এদের সাথে কথা বললেই জরিমানা পাঁচশ, কেন জানেন?
ফের উঁচু-নিচু জাতের ভেদাভেদ নিয়ে সামাজিক বয়কটের শিকার শালবনির কুড়িটি পরিবার৷ পানীয় জল থেকে চিকিৎসক, মুদি দোকান- সবেতেই উঁচুজাতের ফরমান জারি৷ নিচু জাতের সঙ্গে কথা বললেই জরিমানা দিতে হবে পাঁচশ’ টাকা৷ পরিস্থিতির কারণেই আপাতত কোণঠাসা হয়ে শালবনির পরিবারগুলো৷ প্রশাসনিক দফতরে লিখিত জানিয়েও মেলেনি সুরাহা৷
ভারতের এক গণমাধ্যম সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ঘটনা, পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি থানার পাথরাজুড়ি গ্রামের৷ মেদিনীপুর শহরে থেকে প্রায় কুড়ি কিমি দুরে এই গ্রাম৷ গোদাপিয়াশাল থেকে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনার রাস্তা ধরে কিলোমিটার পাঁচেক গেলেই এই গ্রাম পড়ে রাস্তার ধারে৷ এই গ্রাম দু’টি প্রান্তে দু’টি ভাগ হয়ে গেছে বর্তমানে৷
যার একদিকে রয়েছে দেড়শ’টি পরিবার নিয়ে দোলাইপাড়া, যাদের মধ্যে অনেকেই সাধারণ পর্যায়ের, যারা নিজেদের উচ্চ সম্প্রদায়ের বলে মনে করেন৷ অন্যদিকে রয়েছে আদিবাসী ভূমিজ সম্প্রদায়ের কুড়িটি পরিবারের লোকজন, যেটাকে সিংহ পাড়া বলা হয়৷ এদের নিচু জাত বলে বর্তমানে অ্যাখ্যা দিয়ে সামাজিক বয়কটে রেখেছে পাশের দোলাইপাড়া৷
জানা গেছে, গ্রাম থেকে পাঁচশ’ মিটার দূরে মাঠের মাঝে একটি মন্দির রয়েছে৷ গাছের তলাতে মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দীর্ঘদিন ধরে পুজো দেওয়ার চল গ্রামবাসীদের৷ কয়েকমাস আগে এই মন্দিরে পুজো দেয়াকে কেন্দ্র করেই দুই ভাগে বিভাজন ঘটেছে গ্রামবাসীদের৷ মন্দিরের কর্তৃত্ব নিয়ে দুই পাড়ার সংঘর্ষও হয়৷ সামাল দিতে আসতে হয়েছিল শালবনি থানার পুলিশকে৷ এর পরেই সংখ্যাগুরু দোলাই পাড়ার লোকজনের ফরমান জারি হয়৷
অভিযোগ, দোলাই পাড়ার লোকজন সিংহপাড়ার ভূমিজ সম্প্রদায়ের লোকজনকে নিচু জাত অ্যাখ্যা দিয়ে গ্রামের পরিষেবা থেকে বয়কট করা হয়৷ বলা হয়- পানীয় পরিষেবা বন্ধ করা হচ্ছে, সিং দের জমিতেও কোনো লোক সেচ দেবেন না বা কাজ করবেন না৷ কোনো গ্রামীণ চিকিৎসক সিংহদের চিকিৎসা করবেন না ৷ এমনকি দোলাইদের কেউ সিংহপাড়ার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললেও পাঁচশ’ টাকা জরিমানা৷
সবদিক থেকে সামাজিক বয়কট চলছে প্রায় পঁচিশ দিন ধরে৷ দোলাই পাড়াতে রয়েছে স্থানীয় প্রধান শ্যামসুন্দর দোলাই৷ তিনিও নাকি দোলাই পাড়ার পক্ষে কাজ করছেন৷ পরিস্থিতি নিয়ে জেলা শাসক ও পুলিশ সুপারকেও লিখিতভাবে জানিয়েছেন গ্রামের সিংপাড়ার বাসিন্দারা ৷ কিন্তু সুরহা হয়নি৷ সমস্ত বয়কট থেকে কষ্টের মধ্যে রয়েছেন সিংপাড়ার দেড়শ’র বেশি মানুষ ৷
স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বজিৎ সিং বলেন ‘আমাদের নিচু জাত বলে উল্লেখ করে সামাজিক ভাবে বয়কটে রাখা হয়েছে৷ চাষের জমিতে জল দিতে বারণ করায় ধান মরেছে, তিল জমি শুকিয়ে যাচ্ছে৷ শারীরিকভাবে অসুস্থদের চিকিৎসা করতে দিচ্ছে না গ্রামীণ চিকিৎসকদের৷ এমনকী, পাশের পাড়ার কেউ কথা বললে তার পাঁচশো টাকা জরিমানা বলে ঘোষণা করেছে৷’
সিংহপাড়া ও দোলাই পাড়ার মাঝে রয়েছে একটি মুদির দোকান৷ দোকানের মালিক এক মহিলা শ্যামলী সিং বলেন, ‘আমার মুদি দোকান থেকেই সংসার চলে ৷ আমি এই পাড়ার লোকেদের জিনিস বিক্রি করেছিলাম বলে আমাকেও বয়কট করা হয়েছে ৷ কেউই কথা বলেনি আমাদের সঙ্গে , আসছে না দোকানেও ৷ স্থানীয় প্রধান দোলই পাড়ার বলে সঙ্গ দিয়েছে উঁচুজাত দোলই পাড়ার৷’
এ বিষয়ে স্থানীয় কাশীজোড়া অঞ্চল প্রধান শ্যামসুন্দর দোলাই বলেন, ‘জাতিভেদ সমস্যা নয়,মন্দিরে পুজো করা নিয়ে সমস্যা ৷ তবে বয়কটের অভিযোগও মিথ্যা ৷ সমস্যা যেটা রয়েছে, সে বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছি৷’ এই ধরনের সমস্যা পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়েও দেখা দিয়েছে৷ সামাজিক ভাবে বয়কটে থাকা বেশ কিছু রুইদাস পরিবার জেলা শাসকের দফতরে এসে বিক্ষোভ দেখায় সম্প্রতি৷ সেই সমাধান করার আগে ফের শালবনিতে একই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন