আমি মুক্তিযোদ্ধা, জুতা সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করছেন!


দেশ রক্ষার যুদ্ধে জয়ী হলেও জীবন যুদ্ধে পরাজিত মুক্তিযোদ্ধা কাজী আব্দুল বারীক এখন জুতা সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও তিনি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি। সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা থেকেও তিনি বঞ্চিত।
কাজী আব্দুল বারীকের জন্ম ১৯৪২ সালে। বাস করছেন কুষ্টিয়া শহরের রামচরণ চৌধুরী রোডের দেশেয়ালী পাড়ায়। বর্তমানে পেশায় তিনি জুতা সেলাইকারী। কুষ্টিয়া শহরের বঙ্গবন্ধু মার্কেটের বিপরীত পাশে বসে তিনি জুতা সেলাই করেন।
তিনি স্ত্রীকে নিয়ে মেয়ের বাড়িতে আশ্রিত হয়ে আছেন। ৫ মেয়ে আর এক ছেলের জনক তিনি। কিন্তু সবাই বিয়ে করে নিজ নিজ সংসার নিয়ে ব্যস্ত। অসুস্থ স্ত্রী আসমা খাতুনকে নিয়ে তার বেঁচে থাকার সংগ্রাম এখনও চলছে।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কুষ্টিয়া জেলা ইউনিট থেকে ২০০৫ সালে প্রদান করা প্রত্যয়নপত্র থেকে জানা যায়, আব্দুল বারীক ১৯৭১ সালে ৮নং সেক্টর থেকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ভারতের বিহার প্রদেশের চাকুলিয়া থেকে ক্যাপ্টেন গৌর সিংয়ের নেতৃত্বে তিনি তৃতীয় ব্যাচে মুক্তিযুদ্ধের উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বৃহত্তর কুষ্টিয়ার দর্শনার উথলি ও আলমডাঙ্গাসহ বেশ কয়েকটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি কমান্ডার আমীর আলীর অধীনে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তৎকালীন কুষ্টিয়া পুলিশের টিআইওয়ান আজিজ মিঞার কাছে তিনি অস্ত্র জমা দেন।
মুক্তিযোদ্ধা কাজী আব্দুল বারিক বলেন, ‘যুদ্ধে জয়ী হয়েও আজ আমি জীবনযুদ্ধে পরাজিত। যাদের জন্য যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম, তারাই আজ আমার খোঁজ খবর রাখে না। আমার পরিচিত সহযোদ্ধা অনেকেই মারা গেছেন। অনেকেই ভাতা পাচ্ছেন। অথচ স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও আমি রাষ্ট্রীয় ভাতা বঞ্চিত।’
কাজী আব্দুল বারিকের বড় মেয়ে রেশমা খাতুন বলেন, ‘আমার বাবা ১৯৭১ সালে নিজের জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তিনি আজ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার সম্মান পাননি।’
তিনি জানান, ২০০৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তার বাবা তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেন। এরপর কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ২০০৮ সালের ২৭ নভেম্বর কাজী আব্দুল বারীককে সহকারী কমিশনার (ভূমি) নোটিশ করেন। নোটিশে তাকে ২০০৯ সালের ৯ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে সকাল ১০টার দিকে হাজির হতে বলা হয়। কিন্তু সেদিন তিনি সময়মতো উপস্থিত হতে পারেননি। দেরিতে উপস্থিত হওয়ায় তাকে জানানো হয়- সময় শেষ, এখন আর হবে না। এরপর ২০০৯ সালের ২৫ জুন তিনি আবারো বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল বরাবর ডাকযোগে আবেদন করেন। তারপর আর কোনো কিছু এগোয়নি। দারিদ্রের কষাঘাত আর বয়সের ভারে তিনি এখন হাল ছেড়ে দিয়েছেন।
কুষ্টিয়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার রফিকুল আলম টুকু জানান, তার কাছে যে কাগজপত্র রয়েছে, তা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে সনদ প্রদান করার জন্য যথেষ্ট নয়। যদি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হয়, তাহলে তাকে সমস্ত কাগজ ও সাক্ষী যোগাড় করে আনতে হবে।




এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ


চা কন্যা খায়রুন ইতিহাস গড়লেন
চা শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সব মহলেই পরিচিত হবিগঞ্জেরবিস্তারিত পড়ুন


চার্জ গঠন বাতিল চেয়ে রিট করবেন ড. ইউনূস
শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.বিস্তারিত পড়ুন


ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন













