ও আমাকে দিয়ে জোর করে খারাপ কাজ করাত…
আমার চারপাশটা অন্ধকার হতে লাগল। বুঝতে পারলাম ইনজেকশনের ঘোর লেগেছে। আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ হয়ে এল আমার। ক্রমশই তলিয়ে যেতে লাগলাম এক অন্ধকারে। সামনে একটা হালকা আলো। কানের মধ্যে এক মহিলা কন্ঠ ভেসে এল। বুঝলাম মা-এর গলা। কিছুক্ষণ পর আরও একটা গলা পেলাম। মনে হল বউদি চিৎকার করছে। দূর থেকে ‘বুনু’ বলে ভেসে আসা দাদার আওয়াজটাও পেলাম, অন্ধকারে আলোর রেখা ধরে মানুষগুলোকে দেখার চেষ্টা করতে থাকলাম। কিন্তু, দেখতে পেলাম কই? শুধুই একাধিক আওয়াজ। আমি হারিয়ে যেতে থাকলাম। বুঝলাম আর দেখা হল না বাড়ির লোকের সঙ্গে।
হালকা করে মাথার কাছে এক নরম হাতের স্পর্শ পেলাম। চারিদিকে ঘন কুয়াশার মতো আস্তরণ। ঠিক করে কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। আমার শরীরে আগের থেকে যন্ত্রণা অনেক কম। তবে হাত-পা কেমন অবশ। বুঝলাম ঘুমের ওষুধ দিয়ে রাখা হয়েছে আমাকে।
মহিলার হাতটা আমার মাথার ওপর সমানে চলাফেরা করছে। আস্তে আস্তে একটা মুখ কিছুটা হলেও স্পষ্ট হল। দেখলাম হলুদ সালোয়ার কামিজ পরা এক অল্পবয়সী মহিলার মুখ। পাশ দিয়ে আর একজন মহিলা ভাঙা বাংলায় বলে উঠল ‘বেটি! তোমার সঙ্গে কে দেখা করতে এসেছে জান? দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়াল।’
আমি বুঝলাম দিল্লি মহিলা কমিশন কি? শুধু বুঝতে পারলাম স্বাতী মালিওয়াল বলে কেউ একজন এসেছেন। এবার পাশ থেকে আরও এক পুরুষের গলা পেলাম। পরিচিত। কুয়াশা ঘন দৃষ্টিশক্তির মধ্যেই ঠাহর করতে পারলাম এ গলা সেই লোকের যে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালের বেডে নিয়ে এসেছে। যার জন্য, আমার চিকিৎসা শুরু হয়েছে। সেই লোকটা বলল, ‘তুমি সবকথা খুলে বল। তোমার উপরে যা অত্যাচার হয়েছে উনি তার বিচার করবেন। তোমার ভালোর জন্য উনি এসেছেন।’
স্বাতী মালিওয়াল নামে ওই মহিলা আমার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলল, ‘কি খাবে’। আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল ‘পায়েস’। পায়েস আমার খুবই পছন্দের। কতদিন যে খাইনি। স্বাতী মালিওয়াল বলল, ‘তোমার এই হাল করল কে’। আমি কোনওমতে বললাম, ‘আসলাম’। ফের ছুটে এল প্রশ্ন, ‘আসলাম কে?’ আমি বললাম, ‘আসলামের কাছে আমি থাকতাম। ও আমাকে দিয়ে খারাপ কাজ করাত’। ফের প্রশ্ন ‘আসলাম কোথায়’। বললাম, ‘জানি না’। এবার সেই দেবদূতওয়ালা লোকটার গলা শউনতে পেলাম। সে বলল, ম্যাডাম মেয়েটার অবস্থা খুবই খারাপ। আমরা সব ডিটেল পেয়েছি। আপনি হস্তক্ষেপ করলে পুলিশ তবেই কেসটা নেবে। নচেৎ দেরি করবে। ওর বাড়িতে খবর পাঠানো খুবই দরকার।’ স্বাতী মালিওয়াল বলল, ‘আমি দেখছি’। স্বাতী মালিওয়াল ফের আমার মাথায় হাত দিয়ে বলল, ‘ঘাবড়াবে না। আমরা তোমার বাড়িতে খবর পাঠাচ্ছি।’ স্বাতীরা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
বাড়ির কথা শুনে মনটা ভরে গেল। যাক মা, দাদা, বউদিকে দেখতে পাব। আমার মধ্যে বাঁচার আশাটা ফের যেন জেগে উঠল। মনে হল আমি অনেকটাই ভাল হয়ে গিয়েছি। আমার শরীরে ব্যাথাগুলো অনেক কমে গিয়েছে। জ্বালা করছে না। আমি ভাল হব। আমাকে ভাল হতেই হবে। চোখের কোণ দিয়ে টপটপ করে পরা জল আমার মাথার বালিশটাকে কখন যে ভিজিয়ে দিয়েছে খেয়াল করিনি। খেয়াল পড়ল যখন নার্স এসে বলল আরে ‘আর কত কাঁদবি?’
পরের দিন সেই সুন্দর মতো মহিলা ডাক্তার আমাদেক দেখতে এলেন। ওনারই সুপারিশে আমাকে আইসিইউ-তে সরানো হয়েছিল। আমার মাথায় হাত দিয়ে বলল, ‘ক্যায়সি হো?’। এই হিন্দি কথাটার মানে এই ক’মাস দিল্লিতে থেকে বুঝে গিয়েছি। বললাম ‘আচ্ছা’। মহিলা ডাক্তার এবার ভাঙা বাংলায় বলল, ‘বুখার আসছিলো?’ আমি মাথা নাড়ালাম। এরপর আমার শরীরের ঘা-গুলি উনি দেখলেন। পায়ে-হাঁটুতে টিপে টিপে কী সব পরীক্ষা করলেন। আমি কিছুই টের পেলাম না। আমার কোমরের কাছটাতে টিপতেই যন্ত্রণায় কাঁকিয়ে উঠলাম।
নার্সকে মহিলা চিকিৎসক কিছু নির্দেশ দিলেন। এরপর আমার কাছে এসে বললেন, ‘তোমাকে যে এখানে রেখে গিয়েছে সে কি আসবে?’ আমি মাথা নেড়ে বললাম ‘না’। মহিলা চিকিৎসক বললেন, ‘পরশু আমি তোমার দু’পায়ে অপারেশন করব। কিন্তু, তোমার আত্মীয়দের সই ছাড়া হবে না’। আমি কিছুই বুঝলাম না কথার। কারণ, আমার অসুখ করলে তো ডাক্তারই সারাবে। আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।
বুঝতে পারলাম না কি বলতে হবে। মহিলা চিকিৎসক আমার পাশে বসে ফের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলল, ‘তোমার বাড়িল লোক কবে আসবে?’এবার আমি কোনও উত্তরই দিতে পারলাম না। মহিলা চিকিৎসক আমাকে বলল, ‘কাল তোমার অনেক গুলো রক্ত পরীক্ষা হবে। অনকটা রক্ত লাগবে। ঘাবড়ে যাবে না।’এই বলে মহিলা চিকিৎসক উঠে পড়লেন। আমি চার দিকে চেয়ে থাকলাম। কি মনে হল উনি দু’পা এগিয়েও ফের ফিরে এলেন। বললেন, ‘ভয় পেও না, প্রয়োজনে আমি সই করে তোমার অস্ত্রোপচার করব’— এই বলে মুচকি হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি তার প্রস্থানের দিকেই শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। (চলবে)…
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
চা কন্যা খায়রুন ইতিহাস গড়লেন
চা শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সব মহলেই পরিচিত হবিগঞ্জেরবিস্তারিত পড়ুন
চার্জ গঠন বাতিল চেয়ে রিট করবেন ড. ইউনূস
শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.বিস্তারিত পড়ুন
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন