এক রাত্রেই পঙ্গু হয়ে গেল সম্পূর্ণ সুস্থ শিশু, কারণ ছিল এই ভয়ঙ্কর জীবটি
একটা গোটা দিন কেটে যাওয়ার পরেও যখন কোনও উন্নতি হল না শিশুটির, তখন তাকে মেমফিসের লে বোনিওর চিলড্রেনস হসপিটাল-এ স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নিলেন স্টেফানি আর ডিলন।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিসরে এমন এমন কিছুই ঘটে, যার ব্যাখ্যা খুঁজতে গিয়ে বিস্ময়ের ঘোর কাটতে চায় না খোদ চিকিৎসকদেরও। ৩ বছর বয়সি মার্কিন শিশু কলিনের কেসটা সে রকমই একটি ঘটনা। বছর দু’য়েক আগের এক রাত্রে যখন সে ঘুমোতে যায়, তখনও পর্যন্ত সে ছিল দিব্যি সুস্থ স্বাভাবিক একটি বাচ্চা। তার মধ্যে প্রাণবন্ততার কোনও অভাব দেখেননি তার বাবা-মা ডিলন আর স্টেফানি। কিন্তু পরের দিন সকাল বেলা একরত্তি শিশুটিকে খাওয়াতে গিয়ে ডিলন আর স্টেফানি বুঝতে পারেন, বাচ্চাটি কোনও খাবার গিলতে পারছে না। এমনকী, জল পর্যন্ত নামছে না তার গলা দিয়ে। বেলা একটু গড়ানোর পর ডিলন আর স্টেফানি লক্ষ করেন, কলিন তার গলার নীচের কোনও অংশই নাড়াতে পারছে না। হাত-পা সব কিছুই একেবারে পাথরের মতো স্থির হয়ে রয়েছে তার। আতঙ্কিত ডিলান-স্টেফানি বুঝে যান, তাঁদের ছেলে অকস্মাৎ পঙ্গু হয়ে গিয়েছে।
তড়িঘড়ি স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কলিনকে। তার বাবা-মা তখনও বুঝতে পারছেন না, ঠিক কী হয়েছে কলিনের। গত দু’-এক দিনে কলিনের সঙ্গে অস্বাভাবিক কিছু ঘটে গিয়েছে কি না, ভাবতে গিয়ে তাঁদের মনে পড়ে, গতকাল বিকেলে নিজের দাদার সঙ্গে বেসবল খেলছিল কলিন। সেই সময়েই পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পায় সে। সামান্য কান্নাকাটির পরে অবশ্য কলিন একেবারে স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু ডিলন আর স্টেফানি তখন ভাবছেন, আপাতদৃষ্টিতে অতি নিরীহ মনে হয়েছিল যে আঘাত, তা-ই হয়তো ভেতরে ভেতরে গুরুতর আকার ধারণ করেছে। এতটাই গুরুতর যে, পঙ্গুই হয়ে গিয়েছে তাঁদের ছেলে।
ডাক্তাররা ততক্ষণে কলিনকে নিয়ে গিয়েছেন এমারজেন্সি রুমে। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেও তাঁরা কোনও ধারণাই করতে পারেননি যে ঠিক কী ঘটে চলেছে কলিনের শরীরে। বিস্তারিত পরীক্ষার জন্য তাঁরা হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি করে নেন কলিনকে।
একটা গোটা দিন কেটে যাওয়ার পরেও যখন কোনও উন্নতি হল না শিশুটির, এমনকী ডাক্তাররা তাঁর আকস্মিক পঙ্গুত্বের কারণটিও আবিষ্কার করতে পারলেন না, তখন তাকে মেমফিসের লে বোনিওর চিলড্রেনস হসপিটাল-এ স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নিলেন স্টেফানি আর ডিলন। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেই বোনিওর-এর ডাক্তাররা বুঝে যান, কলিনের এই আকস্মিক পঙ্গুত্বের কারণ কোনও আঘাত নয়। বরং এক বিচিত্র কারণে অসাড় হয়ে গিয়েছে শিশুটির হাত-পা। তার বাবা-মা-কে একেবারে বিস্মিত করে দিয়ে কলিনের কানের পিছন থেকে তাঁরা বার করে আনেন একটি এঁটুলি পোকা। জানান, এই সামান্য পোকাটির কামড়ই পঙ্গু করে দিয়েছিল কলিনকে।
কিন্তু কী ভাবে একটি সামান্য এঁটুলি পোকার কামড় পঙ্গু করে দিতে পারে একটি শিশুকে? এই প্রশ্নের উত্তরে ব্যাখ্যা দিয়ে ডাক্তার ট্রেভিস স্টর্ক বলেন, ‘এঁটুলি পোকার কামড় অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু সেই কামড়ের ফলে শরীর পঙ্গু হয়ে যাওয়ার ঘটনা অত্যন্ত বিরল। আসলে এঁটুলে পোকার লালাগ্রন্থিতে নিউরোটক্সিন থাকে। এঁটুলি পরজীবী জীব। অর্থাৎ যে প্রাণীর দেহে তা বাসা বাঁধে, তার রক্তেই পুষ্ট হয় সে। এ ক্ষেত্রে সেই কীট কলিনের রক্ত শোষণ করছিল। সেই সময়েই জীবটির লালায় থাকা নিউরোটক্সিন মিশে যায় শিশুটির রক্তে। আর তার ফলেই তার শরীরে দেখা দেয় এক বিশেষ ধরনের পঙ্গুতা, যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় অ্যাসেন্ডিং প্যারালাইসিস।’
পোকাটিকে কলিনের শরীর থেকে তুলে নেওয়ার একটু পর থেকে সে আস্তে আস্তে সুস্থ হতে থাকে। এক দিনের মধ্যেই তার শরীরের সমস্ত সাড় ফিরে আসে। একেবারে সুস্থ হয়ে যায় কলিন।
ঘটনার পরে বছর দু’য়েক কেটে গিয়েছে। এখন পুরোপুরি সুস্থই আছে কলিন। সম্প্রতি তাঁর সেই বিচিত্র পঙ্গুত্বের ঘটনা সংক্রান্ত ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই ভিডিও হয়তো নতুন করে উস্কে দিতে পারে স্টেফানি-ডিলনের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার স্মৃতি। আপনিও দেখুন সেই ভিডিও
—
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন