কক্সবাজারে ভ্রাম্যমাণ গ্যাসের দোকানের ছড়াছড়ি, দুর্ঘটনার ঝুঁকি
কক্সবাজারের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যত্রতত্র গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ভ্রাম্যমাণ গ্যাসের দোকান। সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমতিপত্র ছাড়াই নামেমাত্র ট্রেড লাইন্সেস নিয়ে দেদারসে গ্যাসের অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। গ্যাস বিক্রেতারা নিজেদের ইচ্ছেমত সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে একের রকম দামে গ্যাস বিক্রি করে যাচ্ছে। অথচ এগুলো দেখভালের জন্য রয়েছে কক্সবাজার এলপি গ্যাস পরিবেশক সমিতি নামের সাইনবোর্ড সবর্স্ব একটি সংগঠন।
এদিকে সারাদেশের মতো কক্সবাজারে প্রাকৃতিক গ্যাসের নতুন সংযোগ প্রদানের কাজ ধীরগতিতে চলার কারণে গ্রাহকেরা বিপাকে পড়েছেন। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে জ্বালানি সংকটের কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের চাহিদা।
অবৈধ ভ্রাম্যমান গ্যাসের দোকানগুলোতে নিয়োজিত কর্মচারীদের গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার সর্ম্পকে সঠিক ধারণা না থাকায় দুর্ঘটনার মাত্রাও দিন দিন বেড়ে চলছে। ১৪ জুলাই দুপুরে শহরের গাড়ির মাঠ এলাকার জনৈক বাপ্পির ভাড়া বাসায় গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরে দ্রুত ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। যার কারণে বড় ধরনের দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে ওই বিল্ডিংয়ে বসবাসরত লোকজন। ওই গ্যাস সিলিন্ডারটি সরবরাহ করে গাড়ির মাঠের মোহনা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি গ্যাসের দোকান।
জানা গেছে, শহরের সিনেমা রোড, এন্ডারসন রোড, বাজারঘাটা, কালুর দোকান কাচা বাজার, গাড়ীর মাঠ, বাহারছড়া বাজার, সমিতি পাড়া, টেকপাড়া, মাঝির ঘাট, ৬ নম্বর ঘাট, বিমান বন্দর এরিয়া, নুনিয়ারছড়া, পাহাড়তলী, নতুন বাজার, খুরুশকুল রাস্তার মাথা, তারাবনিয়ারছড়া, রুমালিয়ার ছড়া, হাশেমিয়া মাদ্রাসা, আলির জাহাল, বাসর্টামিনাল, লিংকরোডসহ বিভিন্ন স্থানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনো কাগজপত্র ছাড়াই নানা ঝুঁকি নিয়ে গ্যাসের দোকানগুলো চালিয়ে আসছে কিছু অসাধু। এই অসাধুদের নানা আশ্রয় ও সহযোগিতা দিয়ে আসছে একটি চিহ্নিত গ্যাস পরিবেশক চক্র। তাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ। এনিয়ে গত ১৬ জুলাই দৈনিক ইনানীতে একটি বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রকাশিত হলে টনক নড়ে সংশ্লিষ্টদের।
একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, দীর্ঘ বছর ধরে কক্সবাজার এলপি গ্যাস পরিবেশক সমিতি গঠন করার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো মিটিং, সভা ও সমাবেশ কিংবা সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়নি। চিহ্নিত কয়েকজন গ্যাস ব্যবসায়ী মিলে শুধু পদবি ভাগ করে যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছেন। গঠিত ওই সমিতির নেতাদের কাছে নেই কোনো গ্যাস দোকানের তথ্য। আছে শুধু নামে সভাপতি যার কোনো নেই কাজে গতি!
তাদের কর্মকাণ্ড দেখে দিন দিন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে কিছু তরুণ গ্যাস ব্যবসায়ী। তাদের অভিযোগ মাঠ পর্যায়ে যারা বৈধ পথে গ্যাস ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে তাদেরকে সাথে নিয়ে দ্রুত একটি সংগঠন গঠন হতে পারে। এই লক্ষ্য নিয়ে তারা ইতোমধ্যে মাঠে ময়দানে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। তারা জানিয়েছেন, দ্রুত সময়ে কক্সবাজার শহর ও শহরতলীতে গড়ে উঠা অবৈধ ভ্রাম্যমাণ গ্যাসের দোকানগুলো প্রশাসনের সহযোগিতায় গ্যাস ডিলারদের সমন্বয়ে বন্ধসহ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার ব্যবস্থা নেবেন।
অভিযোগ উঠেছে, গ্যাস সিলিন্ডারে ঠিক কতটুকু গ্যাস আছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডারগুলো নির্ণয় করার জন্য বিএসটিআইয়ের পক্ষ থেকে নেই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। অপরদিকে পরিবেশকরা আইন বা বিধি সম্মত গ্যাস সরবরাহ করছে কি না তা খতিয়ে দেখছে না সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এতে করে প্রতিযোগিতা হারে বেড়ে যাচ্ছে ভ্রাম্যামাণ গ্যাসের দোকান। আর এ কারণে বাসা বাড়িতে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। বিপিসির কয়েক যুগের পুরনো সিলিন্ডারগুলো ব্যবহারের কারণেও দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে বলে তৃণমূল পর্যায় থেকে অভিযোগ উঠেছে। ওই সমিতির কাযক্রম না থাকায় যেমন ইচ্ছা তেমন ব্যবসা চালিয়ে আসছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।
জানা গেছে, সরকারিভাবে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তেল কোম্পানি ছাড়াও বেসরকারি পর্যায়ে ১৮/২০টি কোম্পানির এলপি গ্যাস বাজারজাত হচ্ছে। গ্যাস বাজারজাতকরণের জন্য এসব কোম্পানির প্রায় পাঁচ হাজার ডিলার রয়েছে। তাদের কাছ থেকে খুচরা বিক্রেতারা নিয়ে থাকেন। খুচরা বিক্রেতারা অভিযোগ করেন, পাইকারি বিক্রেতা ডিলাররা অতি মুনাফার জন্য নানা অনিয়ম করে চলছে। কোম্পানি থেকে নির্ধারিত ওজনে গ্যাস কিনলেও তারা বোতল থেকে গ্যাস নিয়ে নিচ্ছে। গ্রাহকরা বোতলে গ্যাস কম পাওয়ার অভিযোগ করছেন। বিশেষ করে সরকারি প্রতিষ্ঠানের এলপি গ্যাস সিলিন্ডারগুলোতে গ্যাস কম থাকার অভিযোগ পাচ্ছে খুচরা বিক্রেতারা।
২০ জুলাই সকালে কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা গ্যাসের দোকানে ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডার বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। সিলিন্ডারের মূল্যসহ প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর এলপি গ্যাস ৯০০ টাকা থেকে ৯৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। আর টোটাল গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে প্রতি বোতল এক হাজার টাকা করে। এ সময় শহরের বাহারছড়া বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, এখন তো সেলুনের দোকান, পানের দোকানেও গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলে তারা দোকান বন্ধ করে দেয়।
এ বিষয়ে মাম্মি এন্টাপ্রাইজ এর মালিক মিয়া নুর মোহাম্মদ আলী চৌধুরী বলেন, ভ্রাম্যমাণ গ্যাসের দোকানগুলো উচ্ছেদ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি দাবি জানাচ্ছি। আর গ্যাসের মূল্য অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। বিপিসি সিলিন্ডারগুলো পরিবর্তন করা খুবই জরুরি। না দুর্ঘটনার আশংকা থেকেই যায়।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার গ্যাস পরিবেশক সমিতির সভাপতি সিরাজুল হকের বক্তব্য নেয়ার জন্য তার প্রতিষ্ঠান মের্সাস চাম্পা এন্টারপ্রাইজে গেলে তিনি আজ-কাল বলে সময় পার করেন। শেষ পর্যন্ত তার বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয়নি।
তবে ওই সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মের্সাস চিশতি এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ শাহেদ আলী মোবাইলফোনে জানিয়েছেন তারা দ্রুত সমিতির বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন