে। জীবন যন্ত্রণা নিয়ে কোন আক্ষেপ নেই তার । তার আকুতিটা অন্য জায়গায়। মানবসেবাকে ব্রত করে জীবন অতিবাহিত করার প্রত্যয় নেয়া ডাঃ বুলু লিখেছেন ৩০ টিরও বেশী বই । জীবনের স্বর্ণালী সময় যৌবন কাটিয়েছেন সিঙ্গাপুরে, তার অধিকাংশ বইয়ের শিরোনাম সিঙ্গাপুরকে ঘিরেই । তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু বই যেমন, সিঙ্গাপুরের পকেটমার, মিডনাইট সিঙ্গাপুর, প্রবাসের আর্তনাদ, সিঙ্গাপুরের শ্বাশুড়ি, সিঙ্গাপুরের সুগার ড্যাডি, চিকিৎসকের মনের ব্যাথা সহ ৩০টি বইয়ের হাতে লেখা কপি উনি তৈরী করেছেন।
বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা বলেছেন অপারেশন করে তার সংকুচিত সার্ভাইকাল ভার্টিব্রা ঠিক করতে গেলে বেঁচে থাকার চান্স ৩০% । আর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করালে বেঁচে থাকার চান্স ৮০% । কিন্তু দীর্ঘদিন চিকিৎসা করার কারণে বাইরের দেশে গিয়ে ব্যয়বহুল চিকিৎসা করার সামর্থ্য এখন তার নেই ।
তিনি অশ্রুভরা কণ্ঠে বলেন, সাধারণ মানুষের জন্য, গরীব-মেহনতীদের জন্য জীবনে অনেক আন্দোলন করেছি, প্রাপ্তির খাতাও আমার পরিপূর্ণ । অপূর্ণতা শুধু এক জায়গাতেই । জীবনের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ কথাগুলো লিখে রেখেছি ৩০ টি বইয়ে। কিন্তু সেগুলো প্রকাশ করতে পারছি না । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন, আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন । এছাড়াও সমাজের বিত্তশালীসহ দেশী-বিদেশী এনজিও, প্রবাসী ভাইরা এগিয়ে এলে চিকিৎসা করা সম্ভব ।
আসন্ন একুশে বইমেলার কথা বলে চোখ মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ‘আমি বাঁচতে চাই শুধু আমার বইগুলো বের করার জন্য ।’
পুনশ্চ, প্রত্যেকদিন কত স্বপ্নই তো পূরণ হওয়ার আগেই বিলীন হয়ে যায় ! কিন্তু সকলের চেষ্টায় একজনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাও খুব কঠিন কিছু নয় । মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সকলের একটু প্রচেষ্টা হয়তোবা বিলীন হওয়ার আগেই বাঁচিয়ে দিতে পারে ডাঃ আবুল হাসান বুলুর সেই স্বপ্ন কে । আসুন তার জন্য কিছু করি । স্বাক্ষী হই স্বপ্ন সারথী’র…
এ বিষয়ে সাহায্য বা যে কোন ধরনের সহযোগিতা করতে আমাদের প্রতিনিধি ও এই প্রতিবেদনের প্রতিবেদকঃ ০১৯২১৭৪৯১০৭
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
চা কন্যা খায়রুন ইতিহাস গড়লেন
চা শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সব মহলেই পরিচিত হবিগঞ্জেরবিস্তারিত পড়ুন
চার্জ গঠন বাতিল চেয়ে রিট করবেন ড. ইউনূস
শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.বিস্তারিত পড়ুন
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন