আলু চাষ নিয়ে ব্যস্ত মুন্সীগঞ্জের কৃষকেরা

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
দেশের বৃহত্তম আলু উৎপাদনকারী অঞ্চল মুন্সীগঞ্জের গোটা জনপদ এখন কর্মচঞ্চল। এ জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল আলু। জেলার ছয় উপজেলার দিগন্ত বিস্তৃত ক্ষেত জুড়ে এখন চলছে শুধু আলুর আবাদ। কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাড়িতে নারীরাও বীজ আলু কাটার কাজে ব্যস্ত। আগামী এক মাস ধরে চলবে আলুর আবাদ। গত দুই মৌসুমে আলুর ভালো ফলন ও আলু চাষে লাভবান হওয়ায় মুন্সীগঞ্জের কৃষকরা এবার বেশ উদ্দীপনা ও উৎসাহ নিয়ে আলু চাষ করছেন।
এদিকে, অন্যান্য বছর এ সময় মুন্সীগঞ্জে আগাম আলু বাজারে উঠে। কিন্তু এবার জমি থেকে পানি দেরিতে নামায় আগাম আলু চাষ ব্যাহত হয়। এখন জেলার ৬টি উপজেলার ৩৮ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে পুরোদমে আলু চাষ শুরু হয়েছে। আগামী এক মাস ধরে এ আলুর আবাদ চলবে। আলু উত্তোলন শুরু হবে আগামী মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে। আলু রোপণের পর তা পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে সময় লাগে তিনমাস।
আলু আবাদে জেলার কৃষকদের সহায়তা করছেন বাড়ির নারীরাও। তারা বীজ আলু কেটে দিচ্ছেন। কাটার পর শ্রমিকরা তা জমিতে নিয়ে রোপণ করছেন। বর্তমানে বাজারে আলুর চড়া দাম। বীজ আলু কাটার পর অবশিষ্ট কাটা আলু ব্যবসায়ীরা বাড়িতে গিয়েই ১৭-১৮ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আলুর দাম বেশি হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে।
মুন্সীগঞ্জে আদালত থেকে বিচার প্রার্থীকে অপহরণের চেষ্ঠা
মুন্সীগঞ্জে সরকারী খালের উপর পাকা ভবন নির্মান
মুন্সীগঞ্জে দিনদিন কৃষকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সঙ্গে কমছে শ্রমিকের সংখ্যাও। গ্রামের অনেক কৃষক পরিবারের একাধিক সদস্য প্রবাসী হচ্ছেন। অনেকের আর্থিক অনটন না থাকায় চাষাবাদ ছেড়ে দিয়ে জমি লগ্নি বা ভাড়া দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ টাকা লগ্নি খাটাচ্ছেন। এ অবস্থায় গত কয়েক বছর ধরে রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, ময়মনসিংহ, দিনাজপুরসহ উত্তরবঙ্গের শ্রমিকরা মুন্সীগঞ্জে ছুটে আসছেন আলু আবাদে। বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ জেলার জমিতে উত্তরবঙ্গের ৯ থেকে ১০ হাজার শ্রমিক আলুচাষে নিয়োজিত রয়েছেন। আর এখানকার সচ্ছল কৃষকরা ওই শ্রমিকদের জমি চুক্তি দিয়ে আলু চাষাবাদ করছেন। আলু চাষকে ঘিরে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সব পুঁজিও যাচ্ছে মাটির নিচে অর্থাৎ আলুর জমিতে। আলু চাষাবাদ মৌসুমে জেলার সব ধরনের ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দেয়। কৃষক সামাজিক বিয়ে বন্ধন থেকে বিরত থাকেন। মার্চ মাসে আলুর উঠার পর ব্যবসা-বাণিজ্য, বিয়ে-সাদিসহ সবকিছুই আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠে। বর্তমানে বাজারে সরকারি বিএনডিসির বীজ আলুর তীব্র সংকট রয়েছে, সারের নেই কোন সংকট।
মুন্সীগঞ্জের রনছ হাওলাপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ আলু চাষি হাসেম মিজি জানালেন, গত বছর আলু উৎপাদন করে ৩৬ মণ আলু বীজ হিসেবে রেখে দিয়েছিলেন। বিএডিসির বীজ আলু মাটির নিচে নষ্ট হয়ে পড়ায় তিনি নিজস্ব বীজ দিয়ে আলু রোপণ করছেন।
কেওয়ার নুরাইতলীর কৃষক কামাল হোসেন জানালেন, তিনি এবার ৫৪০ শতাংশ জমিতে আলুর আবাদ করছেন। এর অর্ধেক জমি ভাড়া নিয়েছেন, বাকিটা পৈতৃক। জমির ভাড়া, আলুর খরচ, সার, লেবার, চাষের খরচ মিলিয়ে প্রতি কানি অর্থাৎ ১৪০ শতাংশ জমিতে আলুচাষে খরচ পড়বে ১ লাখ ৮০ টাকা। এবার সারসহ অন্যান্য মালামাল গত বছরের সমান থাকায় আলুচাষে এবারও লাভবান হবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। বাড়ির নারীরা জানালেন, তারা দিনরাত আলু বীজ কাটছেন। ৮০ শতাংশ জমির আলু বীজ কাটতে সময় লাগবে ৩-৫ দিন।
উত্তরবঙ্গে শ্রমিকরা জানালেন, তারা প্রতি কানি অর্থাৎ ১৪০ শতাংশ জমি ১৮-২০ হাজার টাকায় চুক্তি নিয়ে আলু রোপণ করছেন। আলু রোপণ শেষে তারা বাড়ি ফিরে যাবেন। আলু উত্তোলনের জন্য আবার চৈত্র মাসে আসবেন। বিসিআইসি সার ডিলার সমিতির মুন্সীগঞ্জ শাখার সভাপতি মো. নোয়াব আলী জানালেন, চায়না সার বস্তায় ২-৩ কেজি করে কম হয়। এ জেলায় সারের কোনো ঘাটতি নেই। সার নিয়ে কৃষকের কোনো সমস্যাও হবে না। জেলা বিএডিসির বীজ আলু ডিলার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমদ উলাহ বলেন, বিএডিসির বীজ আলুর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এত অল্প বরাদ্দ দিয়ে কৃষকের চাহিদা মেটানো যাবে না।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছেন, মুন্সীগঞ্জ জেলায় ৭৮ হাজার কৃষক পরিবার রয়েছে। এসব পরিবারের প্রায় ৪ লাখ ৬৮ হাজার সদস্য কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। এ বছর জেলায় ৩৮ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমি আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত মৌসুমে ১৩ লাখ ৫১ হাজার ১২৯ মেট্রিক টন আলু উৎপন্ন হয়। এ আলুর মধ্যে ৬০-৬৫ হাজার মেট্রিক টন বীজ আলু হিসেবে জেলার ৬৮টি কোল্ড স্টোরেজে (হিমাগার) সংরক্ষণ করা হয়। জেলায় ডিলার রয়েছে ১৯২ জন।
এ মৌসুমে জেলায় বিএডিসির ৭৮ হাজার ১০০ টন বীজ আলুর চাহিদা রয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেছে ২ হাজার টন। জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, জেলায় বিএডিসির ২ হাজার টন বীজ আলু বরাদ্দ পাওয়া গেলেও কৃষকের কোনো ক্ষতি হবে না। কৃষক নিজেই কোল্ড স্টোরেজে বীজ আলু সংরক্ষণ করে থাকেন এবং বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জে বীজ আলু আমদানি হয়ে থাকে। এ কারণে বাজারে বীজের কোনো সংকট নেই বলে তিনি দাবি করেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

হঠাৎ বাস বন্ধ, বিপাকে যাত্রীরা
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাট এলাকার বাসস্ট্যান্ড থেকে আজ সববিস্তারিত পড়ুন

স্বামীকে ডাক্তার দেখিয়ে ফেরার পথে ধর্ষণের শিকার গার্মেন্টস কর্মী
মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় পদ্মার চরে এক গার্মেন্টস কর্মীকেবিস্তারিত পড়ুন

ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে ভাই খুন
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের খাসের হাট এলাকার চাচাতো ভাইয়েরবিস্তারিত পড়ুন