এফডিসিতে চলছে সরকারি অর্থ অপচয়ের হরিলুট
ঢাকাই চলচ্চিত্রের সূতিকাগার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)। সাধারণ মানুষকে নির্মল বিনোদন দিতে সুস্থ ও রুচিসম্মত চলচ্চিত্র নির্মাণের লক্ষ্যেই প্রতিষ্ঠানটির জন্ম। বিভিন্ন সময় প্রতিষ্ঠানটির আধুনিকায়ন ও উন্নয়নের জন্য সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রস্তাব এবং প্রকল্প গৃহীত হয়েছে।
সাম্প্রতিককালে সেই উন্নয়নের নামে সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানটি এখন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ট্রেনিংয়ের নামে বিদেশ ভ্রমণে মত্ত প্রতিষ্ঠানটির সর্বোচ্চ প্রশাসক ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। প্রতিবছর জাতীয় বাজেটে সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নের জন্য কিছু অর্থ নির্ধারণ করা হয়।–যুগান্তর।
কোনো কোনো সময় এই অর্থের পরিমাণ ৫০ কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে এই অর্থ নিয়েই চলছে হরিলুট। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এফডিসির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কয়েকটি বিষয়ে ট্রেনিংয়ের জন্য আমেরিকা, জার্মান ও জাপানে লোকবল পাঠানো হবে। এর মধ্যে রয়েছে রেড ক্যামেরা (জঊউ) অপারেশন ও যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের ওপর প্রশিক্ষণ। স্বভাবতই এর জন্য ক্যামেরা সংশ্লিষ্ট দক্ষ লোক অর্থাৎ ক্যামেরাম্যান ও তার সহকারীকেই উচ্চতর ট্রেনিংয়ের জন্য বিদেশে পাঠানো উচিত।
কিন্তু তা না হয়ে খোদ এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন কুমার ঘোষই এই ট্রেনিং নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি একজন সরকারি আমলা। চাকরি সূত্রে পোস্টিংয়ে এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ক্যামেরা চালানোর ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি কোন ছবির ক্যামেরাম্যান হিসেবে কাজ করবেন সেটা বোধগম্য নয়। এই ট্রেনিংয়ের জন্য আমেরিকায় ৫ জন লোক ১০ দিন অবস্থান করবেন। যার জন্য খরচ হবে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার (১১ লাখ টাকারও বেশি)।
ক্যামেরা পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ট্রেনিংয়ের নামে আমেরিকা ভ্রমণে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্তৃক এফডিসি থেকে তথ্য মন্ত্রণালয়ে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, তপন কুমার ঘোষ (ব্যবস্থাপনা পরিচালক), মামুন-অর-রশীদ (সহকারী প্রকল্প পরিচালক), মো. মনিরুজ্জামান (সহকারী প্রকৌশলী)। একই ট্রেনিংয়ে যাওয়ার জন্য মূল নামের পাশাপাশি বিকল্প নামও প্রস্তাব করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছেন তপন কুমার ঘোষ (ব্যবস্থাপনা পরিচালক), মো. শামীম (সম্পাদনা প্রধান), আলমগীর হোসেন (স্টোর কিপার)। এছাড়াও তাদের সঙ্গে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ আরও একজন সংযুক্ত হবেন বলে জানা গেছে। উল্লিখিত প্রস্তাবিত নামের কেউ ক্যামেরাবিষয়ক কোনো কিছুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। তবুও ক্যামেরা অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ ট্রেনিংয়ের জন্য তাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
অন্যদিকে একই প্রকল্পের আওতায় ক্যামেরা লেন্স অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রশিক্ষণের জন্য একটি টিমকে জার্মান পাঠানো হবে। সেখানে তারা সাতদিন অবস্থান করবেন। যার জন্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ হাজার মার্কিন ডলার (১৭ লাখ টাকারও বেশি)। দুইভাবে বিভক্ত এই ট্রেনিংয়ের প্রথম লটের জন্য মূল নাম প্রস্তাব করা হয়েছে লক্ষণ চন্দ্র দেবনাথ (প্রকল্প পরিচালক), খান মো. মশিউল আলম (সিনিয়র ক্যামিস্ট, ল্যাব শাখা) ও মো. আইয়ুব আলী (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী)। এর বাইরে একই ট্রেনিংয়ের জন্য বিকল্প নাম প্রস্তাব করা হয়েছে লক্ষণ চন্দ্র দেবনাথ (প্রকল্প পরিচালক), খান মো. মশিউল আলম (সিনিয়র ক্যামিস্ট, ল্যাব শাখা) ও হারুন-অর-রশীদ (স্টোর কিপার)। একই ট্রেনিংয়ের দ্বিতীয় লটের ট্রেনিংও হবে জার্মানে। তিনজনের একটি দল সেখানে সাতদিন অবস্থান করবে। যার জন্য ব্যয় হবে ২২ হাজার মার্কিন ডলার। এর জন্য মূল নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তপন কুমার ঘোষ (ব্যবস্থাপনা পরিচালক), মামুন-অর-রশীদ (সহকারী প্রকল্প পরিচালক) ও আকলিমা আক্তার (সহকারী প্রকৌশলী)। পাশাপাশি বিকল্প নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তপন কুমার ঘোষ (ব্যবস্থাপনা পরিচালক), মামুন-অর-রশীদ (সহকারী প্রকল্প পরিচালক) ও মো. শামীম (সম্পাদনা প্রধান)। এখানেও একই বিষয় লক্ষণীয়। ক্যামেরাসংশ্লিষ্ট কারো নামই এই লেন্স অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ ট্রেনিংয়ে নেই। বরং যারা এ বিষয়টিতে পূর্ব থেকেই দক্ষ তাদের কারো নামই প্রস্তাব করা হয়নি। উদ্দেশ্য একটাই। সরকারি অর্থে বিদেশ ভ্রমণ।
এছাড়াও সেন্ট্রাল স্টোরেজ রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্যান্য ট্রেনিংয়ে লন্ডন যাওয়ার জন্য আগে থেকেই অনুমোদিত ছিলেন মো. আজম (পরিচালক, কারিগরি ও প্রকৌশল) ও নুরেন নবী (শব্দ গ্রহণ প্রকৌশলী)। কিন্তু বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাদের বাদ দিয়ে নতুনভাবে লক্ষণ চন্দ্র দেবনাথ ( প্রকল্প পরিচালক) ও মো. আলাউদ্দীন (প্রিন্টার, ল্যাব শাখা) নাম প্রস্তাব করেন। এখানেও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষ লোকদের উন্নত প্রশিক্ষণ না দিয়ে বিদেশ ভ্রমণের জন্য নাম পরিবর্তনের বিষয়টি লক্ষণীয়।
এ মুহূর্তে এফডিসির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ট্রেনিংয়ের জন্য জাপানে অবস্থান করছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন কুমার ঘোষ, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) শরাফ উদ্দীন ও এফডিসির সহকারী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান। তাদের ট্রেনিংয়ের বিষয় হচ্ছে ক্যামেরা জুম লেন্স অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ। গত ২৮ আগস্ট এ তিনজন কর্মকর্তা সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে জাপান গিয়েছেন। ওখানে তারা সাতদিন অবস্থান করবেন। এই ট্রেনিংয়ের জন্য ব্যয় হচ্ছে ২০ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ১৬ লাখ টাকা)। অত্যন্ত হাস্যকর হলেও সত্যি যে, এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ যে তিনজন কর্মকর্তা এ মুহূর্তে ক্যামেরা জুম লেন্সের ওপর জাপানে প্রশিক্ষণ নিতে অবস্থান করছেন তাদের এই ট্রেনিং একটি আধুনিক চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে কোন কাজে লাগবে? স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষ লোকদের প্রশিক্ষণে না পাঠিয়ে এফডিসির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার পছন্দের কর্মকর্তাদের নিয়ে সরকারি অর্থ অপচয় করে এই বিদেশ ভ্রমণের হেতু কী? চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন, কেন একটি আধুনিক চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য এফডিসির সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষ লোকদের প্রশিক্ষণে পাঠানো হচ্ছে না? কেন সরকারি অর্থে ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ কতিপয় কর্মকর্তা বিদেশে আনন্দ ভ্রমণে মেতে উঠেছেন?
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সমুদ্র পাড়ে দুর্গারূপে নওশাবা
শুধু ঈদ কিংবা পূজা নয়, বিশেষ ধর্মীয় দিন উপলক্ষে ফটোশুটেবিস্তারিত পড়ুন
শুল্কমুক্ত গাড়ি খালাস করেছেন সাকিব-ফেরদৌস, পারেননি সুমনসহ অনেকে
আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের জন্য আমদানি করাবিস্তারিত পড়ুন
আলোচিত নায়িকা পরীমনির পরিবার সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানতেন?
গভীর রাতে সাভারের বোট ক্লাবে গিয়ে যৌন হেনস্তা ও মারধরেরবিস্তারিত পড়ুন