আলহামদুলিল্লাহ, দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে সন্তানের জন্য ১২ মাসই রোজা রাখছেন মা
মমতাময়ী এক মা সন্তানের মঙ্গলে দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে রোজা পালন করে আসছেন। তাও আবার বছরের ১২ মাসই। ১৯৭৫ সাল থেকে ১২ মাস রোজা পালন করে আসছেন তিনি।
এ মায়ের নাম সুখিরণ নেছা। সংসার আর ধন সম্পদ বলতে নিজের কিছুই নেই তার। অভাব অনটনের মধ্যে খেয়ে না খেয়ে থাকলেও কারো কাছে হাত পাতেন না তিনি।
দুঃখ কষ্টই সুখিরণের নিত্যসঙ্গী। এতো অভাব-অনটনের মধ্যেও ১২ মাস রোজা পালন করে আসছেন তিনি। রোজা রাখতে তার কোনো কষ্ট নেই। কারণ এ সংযম সাধনাটা হচ্ছে পেটে ধরা সন্তানের মঙ্গল কামনায়।
তিনি বললেন, সন্তানের জন্য রোজা রাখি। আমার আবার কষ্ট কিসের? তারপরও প্রশান্তি ভরা হাসি ৬৯ বছরের এই বৃদ্ধা সুখিরণ ওরফে ভেজিরণ নেছার।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটী ইউনিয়নের বাজার গোপালপুর গ্রামের মৃত আবুল খায়েরের স্ত্রী সুখিরণ বছরের ১২ মাসই রোজা রাখছেন।
গ্রামের প্রতিবেশী যুবক মঞ্জুর আলম জানান, পরের ক্ষেতের কাঁচামরিচ, মুগকলাই তুলে ও চানাচুর ফ্যাক্টরিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন এই বৃদ্ধা। সারাদিন রোজা রাখার পরও খাবারের জন্য কারো কাছে যান না এই গর্বিত মা।
অনেকে ভাবতেই অবাক হয়ে যান যে, এই বৃদ্ধ বয়সেও নিজের রোজগার তিনি নিজেই করেন। নিজেই এখনো ভাত রান্না করে খান।
প্রতিবেশীরা জানান, যে সন্তানের জন্য তিনি ১২ মাস রোজা রাখেন, সেই সন্তানের কাছেও তিনি খাবারের জন্য যান না।
১২ মাস রোজা রাখা নিয়ে সুখিরণ নেছা বলেন, তার বয়স যখন ২৬ বছর, তখন বড় ছেলে শহিদুল ইসলাম হারিয়ে যান। দীর্ঘদিন খুঁজেও শহিদুলকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ১১ বছর বয়সী শহিদুল ফিরে আসবে এই মানতে তার বাড়িতে প্রতিদিন ছাগল জবাই করে শিরণী দেয়া হতো।
স্থানীয় বাজার গোপালপুর, মামুশিয়া ও চোরকোল গ্রামের মানুষ এই শিরণী খেতে তার বাড়ি আসতো।
এদিকে সন্তানের চিন্তায় পাগলপ্রায় মা সুখিরণ নেছা মনস্থির করেন যে, তার ছেলে ফিরে আসলে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির জন্য ১২ মাস রোজা রাখবেন। সুখিরণ এ প্রতিজ্ঞা করেন।
এরপর দেড় মাস পর একদিন তার হারিয়ে যাওয়া সন্তান নিজ বাড়ির আঙিনায় ফিরে এসে ‘মা’ বলে ডাক দেয়। সুখিরণ নেছা হারানো ধনকে বুকে ফিরে পেয়ে চূড়ান্ত স্বস্তি-শান্তির স্পর্শ পান।
এটা ১৯৭৫ সালের ঘটনা। এরপর থেকেই সুখিরণ স্থানীয় মসজিদের ইমাম হাফেজ তপু মিয়ার পরামর্শে ১২ মাস রোজা রাখা শুরু করেন।
প্রতিবেশীরা জানান, ২১ বছর আগে সুখিরণ নেছার স্বামী আবুল খায়ের মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর তার সংসারে অভাব অনটন দেখা যায়। সচ্ছল সংসারের হানা দেয় অনটন আর দারিদ্র্যতা।
তিন ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে মাঠের জমি ও ভিটেমাটি বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে পড়েন সুখিরণ।
প্রতিবেশীরা জানান, আমরা ছোট বেলা থেকেই দেখছি সুখিরণ নেছা ১২ মাস রোজা রাখেন। তিনি খুবই দরিদ্র এবং বসবাসের মতো তার কোনো বাড়িঘর নেই। ভাঙাচোরা ঘরে বসবাস করেন তিনি। এতো কষ্টের মধ্যেও তিনি রোজা ভাঙেন না।
যে ছেলের জন্য সুখিরণ নেছা ১২ মাস রোজা রাখেন সেই বড় ছেলে শহিদুল ইসলাম বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আমার জন্য মা কষ্ট করে রোজা রাখেন। আমি রোজা রাখতে নিষেধ করলেও শোনেন না তিনি।
অসুখ বিসুখ হলেও তিনি রোজা ভাঙেন না। মায়ের এ অবদানের ঋণ আমি কোনোদিন শোধ করতো পারবো না।
তিনি বলেন, আমি যতটুকু পারি মাকে সহায়তা করি। তবে তিনি আমাদের অপেক্ষায় থাকেন না।
এলাকার ইউপি সদস্য ও মধুহাটী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান তহুরুল ইসলাম জানান, বৃদ্ধা সুখিরণ ওরফে ভেজিরণ নেছা ১২ মাস রোজা রাখেন। তাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, তার বাড়িঘর নেই। তার ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য দেশের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবেন তিনি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন