উপচে পড়ছে চট্টগ্রাম কারাগার
এক হাজার ৮৫৩ জন ধারণক্ষমতার বন্দিশালায় এখন ছয় হাজারের বেশি বন্দি। তিন গুণের বেশি বন্দি নিয়ে একেবারে উপচে পড়া অবস্থা চট্টগ্রাম কারাগারের। বন্দিদের ভাষ্য, শুধু উপচে পড়া নয়, ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা এখন। নাওয়া-খাওয়া, ঘুম নিয়েও অভিযোগের অন্ত নেই তাদের।
আলাপকালে বন্দিরা জানান, কারাগারে প্রতিদিন নতুন বন্দি আসছে শতাধিক। আর দিনে জামিনে মুক্তি পাচ্ছে মাত্র চার থেকে পাঁচজন। ফলে কারাগারে হাজতি-কয়েদির সংখ্যা ফুলে-ফেঁপে উঠছে। বন্দির সংখ্যা যত বাড়ছে, জীবন যাপন ততই জটিল হচ্ছে। কারাগারে ‘ইলিশ ফাইল’-এ (বন্দিদের রাখার একটি অংশ) ১০ জন বন্দির কক্ষে ঘুমাতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ জনকে।
কারাগার সূত্র জানায়, পৌর নির্বাচন ও আসন্ন ইউপি নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের বিশেষ অভিযানে চট্টগ্রামে প্রতিদিন গ্রেপ্তার হচ্ছে অপরাধীসহ অনেক রাজনৈতিক কর্মী। তারাা আদালত হয়ে প্রবেশ করছে চট্টগ্রাম কারগারে। যে হারে বন্দি আসছে, সেই হারে জামিন হচ্ছে না। তাই কারাগারে প্রতিদিন বাড়ছে বন্দির সংখ্যা।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হিসাবমতে, চট্টগ্রাম মহানগর ছাড়াও ১৪টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে প্রতিদিন গড়ে ৮০ জনের বেশি মানুষ গ্রেপ্তার হচ্ছে। ২০১৫ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে চার হাজারের বেশি আসামি বন্দি হয়। এদের মধ্যে ৪০০-৫০০ জন জামিনে ছাড়া পেলেও বাকিরা চট্টগ্রাম কারাগারেই রয়েছে।
কারা কর্তৃপক্ষের হিসাবমতে, চট্টগ্রাম কারাগারে ছয়টি পাঁচতলা ভবনের ১২০টি ওয়ার্ডে বর্তমানে বন্দির সংখ্যা ৫ হাজার ৭৪৭। তাদের মধ্যে ৪ হাজার ৮৪২ জন হাজতি এবং এক হাজারের মতো সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি।
কারাগারে বন্দি পুরুষদের মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত আসামি রয়েছে ৯১১ জন। এর মধ্যে সশ্রম কারাভোগ করছে ৬৩১ জন এবং বিনাশ্রম কারাভোগ করছেন ২৭৯ কয়েদি। আর নারী বন্দিদের মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত ৪৭ জন; যার মধ্যে সশ্রম কারাভোগে আছেন ২৭ জন এবং বিনাশ্রম কারাভোগ করছেন ২০ জন।
এই কারাগারে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত হয়েদি আছে ৪১ জন, যাদের মধ্যে ৩৯ জন পুরুষ ও ২ জন নারী। এ ছাড়া মহিলা বন্দি রয়েছে ২৯২ জন। মায়ের সঙ্গে হাজতবাস করছে ৪৯ জন শিশু। আর কিশোর অপরাধী আছে ২৭ জন।
বন্দিদের মধ্যে আট শতাধিক ছাত্রও রয়েছে, যাদের অধিকাংশই মাদক আইনে আটক বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার আবদুস সেলিম জানান, কারগারে বন্দির স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৮৫৩ জন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত এখানে মোট বন্দির সংখ্যা ছিল প্রায় ৬ হাজার।
বন্দি ব্যবস্থাপনার জন্য কারাগারে লোকবল রয়েছে ৩৪১ জন। ধারণক্ষমতার তিন গুণের বেশি বন্দি থাকার কথা স্বীকার করলেও জেল কর্তৃপক্ষ বলছে, এতে বন্দিদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
ডেপুটি জেলার আবদুস সেলিম বলেন, “জেল কোড অনুযায়ী প্রতিজন বন্দির জন্য দৈর্ঘ্য আর প্রস্থে ছয় ফুট করে জায়গা বরাদ্দ রয়েছে। আর একজন কারাবন্দির জন্য এত বিশাল জায়গার সত্যিই প্রয়োজন পড়ে না। তাছাড়া কারাগারের ভবনগুলোতে পর্যাপ্ত করিডোর ও কক্ষগুলো বড় পরিসরের হওয়ায় ১০ জনের জায়গায় ১৫ জন করে থাকতে বন্দিদের কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না।”
এদিকে কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে আসা কয়েকজন হাজতি আসামি নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, জেলখানার ভেতরে বন্দিরা অত্যন্ত মানবেতর অবস্থায় রয়েছে। ১০ জনের কক্ষে ৫০ জনের বেশি বন্দি রাখা হয়েছে। টাকা দিলে মিলছে ঘুমানোর জায়গা। টাকা না দিলে রাতে ঘুমাতেও পারে না বন্দিরা।
জেলখানায় ‘ইলিশ ফাইল খ্যাত’ (এক পাশ হয়ে একজনের শরীরের সঙ্গে অপরজনের শরীর লাগিয়ে ঘুমানো) নামের বিশেষ পন্থায় প্রতি রাতে ঘুমাতে হচ্ছে শত শত বন্দিকে। মিলছে না পর্যাপ্ত গোসলের পানি। মিলছে না জেল কোড অনুযায়ী বরাদ্দ মতো খাবার।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
কুড়িগ্রামে ভয়াবহ বন্যায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দী
কুড়িগ্রামে টানা ৬ দিন বন্যায় ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। মানুষজনবিস্তারিত পড়ুন
চালু হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত হাট
প্রায় সাড়ে চার বছর পর আগামী ২৯ জুলাই থেকে চালুবিস্তারিত পড়ুন
রায়পুরায় বিএনপির প্রায় ১০০ নেতা কর্মী আ’লীগে যোগদান
‘আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে, ঘরের ছেলে ঘরেবিস্তারিত পড়ুন