কৃষকের ছেলে, কিন্তু চার বছর বয়সেই বিশ্বটা তার হাতের মুঠোয়!
এই একরত্তি বয়সেই ২১০টি দেশের নাম, রাজধানী, জনসংখ্যা তার একেবারে মুখস্থ। প্রত্যেকটা দেশের পতাকা সে দেখামাত্র চিনে নিতে পারে। হরিয়ানার ছয় বছর বয়সী কৌটিল্য পণ্ডিতকে মনে আছে? কিছু কাল আগে এই বিস্ময়বালক নিজের অবিশ্বাস্য স্মৃতিশক্তির সুবাদে সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছিল।
২১৩টি রাষ্ট্রের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান একেবারে ঠোঁটের গোড়ায় ছিল কৌটিল্যের। তার স্মৃতিশক্তির বহর দেখে বিশেষজ্ঞরা কৌটিল্যের নাম দিয়েছিলেন ‘গুগল বয়’। এবার কৌটিল্যের শহর হরিয়ানা থেকে ১৩৫০ কিলোমিটার দূরবর্তী এক শহরে আর এক বিস্ময়বালকের সন্ধান মিলল। স্মৃতিশক্তিতে সে কৌটিল্যের থেকে কোনো অংশে কম যায় না।
এই নতুন ‘গুগল বয়’-এর নাম অভিষেককুমার গুপ্ত। রাঁচি থেকে ৬০ কিমি পূর্বের গ্রাম সারমান্দিতে তার বাবা-মা’র সঙ্গে থাকে অভিষেক। বয়সে সে কৌটিল্যের থেকে একটু ছোটই।অভিষেকের বর্তমান বয়স ৪ বছর ১০ মাস। কিন্তু এই একরত্তি বয়সেই ২১০টি দেশের নাম, রাজধানী, জনসংখ্যা তার একেবারে মুখস্থ। এমন খবর দিয়েছে এবেলা।
প্রত্যেকটা দেশের পতাকা সে দেখামাত্র চিনে নিতে পারে। সেই সঙ্গেই স্কুলের উঁচু ক্লাসে পড়ানো হয় যে পর্যায়সারণী বা পিরিয়ডিক টেবিল, তা-ও আদ্যোপান্ত কণ্ঠস্থ তার। সারা পৃথিবীর যাবতীয় বিতর্কিত রাষ্ট্রনেতার নামও সে গড়গড় করে বলে যেতে পারে। কিন্তু ছেলের এই আশ্চর্য প্রতিভার কথা কীভাবে আবিষ্কার করলেন তার বাবা-মা?
অভিষেকের বাবা কুলদীপ প্রসাদ পেশায় কৃষক। সংসারে আর্থিক টানাটানি রয়েছে যথেষ্ট। তবু কুলদীপ চেয়েছিলেন, ছেলে পড়াশোনা করে বড় মানুষ হোক। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কুলদীপ জানান, অভিষেক যখন আরও ছোট, তখন থেকেই নানা ধরনের ছবিওয়ালা রংচঙে বই কিনে এনে ওর হাতে দিতাম। তাতে ছবির সঙ্গে নানা রকমের তথ্য থাকত।
বিভিন্ন দেশের নাম, পতাকার ছবি— এই সমস্ত লেখা থাকত বইগুলোতে। আমি লক্ষ্য করেছিলাম, ও কোনও বই নিয়ে কিছুক্ষণ একমনে বসে থাকার পরেই মুখস্থ বলার ভঙ্গীতে বইয়ে পড়া সমস্ত তথ্য বলে যেতে পারে। আমরা দেখে তাজ্জব বনে গিয়েছিলাম।
এর পরেই খানিকটা পরীক্ষামূলকভাবে এক প্রতিবেশীর ছেলের স্কুলপাঠ্য বিজ্ঞানের বইটা এনে ছেলের হাতে দেন কুলদীপ। দেখা যায়, আস্ত পর্যায়সারণীটা কয়েক মিনিটের মধ্যেই মুখস্থ করে ফেলেছে অভিষেক। তার বাবা-মায়ের আর বুঝতে বাকি থাকে না যে, তাদের ছেলে আদপে এক ‘বিস্ময়বালক’।
কুলদীপ বলছেন, ‘প্রখর স্মৃতিশক্তির জোরেই কি না জানি না, যেকোনো নতুন বিষয় অভিষেক অত্যন্ত তাড়াতাড়ি শিখে নিতে পারে। সেই কারণে ও পড়তেও শিখেছে অন্যান্য বাচ্চাদের তুলনায় অল্প বয়সে।’ কিন্তু শুধু প্রতিভার জোরে যে পড়াশোনা চলে না, তা কুলদীপ ভালোমতোই জানতেন।
এ কথাও বুঝেছিলেন যে, ভাল কোনও স্কুলে ছেলেকে পড়ানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য তার নেই। উপায়ান্তর না দেখে রাঁচিতে গিয়ে শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে ছেলেকে নিয়ে দেখা করেন তিনি। আধিকারিকরা অভিষেকের প্রতিভা দেখে হতবাক হয়ে যান। শিক্ষার অধিকার আইনের অধীনে সরকারি উদ্যোগে রাঁচির দিল্লি পাবলিক স্কুলের (ডিপিএস) প্রাথমিক বিভাগে ভর্তি করে দেয়া হয় অভিষেককে।
গত বুধবার জীবনে প্রথমবার স্কুলে গিয়েছিল অভিষেক। সরকারি খরচে তার পড়াশোনার বন্দোবস্ত করে দিতে পেরে খুশি শিক্ষা দফতরের আধিকারিকরা। স্টেট ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম কোঅর্ডিনেটার শচীন কুমার এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘অভিষেক অবিশ্বাস্য প্রতিভাধর ছেলে। আমরা চাইনি, ওর প্রতিভা অপচয়িত হোক। ওর মতো আর কোনও শিশু আমরা কখনো দেখিনি।’
সরকারি আধিকারিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতায় চোখে জল এসে যাচ্ছে কুলদীপের। এত দিন তার গ্রামের মানুষজনই কেবল জানতেন তার ছেলের অবিশ্বাস্য প্রতিভার কথা। এখন সরকারি আধিকারিকরাও জেনেছেন তা। এমনকী অভিষেককে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও।
আগে যে কোনও বই দশ-পনেরো মিনিটের মধ্যে পড়ে শেষ করে ফেলে নতুন বইয়ের জন্য বায়না ধরত অভিষেক। কিন্তু অত বই কেনার টাকা কোত্থেকে পাবেন কুলদীপ? এবার আর বই কেনার জন্য ভাবতে হবে না তাকে। খোদ সরকার যে অভিষেকের পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছে। স্বভাবতই খুশি কুলদীপ।
অভিষেক নিজে? কী বলছে একরত্তি বিস্ময়বালকটি? তাকে প্রশ্ন করা হলে সে লাজুক হেসে বলছে, ‘আমার বই পড়তে ভালো লাগে। আলাদা করে কিছু মুখস্ত করি না তো। যা পড়ি, এমনিতেই সমস্তটা মনে থেকে যায় আমার।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন