রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

পাঠকের প্রশ্ন : ও ইয়াবা সেবন করে, অনেক মেয়ের সাথেই সম্পর্ক ছিল

[প্রতিকি ছবি] আসসালামুআলাইকুম, আমি ১৯ বছরের একজন তরুনী। আমি আমার পরিবারের অমতে একজনকে বিয়ে করি। সে কিছুটা বখে যাওয়া ছেলে ছিল। আমার আগেও তার ২-৩ টা প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তবুও তাকে আমি ভালবেসে বিয়ে করি। উল্লেখ্য যে, ও ইয়াবা সেবন করে, তাছাড়া তার আশেপাশে সব খারাপ সঙ্গ। আর আমাকে সে প্রচন্ড অবহেলাও করত। মুখে বলত ভালবাসি, কিন্তু তার আচরণে সব সময় আমি অবহেলাই দেখতাম। আমি এগুলো মেনে নিতে পারতাম না, খুব কষ্ট পেতাম, কান্নাকাটি করতাম। তার সাথে এগুলো নিয়ে প্রচন্ড ঝগড়াঝাটি, মারামারি হত। মানসিকভাবে তখন প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম, পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছিলাম।

তখন আমি ২০১৬ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষার্থী ছিলাম, কিন্তু এসব কারণে আমি আমার পরীক্ষাটা দিতে পারিনি । আমি psc ,jsc ও ssc তে Golden 5 পেয়েছিলাম। কাজের সুবাদে তার সাথে এমন কিছু লোকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে যারা ভালো নয়, খারাপ কাজের সাথে জড়িত। এসব কারণে আমার সন্দেহ হয়, সে আমার আগে অন্য কোনো মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছে। আর এই বিষয়টা প্রতি মূহুর্তে আমাকে পোড়ায়। শুধু মনে হয় যদি সত্যিই এমন কোন সত্য আমি জানতে পারি, তাহলে আমার এ জীবনের মূল্য কই!

এখন ১ বছর হয়েছে আমি তার সাথে আছি। অনেক ঝগড়াঝাটি, মারামারির পর সে এখন কিছুটা চেন্জ হয়েছে বলে আমার মনে হয়। আবার সে প্রথম থেকেই নিজে না খেয়ে আমাকে খাওয়াত, আমি যা চাইতাম আমাকে তাই দিত, কান্না করলে কোলে নিয়ে হাঁটত, নিজ হাতে খাইয়ে দিত, ঘুরতে নিয়ে যেত। মোটকথা সে নিজের জন্যও এত কিছু করেনা যা আমার জন্য করে। অপরদিকে আমার পরিবারের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই, বলতে গেলে ত্যাজ্য আমি। আমার বাবা নেই,মা আছে।

আমি চলে আসার পর আমার মা খুবই ভেঙ্গে পড়েছিলেন, রাতদিন প্রচন্ড কান্নাকাটি করেন। শারিরীকভাবেও প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমার মা আমার পা ধরে কান্নাকাটি করেছিল, আমি যাতে আমার স্বামীকে ছেড়ে তাঁর কাছে চলে আসি, এত অল্প বয়সে আমি যেন আমার জীবনটা শেষ করে না দিই। আমার পরিবার থেকে আমাকে বলা হয়, আমি যদি তাকে ছেড়ে চলে আসতে পারি, তাহলে তারা আমাকে আবার গ্রহন করবে। এখনও সময় আছে, তারা আমার জীবনকে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে দিবে। শুধু আমার পরিবার না, আমার স্কুল,কলেজের শিক্ষকরা, আমাদের এলাকার চেয়ারম্যান, অন্যান্য গন্যমান্য ব্যক্তিরাও বলে আমি ভুল করেছি এবং আমি যেন আমার পরিবারের কাছে ফিরে যাই। তারা বলে শুধু আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে যাই,তারপর আইনি ভাবে যা করার তারা করবে। আমার পরিবার,কখনই তাকে মেনে নেবেনা, কারণ আমার স্বামীর পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের অনেক ব্যবধান, সে আমার যোগ্য না।

এখন আমি কী করব? আমি কি তাকে ছেড়ে চলে যাব? নাকি তার সাথেই থাকব। তাকে ছেড়ে যাবার কথা বললে আমার খুব কান্না পায়। তাকে ছাড়া এ জীবন ভাবতেই পারিনা। আবার পরক্ষনেই মনে হয়, পরিবারের কথা না শুনে আবার কোন ভুল করি। দয়া করে আপু, এ বিষয়ে আমাকে একটি সুন্দর সমাধান দিন। আমি কি করতে পারি, আমি মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত।

প্রশ্নটি আমাদের ফেসবুক পেজে করেছেন : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন।

পরামর্শ:
আমি যদি সত্য মতামত বলি, আমার ওপরে আপনার প্রচণ্ড ক্ষোভ হবে। তারপরও বলবো… এই অল্প বয়সে যে মিথ্যা স্বপ্নের দুনিয়ায় আপনি বাস করছেন, আর নিজের কাজের দোষ আরেক মানুষের ওপরে চাপিয়ে দিয়ে স্বস্তি পেতে চাইছেন, সেটা বন্ধ হওয়া দরকার। আপনার চিঠি পড়ে আমি যেটুকু বুঝতে পারছি, জীবন সম্পর্কে আপনার বেশীরভাগ ধারণাই ভুল। নেহাত আবেগের বশে এত স্বার্থপর আপনি হয়ে পড়েছেন যে প্রতিটি সিদ্ধান্তই ভুল নিচ্ছেন। যেহেতু আপু বলে ডেকেছেন, আমার কাজ আপনাকে কর্কশ সত্যগুলোই বলার চেষ্টা করা।

এই যে নিজের বরের ব্যাপারে এত কমপ্লেইন করলেন, আপনি কি তাঁকে না দেখে বিয়ে করেছিলেন? তিনি কী পেশায় জড়িত এসব না দেখেই বিয়ে করেছেন? না। আপনি তো জেনে শুনে প্রেম করেই বিয়ে করেছেন। তাহলে এখন কেন এত অভিযোগ? তখন কেন মনে হয়নি যে তাঁর অন্য সম্পর্ক থাকতে পারে? আর অন্য সম্পর্ক থাকলেই বা কি। যা অতীত, সেটা অতীত। স্বামীর অতীতে অন্য কারো সাথে সম্পর্ক থাকলে আপনার জীবন ব্যর্থ হয়ে যাবে, এসব ফালতু সিনেম্যাটিক ধারণা কোথায় পেয়েছেন আপনি! দেখুন, জীবন সিনেমা না। এই বাস্তবতার জীবনে স্বপ্নের দুনিয়ার আবেগ দিয়ে এক পাও চলা যায় না। নিজের বিধবা মায়ের মনে যে কষ্টটা আপনি দিয়েছেন, আবেগের বশে যে স্বার্থপরের মতন যে কাজ আপনি করে ফেলেছেন, সেটার মাসুল আসলে আপনাকে আজীবন দিতে হবে। আমি যদি বলি যে সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে, সেটা মিথ্যা বলা হবে। আমাদের কিছু কিছু ভুলের মাসুল আজীবন দিয়ে যেতে হয়। বিয়ে কোন ছেলেখেলা না যে ইচ্ছা হলেই করে ফেললাম। আপনি যদি নিজেকে পরিবর্তিত করতে না পারেন, কোনদিনই জীবন ঠিক হবে না। কারণ সমস্যা বেশীরভাগ আপনার মাঝেই! আর যদি মনে করেন সব ঠিক করতে চান, তবে সেই রাস্তাতা অনেক কঠিন। ধৈর্য ও বুদ্ধি নিয়ে সেটা পার করতে না পারলে জীবনটা একসময়ে অন্ধকারে ডুবে যাবে।

কী রকম? বলছি শুনুন-

চিঠির শুরুতেই আপনি লিখেছেন যে স্বামী আপনার কেয়ার করে না, আপনাকে অবহেলা করে না ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার একটু পরে গিয়েই লিখেছেন যে প্রথম থেকেই স্বামী আপনার জন্য যা করে, সেটা নিজের জন্যও করে না! এক মুখে দুই রকমের কথা আপনার নিজেরই, বুঝতে পারছেন সেটা? স্বামীর কেয়ার করা মানে কী আপু? সারাক্ষণ আপনার সাথে বসে থাকবে, রোমান্টিক গান গাইবে, আপনি কত সুন্দর সেটা বলবে? জি না, দাম্পত্য মানে সেটা না। দাম্পত্য বড় কঠিন একটা জিনিস। একটা সুন্দর সংসার গড়তে চাইলে এইসব সিনেম্যাটিক ভাবনা বাদ দিয়ে বাস্তববাদী হতে হবে। আপনি সিনেমার মত জীবনের স্বপ্ন দেখে বিয়ে করেছেন, এখন যখন সেই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না আপনি একটুতেই হতাশ! মানুষটাকে তো আপনি না দেখে বিয়ে করেন নি এবং এখনও বলছেন যে তাঁকে ছাড়া থাকতে পারবেন না, আবার এটাও বলছেন যে সে আপনার জন্য অনেক করে। তাহলে সবকিছু ঝেড়ে ফেলে সুস্থভাবে বাঁচার চেষ্টা করছেন না কেন?

আমার স্বাভাবিক বুদ্ধিতে যেটুকু কুলায়, আমি সেটাই পরামর্শ দিচ্ছি আপনাকে। আপনি কী করবেন আর কী করবেন না, সেটা আপনার ইচ্ছা। আমি মনে করি আপনার প্রথম কাজ লেখাপড়া শুরু করা। এবং এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হওয়া। এবং স্বামীকে নেশা ছাড়ার জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসা নিতে রাজি করানো। স্বামী যদি এই দুই কাজে রাজি না হয়, তাহলে স্বামীর সাথে বসবাসের মানে দেখি না। কারণ অশিক্ষিত একটা মানুষ হওয়া আর পঙ্গু হওয়া একই ব্যাপার। এবং নেশাখোর স্বামীর সাথে বাকি জীবন কেবল অশান্তিরই অন্য নাম হবে। আপনার মূল চিন্তা স্বামীর আগে কার সাথে শারীরিক সম্পর্ক ছিল, সেটা নয়। বরং স্বামী নেশা ছাড়তে আগ্রহী কিনা ও আপনার উচ্চ শিক্ষাকে সমর্থন করে কিনা। এই দুটি জিনিস করতে না পারলে বরং আপনার জীবনের মূল্য থাকবে না।

স্বামী যদি আপনার লেখাপড়ায় সহায়তা করেন ও নেশা ছাড়ার জন্য চিকিৎসা গ্রহণ শুরু করেন, তাহলে স্বামীর সাথে থাকুন এবং সংসার সুন্দর করে গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা করুন। কারণ আপনি তাঁকে ছাড়া থাকতে পারবেন না, তাঁর থেকে আলাদা হলেও আপনি কিছুদিন পর আবারও নিজের পায়ে কুড়াল মারবেন। আবারও তাঁর কাছেই ফিরে যাবেন। আর মনে হয় স্বামী লোকটাও আপনাকে ভালোবাসেন, কারণ সে নিজেকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছেন, আপনি নিজেই লিখেছেন যে তাঁর অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তাই চেষ্টা করে দেখুন যে সিনেমার কাহিনীর মত জীবন না চেয়ে সুস্থ ও সুন্দর একটা সংসার গড়া যায় কিনা। অতীতে কী হয়েছে ভাববেন না, ভবিষ্যতে কী হবে সেটা নিয়ে ভাবুন। সংসার মানে ঝগড়াঝাঁটি, মারামারি না। এখন এসব করতে থাকলে ভবিষ্যতে না সংসার থাকবে না ভালোবাসা।

বরং চেষ্টা করুন স্বামীকে বুঝিয়ে নেশার পথ থেকে ফিরিয়ে এনে দুজনে মিলে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে ও স্বামী খারাপ সঙ্গে পড়ে থাকলে সেখান থেকে তাঁকে সরিয়ে নিতে। সময়ের সাথে সাথে মায়ের অভিমান কমবে, তিনি আপনার অন্যায় আচরণ ক্ষমা করতে পারবেন। মা যদি দেখেন যে আপনি ভালো আছেন ও আবার লেখাপড়া শুরু করেছেন, স্বামীকে নিয়ে সুখের সংসার, আস্তে আস্তে মাও আপনাদেরকে মেনে নেবেন। সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনি আবেগের দুনিয়া থেকে বের হয়ে এসে কাজে নামলে এই সবই সম্ভব হবে।

কিছুদিন চেষ্টা করে দেখুন নিজেকে পরিবর্তন করার, চেষ্টা করুন স্বামীকে সুপথে আনার। যদি সেটায় সফল না হতে পারেন, তখন মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার রাস্তা তো খোলাই থাকলো। কিন্তু তখন গেলে আপনার মণ মানবে যে আপনি অনেক চেষ্টা করে তবেই এসেছেন। তবে একটা জিনিস জানবেন, আপনি স্বপ্নের দুনিয়া থেকে বের হবার চেষ্টা না করলে মায়ের কাছে গিয়েও সুখী হতে পারবেন না। বরং যাবার পর আবারও নতুন কল্পনায় গা ভাসাবেন। নিজের জীবনের সব অশান্তির জন্য আপনার ভুল সিদ্ধান্তগুলো দায়ী আর এটা এখনই শুধরে না নিলে আপনার জীবনটা আরও এলোমেলো হয়ে যাবে।

পরামর্শ দিয়েছেন-

রুমানা বৈশাখী

কথাসাহিত্যিক

বিভাগীয় প্রধান,

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

চা কন্যা খায়রুন ইতিহাস গড়লেন  

চা শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সব মহলেই পরিচিত হবিগঞ্জেরবিস্তারিত পড়ুন

চার্জ গঠন বাতিল চেয়ে রিট করবেন ড. ইউনূস

 শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.বিস্তারিত পড়ুন

ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন

  • স্বাধীনতার জন্য সিরাজুল আলম খান জীবন যৌবন উৎসর্গ করেছিল
  • ৫৩ বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ ১০৬ জনকে সম্মাননা দিল ‘আমরা একাত্তর’
  • হাতিয়ায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি
  • ৫৭ বছর বয়সে এসএসসি পাস করলেন পুলিশ সদস্য
  • শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ
  • চলে গেলেন হায়দার আকবর খান রনো
  • গফরগাঁওয়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক শামছুন নাহার
  • ‘ও আল্লাহ আমার ইকবালরে কই নিয়ে গেলা’
  • ভিক্ষুকে সয়লাভ নোয়াখালীর শহর
  • কঠিন রোগে ভুগছেন হিনা খান, চাইলেন ভক্তদের সাহায্য
  • কান্না জড়িত কন্ঠে কুড়িগ্রামে পুলিশের ট্রেইনি কনস্টেবল
  • অজানা গল্পঃ গহীন অরণ্যে এক সংগ্রামী নারী