কুরিয়ারের বিতরণ কর্মী থেকে এখন কোটিপতি!
১২ বছর আগে একটি কুরিয়ার সার্ভিসের বিতরণ কর্মী ছিলেন আম্বুর আইয়াপ্পা। এখন তিনি কোটিপতি। এক-দুই নয়, কয়েক কোটি টাকার মালিক তিনি। কীভাবে হলো, তা পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো—
তামিলনাড়ুর ভেলোর শহরে বেড়ে ওঠা আইয়াপ্পা কুরিয়ার সার্ভিসের বিতরণ কর্মচারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। চাকরি পাওয়ার পর বেঙ্গালুরু শহরে থাকা শুরু করেন। চার বছর পর পান পদোন্নতি। এরপর যোগ্যতা বাড়াতে তিন মাসের জন্য একটি কোর্সে ভর্তি হন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, পড়া শেষ, কিন্তু চলে যায় ওই চাকরি। এমন সময় তিনি জানতে পারেন, অনলাইনে বই বিপণন সংস্থা ফ্লিপকার্ট লোক খুঁজছে। তিনি সেখানে আবেদন করেন। তিনিই এই বিপণন সংস্থার প্রথম চাকরি পাওয়া ব্যক্তি।
আইয়াপ্পা তামিল নাড়ুর ভেলোর জেলার আম্বুর শহরে বেড়ে ওঠেন। গল্পের শুরুটা ২০০৫ সালের এই তামিলনাড়ুতে। সেখানেই জন্ম এবং বেড়ে ওঠা এ গল্পের নায়ক আইয়াপ্পার। এই শহরটি বিরিয়ানি ও চামড়াশিল্পের জন্য বিখ্যাত। এই শহরকে দক্ষিণ ভারতের লেদার সিটি বা চামড়ার শহর বলা হয়।
এরপরই চাকরি সাক্ষাৎকার দিতে আম্বুর আইয়াপ্পা যান ফ্লিপকার্টের কার্যালয়ে। সেই সময় ফ্লিপকার্ট মাত্রই যাত্রা শুরু করেছে। সেখানে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় সংস্থার দুই প্রতিষ্ঠাতা শচীন বানসাল ও বিনি বানসালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারে কীভাবে বিতরণকাজটি দ্রুত এবং সফলভাবে করা হবে, তা তিনি জানান শচীন ও বিনিকে। আর ইংরেজিতে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে মুগ্ধ হয়ে আম্বুর আইয়াপ্পাকে এই সংস্থায় নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি এই সংস্থার প্রথম কর্মী। ফ্লিপকার্ট এই সময় শুধু বই কেনাবেচা করত। এই সময় তার মাসিক বেতন ছিল আট হাজার রুপিরও নিচে। তবে এ সংস্থায় কোনো মানবসম্পদ বিভাগ না থাকায় নিয়োগপত্র পান এক বছর পরে। তিনি ক্রেতাদের সঙ্গে ইংরেজিতে সাবলীলভাবে কথা বলতে পারতেন। আর এতেই খুব অল্প সময়ের মধ্য আইয়াপ্পা নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেন। যোগ দেওয়ার কয়েক মাসেই কাজের ক্ষেত্রে এত দক্ষতা অর্জন করেন যে দেখা যায়, কোনো অর্ডারের ডেলিভারি হয়েছে কি না, কিংবা কোনো একজন গ্রাহকের সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান কী হতে পারে, তা জানার জন্য কম্পিউটারের দিকে তাকানোরও প্রয়োজন পড়ছে না আইয়াপ্পার। সব প্রশ্নের উত্তর এবং যাবতীয় সমস্যার সমাধান যেন তাঁর মাথাতেই রয়েছে।
আর দক্ষ ও নিষ্ঠাবান কর্মীকে ওই সংস্থার পক্ষ থেকে দেওয়া হয় কিছু শেয়ার। দিন দিন সংস্থার ব্যাপ্তি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে শেয়ারের মূল্য। দিনে দিনে পদোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বেতনও বৃদ্ধি হতে থাকে। আর এতে করে কিছু শেয়ারের মালিক হওয়ার কল্যাণে ফুলে ফেঁপে ওঠে আইয়াপ্পার পকেটও। বিয়ের ব্যয় বহনের জন্য ২০০৯-২০১০ সালে কিছু শেয়ার বেঁচে দেন তিনি। এরপরে ২০১৩ সালেও নিজের শেয়ার বেঁচে দেন।
আইয়াপ্পা বর্তমানে ফ্লিপকার্টের গ্রাহক নিয়ন্ত্রণ দপ্তর সহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর বেতন এখন ছয় লাখ রুপি। কোম্পানি তাঁকে গাড়ি দিলেও তিনি নিজের মোটরবাইকে করেই আসেন অফিসে। এখনো চেল্লোরের সেই পুরোনো বাড়িতেই মা, দাদি, স্ত্রীকে নিয়ে থাকছেন আম্বুর আইয়াপ্পা।
আইয়াপ্পা সম্পর্কে বিনি বানসাল ফ্লিপকার্টের ব্লগে লিখেছেন, ‘আইয়াপ্পা জানত যে গ্রাহকদের কাছে কোন বইগুলো বিক্রির জন্য বাকি আছে। যখন কোনো গ্রাহক আমাদের কাছে ফোন করেন, তখন তিনি বুঝতে পারেন যে কীভাবে অর্ডারগুলো সরবরাহ করতে হবে। আমাদের কাছে আসা জি-মেইলে অর্ডারের তথ্য জানানোসহ নানা কাজ সুচারুভাবে করেন আইয়াপ্পা। ’
আইয়াপ্পা বলেন, ফ্লিপকার্টে চাকরি নেওয়া তাঁর জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত। নানা উত্থান-পতনেও আইয়াপ্পা কোম্পানির সঙ্গেই ছিলেন। তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া ও ইকোনমিক টাইমস।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন