ঐশীর সুইসাইড নোট, দুই বার ফাঁসি ও আপিল শুনানি
পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রীকে হত্যা মামলায় তাদের মেয়ে ঐশী রহমানকে নিম্ন আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল শুনানি শুরু হয়েছে।
রবিবার বিকেলে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে পেপার উপস্থাপন করছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির।
এর আগে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ঐশীর করা আপিল ও রাষ্ট্রপক্ষের ডেথ রেফারেন্স আবেদনের শুনানির জন্য ঐশীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনবিষয়ক (ডেথ রেফারেন্স) ৭২০ পৃষ্ঠার পেপার বুক প্রস্তুত করা হয়।
২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজেদের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরদিন ঐশী গৃহকর্মী সুমীকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন।
২০১৪ সালের ৯ মার্চ ডিবির ইন্সপেক্টর আবুয়াল খায়ের মাতুব্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে ঐশীসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করে পৃথক দু’টি চার্জশিট দাখিল করেন।
অপর আসামি গৃহকর্মী খাদিজা আক্তার সুমি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তার মামলাটির বিচার চলছে শিশু আদালতে। এ হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর নিহতদের একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদের আদালত। ঐশীকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলার অন্য আসামি ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে খুনের ঘটনার পর ঐশীদের আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে দু’বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরও একমাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। অপর আসামি ঐশীর বন্ধু আসাদুজ্জামান জনি খালাস পেয়েছেন।
দু’টি খুনের জন্য পৃথক দু’টি অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। দু’টি অপরাধের জন্য আলাদা আলাদা করে ঐশীকে দু’বার ফাঁসি ও দু’বারে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। রায়ের ৭ দিন পর ১৯ নভেম্বর ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে এসে পৌঁছে। পরে এ মামলায় শুনানির জন্য আপিল গ্রহণ করেন হাইকোর্ট।
এরপর রাষ্ট্রীয় প্রকাশনা সংস্থা বিজি প্রেসে আপিল শুনানির জন্য ঐশীর মামলার পেপারবুক তৈরির পর হাইকোর্টে পৌঁছে। পরে গত বছর শুনানির জন্য ডেথ রেফারেন্স ও ঐশীর আপিল কার্যতালিকাভুক্ত হয়।
পুলিশের ভাষ্য মতে, আগের রাতে কোনো এক সময়ে কফির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বাবা-মাকে কুপিয়ে হত্যা করেন ঐশী। পরদিন সকালে সাত বছর বয়সি ছোট ভাইকে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। পরে ভাইকে এক প্রতিবেশীর বাসায় পাঠিয়ে একদিন পর গৃহকর্মী সুমিকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন তিনি।
মা-বাবাকে হত্যার আগে একবার নিজেই আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন ঐশী। এজন্য বিশাল একটি সুইসাইড নোটও লিখেছিলেন তিনি। পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঐশীর শোবার ঘর তল্লাশি করে হাতে লেখা ওই নোটটি উদ্ধার করে। তবে সেটি ঐশী কবে লিখেছেন বা কার কাছে লিখেছেন, তার উল্লেখ নেই। স্কুলখাতার ১২ পৃষ্ঠা জুড়ে লেখা ওই চিঠিতে ঐশী লিখেছেন-
প্রিয়,
আমি জানি না এই চিঠি আমি কাকে লিখছি। তারপরও কাউকে না কাউকে কিছু একটা বলতে খুব ইচ্ছে করছে। আমি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আরও কঠিন মনে হচ্ছে। বুক ভেঙে যাচ্ছে। আত্মহত্যার কারণ আমি কাউকে বলতে চাইছি না। একজনের দুঃখ সাধারণত আরেকজন কখনোই মন থেকে বুঝতে পারে না। আমার আত্মহত্যার কারণ তোমার কাছে খুবই অপ্রয়োজনীয় ও হাস্যকর মনে হতে পারে। সুতরাং সেই ঝামেলায় গেলাম না। আমার এই চিঠিটাকে সুইসাইডাল নোট বলা যেতে পারে। তুমি নিশ্চয় অবাক হচ্ছো, জীবনের শেষ কথাগুলো আমার আত্মীয়-স্বজন, বাবা-মাকে না জানিয়ে কোনো অপরিচিত কাউকে কেন জানাচ্ছি! তারা কোনোদিনও আমাকে বুঝতে পারেনি।
আমার অনেক খারাপ দিক আছে- সেই খারাপ দিকগুলো চালাকি করে বুঝে ফেলা ছাড়া ভালো দিকগুলো কখনোই তারা বোঝার চেষ্টা করেছে কি-না সন্দেহ!
আমার এই চিঠিটি তাদের দেখাতে লজ্জা এবং ঘৃণা লাগে। কারও প্রতি আমার কোনো রাগ নেই। মানুষকে দোষ দিয়ে কী লাভ বলো! প্রত্যেকেরই তো নিজস্ব চিন্তাধারা, আশা থাকে। প্রত্যেকেই চায় তার ইচ্ছা পূরণ হোক। শুধু যেটা বুঝতে পারে না অন্য মানুষের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে। আনন্দের একটি নির্দিষ্ট কারণও থাকতে পারে।
আমি জানি, তারা আমাকে অনেক ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা নিয়ে প্রশ্ন তোলার বা দোষ ধরার ইচ্ছা, রাগ, শক্তি কোনোটাই আমার এখন আর নেই। শুধু একটাই আফসোস থেকে গেল- জীবনে অনেক স্বপ্ন ছিলো কোনোটাই পূরণ করতে পারলাম না। এ পৃথিবীর মানুষ সবাইকে বুকের মাঝে নিয়ে যে স্বপ্নগুলো দেখেছিলাম সবই কেমন যেন ধুয়ে-মুছে গেল, সব শেষ। আচ্ছা সব কিছু এমন হয়ে গেল কেন, বলোতো?
ভাইয়া/আপু
আমিতো মানুষকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম! পৃথিবীকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম! মানুষের হাসি-কান্না, আনন্দ ভালো লাগা, অনুভূতি, প্রেম, সবচেয়ে বড় কথা- মানুষকে ভালোবাসা। পৃথিবীর নানা জায়গার সৃষ্টি এতো সুন্দর যে বেহেস্তকেও যেন হার মানায়। কেন শেষ পর্যন্ত এখানে বাস করে যেতে পারলাম না! কেন এসব উপভোগ করে যেতে পারলাম না শেষ সময় পর্যন্ত!
আমি জানি, এর উত্তর একমাত্র ঈশ্বর ছাড়া আর কারো কাছে নেই। হয়তো বা ঈশ্বরের কাছেও নেই! আমি সবসময় শুনে আসছি, তুমি যদি মন দিয়ে কোনো কিছু চেয়ে থাকো তবে অবশ্যই তা পাবে। আমার স্বপ্ন আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো আমি কী মন দিয়ে চাইনি! শুধু মন দিয়ে চাওয়া এই স্বপ্নগুলো পূরণ করার জন্য কত কষ্টই না করলাম। মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে।
শারীরিক কষ্টটা হয়তো অন্যের দৃষ্টিতে এত বেশি হবে না। আমার জন্য তা অনেক ছিলো। আহ, ওহ, মানসিক কষ্টের কথা বলতে গিয়ে আমার হাত কাঁপছে। একটা সময় ছিলো, এমন কোনোদিন যেত না যে আমি কাঁদতাম না। জীবনের দুইটা বছর নষ্ট হয়ে গেল। দুইটা বছর একা একা কাটালাম। এ দুইটা বছর যে কিসের ভেতর দিয়ে গিয়েছি, আমি আর ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ জানে না। হাজার কষ্টের মধ্যেও একটা জিনিস চিন্তা করে স্বস্তি পেতাম।
অন্তত আর কেউ না থাকুক ঈশ্বর আমার পাশে থাকবে। আর কেউ না বুঝুক, উনি আমার কষ্টটা বুঝবেন। আমি এখনও জানি তিনি আমার পাশে আছেন। যা হোক এসব কথাবার্তা
বলা এখন অর্থহীন। মনের ভেতর এক অজানা উল্লাস হচ্ছে। কেন জানি মনে হচ্ছে, মৃত্যুর পর আমার পছন্দের জায়গায় চলে যাব। জায়গাটা পৃথিবীর মতোই হবে। কিন্তু এই পৃথিবীতে আমার স্বপ্নগুলো এখনো পূরণ হয়নি। যেগুলো পূরণ করতে হবে। মানুষ কেমন আজব প্রাণী তাই না! আশা (হোপ) মানুষ ছাড়তে পারে না। মরতেও চাই আশা নিয়ে। আমি জানি না মৃত্যুর পর কী হবে! দেখা যাক কী হয়! আসলে মৃত্যুর পরের জীবন বলতে হয়তো কিছুই নেই!
শুধুই মাটির সঙ্গে মিশে যাবো। তাহলে তো সবই শেষ। যা হোক, মৃত্যুর পর যদি কিছু নাও পাই, এই পৃথিবীতে যতটুকু সময় কাটিয়েছি, আমার এ ছোট্ট জীবন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। তুমি হয়তো বা মনে করতে পারো, এ পৃথিবীতে এসে তো কিছুদিন পর আত্মহত্যাই করলাম। সময় নিশ্চয় ইহকালে ভালো কাটেনি, তাহলে কৃতজ্ঞ হওয়ার কী আছে? ন্যাকামির আর জায়গা পাই না! কি জানি!
ভাইয়া/আপু,
কেন জানি ভালো লাগে। পৃথিবীতে এসে অনেক কষ্ট পেয়েছি ঠিকই, সবচেয়ে বড় কষ্টটা হলো আশা শেষ হয়ে যাওয়ার কষ্ট। তীব্র হতাশা মাথার ওপর ভেঙে পড়ার কষ্ট। মানুষ কি আশা ছাড়া বাঁচতে পারে বলো, এই একটা জিনিসই তো আছে! যা কি-না বহুদিন পর্যন্ত আঁকড়ে ধরে রাখা যায়। কিন্তু আমি যদি বলি পৃথিবীতে আমার জীবনের সময়গুলোতে কোনো সুখ স্মৃতি নেই- তাহলে তো মিথ্যা বলা হবে। কত ভালো, কত আনন্দ, কত কি-ই না আছে! কত সুন্দর মানুষের হাসি, সেই সুখগুলো, কোনো ছেলেকে প্রথম ভালো লাগা- সেই অনুভূতিগুলো।
পছন্দের আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দেওয়ার সেই সময়গুলো, পৃথিবীর ইতিহাস পড়ে, সুন্দর জায়গার দৃশ্য দেখে অভিভূত হওয়ার সময়গুলো….কত কি-ই না আবিষ্কার করলাম! পৃথিবীর ব্যাপারে, মানুষের জীবনের ব্যাপারে। মানুষের জীবন সম্বন্ধে কত সুন্দর সুন্দর তথ্যই না জানলাম। এর থেকে সুন্দর জিনিস আর কি-ই বা হতে পারে! মানুষের তৈরি কত অদ্ভুত-চমত্কার জিনিসই না দেখার সৌভাগ্য হলো।
ঈশ্বরের বিশাল ও তুলনাহীন সৃষ্টি দেখতে পারলাম। এই জায়গাটায় না আসলে এসব কীভাবে জানতাম! কীভাবে দেখতাম! মরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এখন সবকিছুই সহজ মনে হচ্ছে। এক ধরনের স্বস্তি বোধ করছি। সবচেয় বেশি স্বস্তি বোধ করছি জীবন যুদ্ধ আর আমাকে করতে হবে না।
জীবনযুদ্ধে হেরে গেলাম এই কথাটা আগে শুধু বইতে পড়তাম। তখন অনুভব করতে পারিনি, এখন বুঝতে পারছি জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়া আসলে কী জিনিস। আমি সব সময় শুনে এসেছি, যারা আত্মহত্যা করে তারা নাকি দোজখে যায়। জিনিসটা কেন জানি বিশ্বাস করতে পারি না। কারণ যে মানুষটা এখন স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে, তার ভেতরে কী পরিমাণ হতাশা, কষ্ট, দুঃখ থাকলেই না জানি সে এমন একটা কিছু করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে! এই জায়গাটাকে আমরা কতই না ভালোবাসি।
হাজার কষ্টের মধ্যেও লড়াই করে যাই শুধুমাত্র এই জায়গাটাতে টিকে থাকার জন্য, একটু সুখে থাকার জন্য। একটা মানুষের বুক কতটা ভেঙে গেলে এই ধরনের, এই সাধের জীবন, পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে! তার বুক ভাঙা কষ্টের কি কোনো দাম নেই। পৃথিবীর যেখানে আমরা এক টুকরো সুখের জন্য কত কিছুই না করি, এত কষ্ট পাওয়ার পরও। ঈশ্বর কী এতোটাই পাষাণ! কি দোষ করেছিলাম আমি। জীবনের কথা না হয় বাদই দিলাম।
আমি এমনকি খারাপ কাজ করেছিলাম যে, কোনো কিছুই সত্যি হতে দেখলাম না। মাঝখান দিয়ে জীবনে আরো যে যুদ্ধ করে যাব সেই উপায়টাও শেষ হয়ে গেল। ঈশ্বর বুঝি আসলেই পাষাণ।
লেখার মতো আরো অনেক কিছুই আছে। কিন্তু আর কিছুই লিখতে পারছি না। জ্বরের জন্য হাত কাঁপছে। শরীর জ্বলন্ত আগুনের মতো গরম। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে। এখন যে কেউ একজন গায়ে হাত রাখবে এমন কেউ নাই। থেকেও যেন নাই। এই কথাটা সত্যি- মানুষ পৃথিবীতে আসে একা, চলেও যায় একা। হায়রে পৃথিবী! কত ভালোবাসার, কত সাধের! আমি ভাববো এক সময় পৃথিবী নামে আমার পরিচিত একটা ছেলে ছিলো!
ইতি
ঐশী/ডালিয়া
এর আগে খুনের বিবরণ যেভাবে দিয়েছিলেন ঐশী: ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরদিন ঐশী গৃহকর্মী সুমিকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন। সে সময় গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ঐশী জানিয়েছিলেন, এক বন্ধু উচ্চমাত্রার ঘুমের ট্যাবলেট এনে দেয় ঐশীকে। ঐশী ট্যাবলেটগুলো কফির সঙ্গে মিশিয়ে তাঁর বাবা-মাকে পান করান। বাবা-মা দুজনই কফিপানে অচেতন হয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। তারপর ঐশী হত্যা করেন তাঁর বাবা-মাকে। মা-বাবাকে হত্যার পর ঐশী গোসলও করেন।
আরেক জিজ্ঞাসাবাদে ঐশী বলেন, প্রথমে তিনি মাকে হত্যা করেন। হত্যার পর তাঁর লাশ লুকিয়ে রাখেন। মাকে হত্যার সময়ে বাবা বাইরে ছিলেন। বাবা ঘরে আসার পর তাঁকেও চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে হত্যা করেন তিনি। টুকরো করার জন্য বাসায় ধারালো অস্ত্র না পাওয়ায় লাশ টুকরো করতে পারেননি। ঐশী মেঝের রক্ত মুছে গোসলও করেন।
২০১৩ সালের ২৫ আগস্ট আদালতে ঐশী বলেন, ‘২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট আমি ছয় পাতা ঘুমের বড়ি কিনেছিলাম। রাত ১১টার পর তিন পাতা বাবার কফিতে মিশিয়ে পান করাই। আর মায়ের কফিতে তিন পাতা মেশাই। কফি পান করার পর তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েন। পরে আমি চাকু দিয়ে বাবাকে স্ট্যাব করি। এরপর বাবা মারা যান। বাবাকে হত্যার পর আমি হুইস্কি পান করি। বাবাকে হত্যার পর একইভাবে মাকে চাকু দিয়ে স্ট্যাব করতে থাকি।
একপর্যায়ে মা গোঙাতে থাকেন। এরপর মা আমার কাছে পানি চান। আমি তাঁকে পানি খাওয়াই। এরপরও মা যখন মারা যাচ্ছিলেন না, তখন মায়ের গলায় চাকু দিয়ে স্ট্যাব করতে থাকি। পরে মা মারা যান। বাবা-মাকে হত্যার পর কাজের মেয়ে সুমিকে ডাকি। দুজনে লাশ টেনে বাথরুমে রাখি। পরে কৌশলে ছোট ভাইকে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যাই।’
কাকে আগে খুন করা হয়েছিল বা খুন নিয়ে আদালতে তাঁর জবানবন্দিতে একেক সময় একেক কথা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আসে।
আদালতে ঐশী আরো জানান, মা স্বপ্না রহমানকে হত্যার পর বঁটি দিয়ে চাবির গোছা কেটে চাবি নেন তিনি। এরপর লকারের তালা খুলে নগদ প্রায় লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে সকালে কাজের মেয়ে সুমি, ছোট ভাই ঐহীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। হত্যার পর দেশের বাইরে চলে যাওয়ারও পরিকল্পনা করেন ঐশী।
যেসব কারণে বাবা-মাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ঐশী : মামলার অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ঐশী রহমান সব ধরনের মাদকেই আসক্ত ছিলেন। হেরোইন, পেথিডিন, ইয়াবা, অ্যালকোহল এমনকি গাঁজা সেবনেও অভ্যস্ততা ছিল তাঁর। এসব কারণেই প্রতি মাসে নতুন নতুন কৌশলে বাবা-মাকে বলে হাত খরচ হিসেবে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন ঐশী। তবে বিভিন্ন সময় আদালতে মা-বাবাকে খুনের কথা অস্বীকার করেন ঐশী।
এ বছরের অক্টোবরে ট্রাইব্যুনালে লিখিত বক্তব্যে ঐশী জানান, ঘটনার সময় তিনি অন্য স্থানে ছিলেন। সেখানে তিনি মদ পান করছিলেন। ঘটনা জানার পর তিনি পুলিশের কাছে যান।
ঐশী আদালতকে আরো বলেন, তাঁকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বড় বড় লাঠি দিয়ে তাঁকে বেদম মারধর করে। মা-বাবাকে হত্যার কথা স্বীকার করতে বলে। স্বীকার না করলে তাঁকে আবারও রিমান্ডে নেওয়ার ভয় দেখায় পুলিশ। পরে বাধ্য হয়ে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সাময়িক বরখাস্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঊর্মির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেবিস্তারিত পড়ুন
কমলা হ্যারিসের ভোটের প্রচারণায় বাজবে এ আর রহমানের গান
আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন উপলক্ষে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসেরবিস্তারিত পড়ুন
উপদেষ্টা আদিলুর: পূজায় বিশৃঙ্খলাকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না
দুর্গাপূজায় বিশৃঙ্খলাকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে সতর্ক করেবিস্তারিত পড়ুন