কিস্তিতে ঘুরে আসুন সুন্দরবন
পর্যটকদের কাছে সুন্দরবনের আকর্ষণ দুর্নিবার। ক্যানেল ক্রুজিং, অ্যাডভেঞ্চার ট্র্যাকিং, বার্ড ওয়াচিং, জাঙ্গল সার্ফিং- একসাথে এতকিছু উপভোগের সুযোগ একমাত্র সুন্দরবনেই পাওয়া যায়। তাই বছরের প্রায় অর্ধেক সময় জুড়ে পর্যটকরা ভীড় করে থাকেন সেখানে, মিশে যান প্রকৃতির এই অনবদ্য সৃষ্টির মাঝে। সুন্দরবনের প্রতিটি মুহূর্ত যেন রহস্য ও রোমাঞ্চভরা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, অ্যাডভেঞ্চার, ভয় ও শিহরণের স্থান এটি। আল্লাহর সৃষ্টির এক অপার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে চাইলে আপনিও পরিবাবের সবাইকে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এই বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি।
সুন্দরবন ভ্রমনের উপযুক্ত সময়ঃ
গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুম বাদে বছরের বাকি সময় সুন্দরবন ভ্রমনের জন্যে উপযুক্ত। সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো, শীতকাল। নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি। কারন, শীতকালে নদী থাকে শান্ত। আর ঢেউহীন শান্ত পানির উপর দিয়ে যখন পর্যটকদের জলযানটি গভীর বনের দিকে ছুটে চলে, তখন চারপাশ জুড়ে থাকে রহস্যময় সুন্দরের হাতছানি। আস্তে আস্তে ঘন থেকে ঘন হতে হতে দু’ধারে ঘিরে থাকা বন ভ্রমনপিপাসু মনকে এসে আচ্ছন্ন করে যায়। মাঝে মাঝে আবছা আধাঁরে ঘেরা রহস্যে মোড়ানো সরু সরু খাল। বনের মাঝে কোথাও কোথাও ট্রলার বাধাঁর জায়গা। নিস্তব্দতার বিস্তার যে এত গভীর, তা এখানে না এলে অনুভব করা যায় না। কখনো কখনো মনে হয়, এই বুঝি জঙ্গলের গভীর থেকে বনদস্যু বেরিয়ে এসে লুটে নিলো সবকিছু ! মজার ব্যপার হলোঃ সুন্দরবনের দস্যুরা স্থানীয় জেলেদের উপর যতটা নির্দয়, ঠিক ততটাই সদয় এ অঞ্চলে ঘুরতে আসা পর্যটকদের ওপরে। আজ পর্যন্ত কোন ট্যুরিস্ট বোট সুন্দরবনের দস্যুদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে এমন শোনা যায়নি, একটিও না।
কী আছে সুন্দরবনে?
সুন্দরবন ভ্রমন যতটা এডভেঞ্চারের ততটাই প্রশান্তিময়। বাংলাদেশের দক্ষিনপ্রান্ত থেকে ভারত পর্যন্ত চলে যাওয়া বিস্তীর্ন এই সুন্দরবনের বেশিরভাগই ম্যানগ্রোভ বন দ্বারাই পরিপূর্ন। পঞ্চাশ প্রজাতির ম্যানগ্রোভের মাঝে সাতাশ প্রজাতির দেখা মেলে সুন্দরবনে। জীববৈচিত্রের অপার সম্ভার এই বনকে ইউনেস্কো ১৯৮৭ সালে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করেছে। অতুলনীয় সৌন্দর্য্যময় ল্যান্ডস্কেপ ছাড়াও এখানে রয়েছে অসংখ্য বন্যপ্রানীর সমাগম। প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক রয়েল বেঙ্গল টাইগার, নানান প্রজাতির হরিণ, কুমির, বানর, সাপ এবং প্রায় দু’আড়াই’শ প্রজাতির পাখি দেখার আশায় সুন্দরবন ভ্রমনে আসেন।
দিবারাত্রি ২৪ ঘন্টায় সুন্দরবন কমপক্ষে ছয়বার তার রূপ বদলায়। সন্ধ্যা, মধ্য রাত্রি, ভোর, সকাল, দুপুর এবং বিকেল : এই সময়গুলোতে সুন্দরবন বিচিত্ররুপে ধরা দেয়। সুন্দরবনের এই বিচিত্র রূপ দেখতে হলে সর্বাগ্রে দেখার মত মানসিকতা থাকতে হবে এবং ধৈর্য্য নিয়ে দেখতে হবে।
সমগ্র সুন্দরবনের প্রায় ৩১ ভাগ এলাকা জুড়ে রয়েছে বিশাল জলভাগ। আর এই জলভাগ অসংখ্য নদ-নদী ও খাল দ্বারা জালের মত বেষ্টিত। তাই বনের আসল নির্জনতা ও বন্যপ্রানীর অবাধ বিচরণের দৃশ্য উপভোগ করতে চাইলে ডিঙি নৌকা বা ট্রলার দিয়ে এই নদী ও খালগুলোতে দীর্ঘ সময় নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হয়। দেখা যায় বনের দুই পাশে বৈচিত্রময় গাছপালার সমারোহ। আবার, সুন্দরবনের স্থলভাগ যেহেতু জোয়ারের পানিতে সবসময় কাদাযুক্ত থাকে সেহেতু সুন্দরবনকে উপভোগ করার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে ক্যানেল ক্রুজিং। সুন্দরবনে নৌকা ভ্রমনের সময় বনের নির্জনতা ও বন্যপ্রানীর অবাধ বিচরণ উপভোগ করার জন্য ইঞ্জিনবিহীন দেশী নৌকা বা স্বল্পমাত্রার শব্দযুক্ত নৌকা ব্যবহার করা উত্তম।
সুন্দরবন ভ্রমণে কিছু জিনিসপত্র সঙ্গে নিলে ভ্রমণটি বেশি উপভোগ্য হয়। দুরবীন, ক্যামেরা, নিজ নিজ ফোন/ক্যামেরার চার্জার, পর্যাপ্ত মেমোরি কার্ড, হাটার সময় শ্বাসমূলের কারনে পায়ে আঘাত যেন না লাগে তাই স্পোর্টস সু, সানব্লক ক্রিম, সানগ্লাস, বড় টুপি, টর্চ, মশা নিরোধক ক্রিম, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ইত্যাদি।
প্রবেশাধিকার সংক্রান্ত তথ্যঃ
সুন্দরবনে প্রবেশাধিকার অবারিত নয়। সংরক্ষিত বনাঞ্চল বলে বনবিভাগের অনুমতি গ্রহণ বাধ্যতামূলক। বিনা অনুমতিতে সুন্দরবনে ঢোকা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সুন্দরবনে ভ্রমণ করতে হলে ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার বাগেরহাট বা ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার খুলনা বরাবরে দরখাস্ত করে অনুমতি নিতে হয় এবং প্রয়োজনীয় ফি প্রদান করতে হয়। এক্ষেত্রে সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য অভিজ্ঞ কোনো ভ্রমণ সংস্থার সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।
আসছে ডিসেম্বরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল সহযোগী ভ্রমন সংগঠন ট্রাভেল২৪বিডি সুন্দরবনে ৩ দিন ২ রাত ভ্রমণের আয়োজন করেছে। ডিসেম্বর ১, ২, ৩ তারিখ এই ৩ দিনে কটকা, কচিখালি, জামতলা বীচ, টাইগার পয়েন্ট, টাইগার টিলা, হাড়বাড়িয়া, করমজল, ডিমের চর ও ঢাংমারি ক্যানেলসহ বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য স্পট ঘুরে দেখা হবে। অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর : এই তিন মাসে তিনটি কিস্তি দিয়ে (প্রতি কিস্তি ২৭৫০ টাকা করে) মোট ৮২০০ টাকা পরিশোধ করে বিলাসবহুল ট্যুরিস্ট শীপে চেপে আপনিও ০৩ দিনের জন্য হারিয়ে যেতে পারেন বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট সুন্দরবনের গহীনে। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন ০১৭৬৪ ১০১ ১০৩ অথবা ০১৫৩৪২৩৭৭৪৫ এই নাম্বারে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন