“কাস্টমারের কোন খবর নাই” বানিশান্তা যৌনপল্লির নরকযাত্রা
মশিউর রহমান মিঠুঃ বানিশান্তা যৌনপল্লি মংলা সমুদ্র বন্দরের নদীর অপর পাড়ে।বানিশান্তার পুলিশ ফাঁডি থেকে খানিক দূরে বাজারে এসে বিরতি নিয়ে আবার কাঁচা সড়কে হাটা। একটু এগোতেই রাস্তা তীব্র বাঁক নিয়ে চলে গেলে অন্যদিকে। সামনে লেচকা-কাদামাখা চরা জমি। সামনে দোকানঘরের মতন সারবাধা বসতি। রাস্তার মোড়ের মহিলা দোকানী সেদিকে ইংগিত করে বললেন, “ওইটা হলে গিয়ে পাড়া।” কিন্তু যাওয়ার তো কোন রাস্তা নাই-লেচকা-কাঁদা চরার মধ্যে নগন্য আইল পথ ছাড়া।
অতএব আইলপথ ধরে দুপুর রোদে হাটা। চরার মধ্যদিয়ে কয়েকটা খাল আবার নদীর দিকে চলে গেছে। সেখানে নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো,সার্কাসের দক্ষতায় পার হতে হয়। নদীর পাড় ধরে আসার সময় দেখা গেল বেডি-বাধকে রক্ষার জন্য নদী পাড়ে বোল্ডার বিছানো হয়েছে। সে বোল্ডারের ফাঁকে ফাঁকে তীব্র জোয়ারের পানি ঘাঁই মেরে বাঁধের কোমর ভেঙ্গে দিয়ে গেছে। বোল্ডারগুলো অবশ্য তরতাজা হাসি মুখে শুয়ে আছে। ঠারে কি বুঝাতে চাচ্ছে, এভাবে নদী ভাংলে পরে কারো কারো লাভ! সে হল ভদ্র পাড়ার কথা। যৌন পাড়ায় পাকা-রাস্তা কিংবা বোল্ডার প্রতিরক্ষার বালাই নেই। ফলে তাদের কাচা রাস্তার আধেকটা নদী বক্ষে চলে গেছে।
পাড়ায় ঢুকে দেখা গেল রাস্তার পাশে একদল তাস খেলে অলস দুপুর পার করছে। কাস্টমারের কোন ভিড-ভাট্টা নাই। দরিদ্র পাড়ার দরিদ্র যৌনকর্মীরা দুপুরের আমোদে মত্ত!
আমেনা বেগম (৫৫) বানিসান্তা যৌনপল্লিতে আছেন ৩০ বছর। বললেন, “এক সময় বানিসান্তার যৌনপল্লির অবস্থা ছিলো রমরমা। এখন খুব গরীবি হাওলাত। লোকজন এখানে আসতে চায় না। রাস্তাঘাটও নাই। আমার তিন ছেলে-মেয়ে; তাদের নিয়ে বড় কস্টে দিন কাটে।” রহিমা বেগম (৩৫)পাশে বসে ছিলেন; তাঁর ছবি তুলতে গেলে তিনি ছবি তুলতে নিষেধ করলেন।বললেন,“ আমি যে এখানে আছি আমার পরিবারের লোকজন জানেনা। তারা জানে যে, আমি অন্যকোন কাজ করি। ছবি তুলে আমার সমস্যা করবেন না।” ছবি তোলা বাদ দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,কত বছর ধরে এখানে আছেন? বললেন,“১৫ বছর ধরে এখানে আছি। এখন বেলা দুপুর। কাস্টমারের কোন খবর নাই। তাহলে আমরা কিভাবে বাঁচুম! গত বছর পযর্ন্ত বিভিন্ন সংস্থা শীতকালে কম্বল,গরম জামা-কাপড় ও কিছু সাহায্য দিতো। এ বছর কোন সাহায্যই পাই নাই। এখানে রাস্তাঘাট নাই । বানিসান্তা ইউনিয়ন পরিষদের আমরা ভোটার। কিন্তু পরিষদের কাছ থেকে কোন সাহায্য আমরা পাই না। রাস্তাঘাট ও উন্নতি করতে পারে নাই।”
বানিসান্তার যৌনপল্লিতে ৭টি উন্নয়ন সংস্থা কাজ করে। এইচআইভি এইড়স প্রতিরোধসহ স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করে পি,এস,টি,সি। সংস্থাটির কর্মকর্তা মোঃ হাসানুর রহমান এর সাথে; তিনি জানালেন, এখানে গড় পড়তা ১৩০ জন যৗনকর্মী আছে। এদের কেউ চলে যায় আবার নতুন কেউ আসে। এদের মধ্যে এইচআইভি এইড়স নিয়ে তারা কাজ করছেন। তিনি জানালেন,যৌনপল্লিটির যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই খারাপ। বর্ষা কালে নৌকা ট্রলার ছাড়া যাতায়াত করা যায় না। পরিবারগুলো আর্থিকভাবে অসচ্ছল। ।
যৌন পল্লিতে প্রায় ৪০ জন শিশু আছে তাদের পড়ালেখার জন্য ওর্য়াল্ড ভিষণ,জে,জে,এস,ও উলাসী সৃজনী সংঘ যৌথ উদ্যেগে শিশুর জন্য সি,এফ,এস ,সেন্টার এর ব্যবস্থা করেছে । যেখানে গান,নাটক,কবিতা,নাচ,সহ লেখা পড়া করানো হয়। শিশুদের জন্য দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা আছে । এই স্কুর এর দায়িত্বে আছেন সচিন্দ্রনাথ রায় এবং গান শেখানোর দায়িত্বে আছেন অনুপম মন্ডল। সাজানো-গোছানো স্কুল ঘরটি দেখলে বোঝার উপায় নেই যে, এটা যৌনপল্লিতে অবস্থিত। এখানকার শিশুরা যাতে আগামীর নতুন স্বপ্ন নিযে জেগে ওঠতে পারে স্কুলটির মাধ্যমে এ প্রত্যাশায় নরকযাত্রার অবসান হোক।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
চা কন্যা খায়রুন ইতিহাস গড়লেন
চা শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সব মহলেই পরিচিত হবিগঞ্জেরবিস্তারিত পড়ুন
চার্জ গঠন বাতিল চেয়ে রিট করবেন ড. ইউনূস
শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.বিস্তারিত পড়ুন
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন