কারো কাছে মাথানত না করা জীবন
এক হাত দিয়ে রিকশা চালান তিনি। পুরাটা পথ এই এক হাত দিয়েই শক্ত করে হ্যান্ডেল ধরে থাকেন। নিয়ন্ত্রণ করেন রিকশার দিক-গতিপথ। এভাবেই তাঁকে রিকশা চালাতে হয় এই ব্যস্ত শহরের ঘিঞ্জি অলিগলি ধরে। কারণ, তাঁর আরেকটি হাত নেই। এই এক হাতেই জীবন-সংগ্রামের হাল ধরেছেন তিনি।
জীবনের কাছে মাথানত না করা এই সংগ্রামী মানুষটির নাম মোহাম্মদ সাজু। রাজধানীর পান্থপথে হঠাৎই দেখা হয়ে যায় তাঁর সঙ্গে। কথায় কথায় জানা যায় তাঁর হার না মানা জীবন-সংগ্রামের কথা।
রিকশাচালক সাজুর বাড়ি জামালপুরে। আগে সেখানেই কৃষিকাজ করতেন তিনি। কৃষিকাজ করেই চালাতেন সংসার। একদিন নারকেলগাছ থেকে পড়ে গেলে হাত ভেঙে যায় তাঁর। উন্নত চিকিৎসার অভাবে একপর্যায়ে ইনফেকশন হয়ে যায় হাতে। একসময় হাত কেটে ফেলতে হয়।
এরপর সাজু নিজেই বলেন, হাত কাটা যাওয়ার পর ঢাকায় চলে আসেন তিনি। পাঁচ বছর হলো ঢাকায় এসেছেন। বললেন, ‘বুঝছেন মামা, এখন রিকশা চালাইয়া খাই। আল্লাহ ভালোই রাখছে।’
এমন ব্যস্ত সড়কে এক হাত দিয়ে ঠিকমতো রিকশা চালাতে পারবেন কি না জানতে চাইলে হাসি দিয়ে সাজু বললেন, ‘উইঠা দেখেন। কোনো সমস্যা নাই। আমি ভালোমতোই চালাইতে পারি।’
সাজুর রিকশায় করেই গন্তব্যে যেতে যেতে কথা হয় পরিবার-পরিজন নিয়ে। সাজু জানান, পরিবারের সবাই গ্রামে থাকে। সেখানে আছেন তাঁর মা ও স্ত্রী। রিকশা চালিয়ে যা আয় হয়, তাতেই চলে পুরো পরিবারের দিন। মানুষের কাছে হাত পাততে বা ভিক্ষা চাইতে সাজুর ভালো লাগে না। তাই কষ্ট হলেও রিকশা চালানোকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন বলে জানালেন এই অদম্য পরিশ্রমী মানুষ।
কৃষিজমি ফসলের মাঠ ছেড়ে জীবনের ঘূর্ণিপাকে মোহম্মদ সাজু এখন এই কংক্রিটের শহরে রিকশাচালক। কিছুতেই দমে যাওয়ার পাত্র নন তিনি। তা তাঁর কথা এবং কাজের ভঙ্গিতেই স্পষ্ট হয়ে উঠছিল বারবার। রিকশায় প্যাডেল মারতে মারতে খানাখন্দে চাকা আটকে গেলেও যাত্রীকে নামতে দিতে নারাজ। এক হাতেই টেনে তুলে নিচ্ছিলেন রিকশাটি। নিজের সামর্থ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান না কারো কাছে।
হয়তো জীবন-সংগ্রামের কাছে এভাবেই ‘মাথানত না করা মানুষ’ হয়েই বেঁচে থাকতে চান সাজু।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন