আ’লীগ নেতার ছেলের ধর্ষণচেষ্টা, উল্টো গৃহবধূর জরিমানা..!
এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হয় স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে। ধর্ষণচেষ্টার মামলা করতে গেলে উল্টো গ্রাম্য সালিশে মারধরের অভিযোগে বাদীর ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এখানেই ঘটনার শেষ নয়, অব্যাহত হুমকির মুখে শুক্রবার ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে নির্যাতিত পরিবারটি।
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী ইউনিয়নের ডহরচাঁচুড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গত ১৫ আগস্ট ডহরচাঁচুড়ী গ্রামের এক গৃহবধুকে মধ্যরাতে বসতঘরে ওঁৎ পেতে থেকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় পাশের কৃষ্ণপুর গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বখাটে ছেলে মিজানুর রহমান মুকুল (৩০)।
গৃহবধূর আর্তচিৎকারে পলায়নকালে ধর্ষণ চেষ্টাকারী মুকুলকে হাতেনাতে ধরে স্থানীয় জনতা পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। কিন্তু বাদীর মামলা নেয়ার বদলে রহস্যজনক কারণে আসামিকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। বাদীকে থানায় আটকে রেখে বসে গ্রাম্য সালিশ।
সালিশে মোস্তফা উল্টো প্রকৃত অপরাধকে আড়াল করতে ধর্ষণ চেষ্টাকারী নিজের ছেলেকে কথিত মারধরের অভিযোগ আনেন। সালিশে নির্যাতিত পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এছাড়া নির্যাতিত পরিবারকে গ্রামছাড়া করার হুমকি দেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা। অন্যদিকে শ্লীলতাহানির মামলাটি তুলে নিতে মোস্তফার লোকজন বাদী ও তার পরিবারের সদস্যদের উপর্যুপরি হুমকি দিয়ে আসছে।
শেষ পর্যন্ত থানায় মামলা করতে না পেরে মোস্তফা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ২২ আগস্ট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নড়াইল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করে ভুক্তভোগী পরিবার। মামলার বাদী পুলিশের প্রধানের (আইজিপি) কাছে জানমালের নিরাপত্তা চেয়ে লিখিত আবেদনও করেছেন।
অন্যদিকে, আসামির বাবা আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা এই মামলার বাদী ও তার পরিবারের সদস্যদের জড়িয়ে কালিয়া থানায় পাল্টা হয়রানিমূলক একটি মামলা দায়ের করেছেন।
শেষ পর্যন্ত অব্যাহত গুম ও ইজ্জতহননের হুমকিতে ভীত হয়ে ওই গৃহবধূ ও তার পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে শুক্রবার অন্যত্র চলে গেছে বলে জানা গেছে।
নির্যাতিতা গৃহবধূ বলেন, ‘ধর্ষণ চেষ্টাকারী মুকুল মোল্যা দীর্ঘদিন ধরে আমাকে বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানি করে আসছিল। সুযোগ পেলেই বিভিন্ন রকম কু-প্রস্তাব দিতো। কিন্তু তার সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন গভীর রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে আমি ঘরের বাইরে বের হই। এ সুযোগে মুকুল ঘরের মধ্যে ঢুকে লুকিয়ে থাকে। এরপর শোবার সময় সে আমাকে জাপটে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা করলে আমি চিৎকার করি।’
এ প্রসঙ্গে চাঁচুড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নাজির মোল্যা যুগান্তরকে বলেন, ‘ধর্ষণ চেষ্টাকারীর বাবা মোস্তফা ছেলের অপরাধকে আড়াল করতে নির্যাতিত পক্ষকে থানায় আটকে রেখে একটি প্রহসনমূলক সালিশ করে উল্টো জরিমানা করেছে।’
এ ব্যাপারে কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ গণি মিয়া জানান, ‘ঘটনার শিকার গৃহবধূর শশুরকে থানায় অভিযোগ দিতে বললে তিনি মামলা করতে রাজি হননি। তাকে থানায় আটকে রাখিনি; তাকে আমার কক্ষে বসিয়ে রেখেছিলাম মাত্র।’
আসামি ছেড়ে দেয়া প্রসঙ্গে কালিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবদুল করিম বলেন, ‘ধর্ষণ চেষ্টাকালে গণধোলাইয়ের ঘটনায় মুকুল অসুস্থ হয়ে পড়ায় চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
এ বিষয়ে মুকুলের বাবা মোস্তফার সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি বর্তমান ঢাকায় আছি ছেলের চিকিৎসার জন্য। প্রতিপক্ষরা আমার ছেলেকে কয়েকদিন আগে রাতে ধরে নিয়ে নির্যাতন করেছে। এ বিষয়ে মামলা করা হয়েছে।’
তবে তার ছেলের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন
নারায়ণগঞ্জে জেএমবির দুই সদস্যের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অপতৎপরতা ও সহিংস ঘটনা সৃষ্টির সময়ে গ্রেফতার নিষিদ্ধবিস্তারিত পড়ুন
আড়াইহাজারে চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহজালালের ভোট বর্জন
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অনিয়ম, জাল ভোট, কেন্দ্রে এজেন্টবিস্তারিত পড়ুন